সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫৮: স্বপন চক্রবর্তী
Home Page »
সাহিত্য »
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫৮: স্বপন চক্রবর্তী
নজরুল-জীবনের শেষ অধ্যায় - অন্তহীন দুঃখ-কষ্টেরই এক আখ্যান-৬
প্রমীলা দেবীর মৃত্যুর পর কবি হলেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ ,একাকী। এরপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কবির জীবনটি কাটলো করুনায়, বদান্যতায়, রাষ্ট্রীয় অনুগ্রহের ভরসায়। একাধিক বার পরিবর্তিত বাসস্থানে আর দেশী বিদেশী চিকিৎসকের ব্যর্থ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে।
১৯৭২ সালের পর কবির জীবনের শেষ চারটি বছর অন্যভাবে লেখা হলো। অনেকেই হয়তো জানেন যে, ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এই কুড়ি বছর ধরে কবি নজরুল ইসলামকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে পাকিস্তানীকরন করার একটা চেষ্টা সব সময় সক্রিয় ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জন্ম লগ্ন থেকেই শুরু হয় নজরুলের পুনর্মূল্যায়ণ । সত্যিকার নজরুল অন্বেষণ। নজরুলকে এক মহান সংস্কৃতির পুরোধা রূপে গ্রহন করার সশ্রদ্ধ এক প্রবণতা। কবি তখন আর মৌলবাদের দাঁড়িপাল্লার জন্য ব্যস্ত হয়ে রইলেন না। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকগণ জীবিত সেই কবিকে একবারে সামনে থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ব্যকুল হয়ে উঠলেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রস্তাব দিলেন যে, ১৯৭২ সালের এ কবির জন্মদিনটি কবিকে সামনে রেখে বাংলাদেশেই উদযাপন করতে চান। পরের বছর কবির উপস্থিতিতে পশ্চিম বঙ্গে পালন করা হোক নজরুলের জন্মজয়ন্তি। বলাবাহুল্য সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে যাবার জন্য ভারত সরকার অনুমতি দিল। ১৯৭২ সালের ২৪শে মে বাংলাদেশের বিমানে কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। স্বাধীন মুক্ত বাংলাদেশের হাজার হাজার নাগরিক প্রাণোচ্ছাসে প্রিয় কবিকে বিমান বন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হলো। যদিও নীরব নির্বীকার নিস্পৃহ কবির কাছে সে সবের কোন বিন্দু মাত্র কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার কিন্তু পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কবি নজরুল ইসলামকে কোলকাতা ফিরিয়ে দিল না। তবে বাংলাদেশে দেশবাসী মানুষদের স্বতঃস্ফুর্ত সম্বর্ধনা ও কবির সচ্ছন্দ বিধানে এবং কবির চিকিৎসায় ভারত সরকার এতোটাই সন্তোষ্ট হয়েছিল যে, কবিকে ফেরৎ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের উপর আর কোন চাপ সৃষ্টি করলো না। (চলবে )
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪১:৩১ ●
৫৩২ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)