
বঙ্গ-নিউজ: ঋণের শর্ত হিসেবে ডলারের অভিন্ন বিনিময় হার নির্ধারণ করতে বলেছে আইএমএফ। অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরাও খোলা বাজারে ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক-নির্ধারিত বিনিময় হারের তারতম্য ঘুচাতে বলছেন। এটা করতে গিয়ে জুন মাস নাগাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ডলারের বিনিময় হার আরও চার টাকা বেড়ে ১০৫ টাকা হতে পারে। বাজারে প্রচলিত দরের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিনিময় হারের ব্যবধান কমাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আইএমএফ বরাবরই ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলেছে। গত মাসে অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকেও খোলা বাজারে ডলারের দামের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিনিময় হারের ব্যবধান সর্বোচ্চ দুই শতাংশীয় পয়েন্টে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বাজারে প্রচলিত দরের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিনিময় হারে সামঞ্জস্য আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক মাস ধরে ডলার-টাকা বিনিময় হার বাড়াচ্ছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নির্ধারিত বিনিময় হার ছিল ডলার প্রতি ৯৬ টাকা। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ব্যাংকের কাছে ১০১ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। জুন মাস নাগাদ বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ করে প্রতি ডলার ১০৫ টাকা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী মাসে ডলারের বিনিময় হার আরেক দফা বাড়িয়ে ১০২ টাকা করা হবে। এভাবে কয়েক দফায় জুন নাগাদ মার্কিন মুদ্রাটির বিনিময় হার ১০৫ টাকা ছুঁয়ে যাবে।
বর্তমানে বাজারে ডলারের একাধিক বিনিময় হার প্রচলিত রয়েছে। রপ্তানিকারকদের জন্য ১০৩ টাকা ও রেমিট্যান্স প্রেরকরা ডলার প্রতি ১০৫ টাকা পাচ্ছে। আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রির সময় এই দুটি দরের ওয়েইটেড গড়ের সঙ্গে ১ টাকা যোগ করে হার নির্ধারণ হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আইএমএফের দেওয়া পরামর্শের অন্যতম হলো ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। আমরা যদি জুন নাগাদ লক্ষ্য-নির্ধারিত দরে পৌঁছাতে পারি, তাহলে অভিন্ন বিনিময় হারের খুব কাছাকাছি থাকতে পারব।
বিনিময় হার আরও বাড়তে পারে এমন সম্ভাবনা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ রপ্তানিলব্ধ ডলার দেশে আনতে কালক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ডলারের বিনিময় হার অভিন্ন হলে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স থেকে পাচার দুটোই কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাহবুবুর রহমান বলেন, আনুষ্ঠানিক বিনিময় হার যত দ্রুত বাজারে প্রচলিত দরের কাছাকাছি হয়, ততই মঙ্গল। বর্তমানে একসঙ্গে অনেকগুলো দর প্রচলিত থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সংশয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামীতে বিনিয়ম হার আরও বাড়লে বেশি লাভবান হবেন এমন ধারণা থেকে রপ্তানিকারকরা রপ্তানিলব্ধ ডলার দেশে আনতে সময়ক্ষেপণ করছেন, এমন একটি ধারণা বাজারে প্রচলিত রয়েছে। আমরা যদি অভিন্ন বিনিময় হার করতে পারি তাহলে এমন প্রবণতা কমবে এবং ডলারের অন্তঃপ্রবাহ বাড়বে।
একই অভিমত ব্যক্ত করে পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ বলেন, একাধিক বিনিময় হার রাখা এবং সরকার-নির্ধারিত দুটি হারের মধ্যে ৬ টাকা পর্যন্ত ব্যবধান থাকা কোনো কাজের কথা নয়। বিনিময় হারের মধ্যে পার্থক্য দুই শতাংশীয় পয়েন্টে সীমিত রাখার লক্ষ্যটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ভালো।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন চাহিদা সংকুচিত করে ডলার রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এটা সাময়িকভাবে সঠিক পদক্ষেপ হলেও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে সম্পূরক পদক্ষেপের মাধ্যমে এসব মুদ্রার চাহিদা ও জোগানকে যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে হবে।