নজরুল-জীবনের শেষ অধ্যায় - অন্তহীন দুঃখ-কষ্টেরই এক আখ্যান-৫
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হলো। দেশ ভাগের পর নব গঠিত পশ্চিম বঙ্গ সরকার কবি নজরুল ইসলামের জন্য অর্থ সাহায্য বরাদ্দ করলো। ১৯৫২ সালের ২৫শে জুলাই পশ্চিম বঙ্গের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের পরামর্শে নজরুল ইসলামকে রাঁচিতে পাঠানো হলো।
রাঁচিতে মেন্টাল হাসপাতালের অধ্যক্ষ মেজর ডেভিসের তত্ত্বাবধানে প্রায় চার মাস পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার পরও কবির অবস্থার কোন উন্নতি হলো না। ১৯৫৩ সালের ১৪ই মে সরকারী অর্থ সাহায্যে নির্বীকার নীরব কবিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হলো।
লন্ডনে চিকিৎসকদের একটা মেডিক্যাল বোর্ড নজরুল ইসলামের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছিলেন। প্রায় চার মাস পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বোর্ডের কোন ডাক্তারই কবির রোগ উপসমের কোন পন্থা নির্ণয় করতে পারলেন না। একটি মেডিক্যাল রিপোর্টে তারা বলেছেন-
We are confident that no form of medicine or surgical treatment can restore Mr. Islam’s intellectual power. This we regret to say is permanently lost. There is no likelihood that his creative power will return. Moreover, there is no indication at present for further treatment with penicillin, drug, medication or shock theraphy.
বলাবাহুল্য , কবি কি রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তা নিয়ে কিন্তু ডাক্তারদের মধ্যে মত বিরোধ তৈরী হয়েছিল। কোন কোন চিকিৎসক বললেন, কবি Involutional psychosis রোগে আক্রান্ত। আবার কোন কোন চিকিৎসক রাঁচীর ডাক্তার অধ্যক্ষ মেজর ডেভিসের ডায়াগনোসিসকেই সমর্থন করলেন। এরপর লন্ডন থেকে কবিকে ভিয়েনা নিয়ে যাওয়া হলো। ভিয়েনাতে ৯ই ডিসেম্বর কবির উপর সেরিব্রেয়াল এনজিওগ্রাফি পরীক্ষা করা হলো। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বিখ্যাত স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হানস হাক বললেন, কবি পিকস্ ডিসিস নামে একটি দুরারোগ্য মস্তিষ্ক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কবির ক্ষেত্রে রোগটি এতো পুরনো হয়েছে যে, এই রোগ থেকে কবির সেরে উঠার আর কোন সম্ভাবনা নেই।
১৯৫৩ সালের ১৪ই ডিসেম্বর সোমবার কবিকে নিয়ে সবাই কোলকাতা ফিরে আসলেন। ১৯৬২ সালের ৩০শে জুন প্রমীলা দেবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়ে ছিল ৫৪ বছর। বর্ধমানের চূরুলিয়াতে কবি পত্নিকে সমাহিত করা হয়।
( চলবে )