সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫২: স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫২: স্বপন চক্রবর্তী
শুক্রবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩


ফাইল ছবি-কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল; বহু বিশ্রুত ও বিস্ময়কর এক প্রতিভা: পর্ব-৭

নজরুলের বাল্য জীবন ও প্রতিভা
বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার জনপ্রিয় কবি নজরুল ইসলাম জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ফকীর আহমেদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন। আট বছর বয়সে কবি পিতৃহীন হলে সংসারে দেখা দিল নিদারুণ দারিদ্র। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য নজরুলের পাঠ্য জীবনে ব্যাঘাত ঘটে । গ্রামের মক্তব হতে তিনি নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষা পাস করেন। চৌদ্দ বছর বয়সে কবি রাণী গঞ্জের সিয়ারসোল উচ্চ ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৪ সালে প্রথম মহাযুদ্ধ আরম্ভ হয়। ১৯১৭ সালে কবি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র , তখন তাঁর বয়স ঊনিশ বছর। তখন তিনি সৈনিক জীবন বরণ করেন। এগার বছর বয়সেই নজরুলের কবিত্ত্বশক্তির স্ফুরণ হয়। যুদ্ধে যোগদান করলেও কাব্য চর্চায় তাঁর বিরতি ছিল না। সে সময় ফার্সী সাহিত্যের সাথে তিনি বিশেষ ভাবে পরিচিত হন।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে একজন পরম শক্তিমান কবি। আধুনিক বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের পর বিদ্রোহী কবি নজরুলের নামই বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য । তাঁর অসাধারণ সৃজনী-প্রতিভা সর্বজন স্বীকৃত। অভাবনীয় তারুণ্যের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেই তিনি সহসা আমাদের মাঝে এসে দাঁড়ালেন। নজরুলের “প্রলয়-উল্লাস ” কবিতায় তিনটি ছত্র এইরূপ-: “ তোরা সব জয়ধ্বনি কর, তোরা সব জয়ধ্বনি কর- ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়” । এ কথাগুলি কবির অতর্কিত আবির্ভাব সম্পর্কে সে দিনের বাঙালী কাব্য পাঠকের প্রাণের বাণী – সত্যিই তিনি অদৃষ্টপূর্ব নতুনের জয়ধ্বজা ওড়ালেন। তাঁর “ বিদ্রোহী” কবিতাটির প্রকাশ বাংলা কাব্য-সাহিত্যের ইতিহাসে একটি স্মরণ যোগ্য ঘটনা।
রবীন্দ্রনাথের “বলাকা”র যুগে “বিদ্রোহী” কবি ও কবি বিদ্রোহী নজরুলের আবির্ভাব। কবিগুরু যখন অমর যৌবনের জয়সংগীত উচ্চারণ করতে ছিলেন, তখন তিনি চিরকালের সবুজকে অবুঝ ও আধমরাদের ঘা দিয়ে বাঁচাবার জন্য শিকল বেদীকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবার জন্য দেশের মানুষকে আহ্বান জানাতে ছিলেন, তখনই নজরুল প্রতিভার উন্মেষ। বিশ্বকবির চির সবুজদের গান এক প্রবল উন্মাদনা-উদ্দীপনায় বাংলার তরুণ প্রাণকে সঞ্জীবিত করে তুলেছিল। তাঁর সে উদাত্ত সংগীত সে দিনের বাইশ বছরের তরুণ নজরুলের অন্তরতর চিত্তকে উন্মাদ করে তুলেছিল। নজরুল অকস্মাৎ একদিন “ঝড়ের মাতন –বিজয় কেতন নেড়ে অট্টহাস্যে আকাশখানি ফেড়ে বাংলা কাব্য সাহিত্যে “বিদ্রোহী”র ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। তাঁর সেই দ্বিধাহীন ,দুর্দম, দুর্বার তারুণ্যের মধ্যে আমরা দেখলাম প্রতিভাদীপ্ত একটা সহজ কবি-মূর্তিকে।
কবির প্রথম যুগের কবিতায় ধ্বনিত হয়ে ওঠে একটা প্রচন্ড বিদ্রোহ ও সুতীব্র উন্মাদনার সুর- “অগ্নিবীণা” বিষের বাঁশী” ভাঙ্গার গান” প্রলয় শিখা” ফণীমনসা” সর্বহারা”সাম্যবাদ” প্রভৃতি কাব্যে অন্যায় অবিচার-অত্যাচার, প্রপীড়িত মানুষের পুঞ্জিভুত মুক হৃদয় –বেদনাকেই তিনি অগ্নিবীণাতে স্বতোৎসারিত ছন্দ-সুরে অনর্গলিত করে ছিলেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা প্রকার অসাম্য-বৈষম্যের এমন প্রবল প্রতিবাদ সে যুগের অন্য কোনো কবির রচনায় ধ্বনিত হয়ে ওঠেনি। ভাব-কল্পনা ও চিন্তার স্বকীয়তা ,বাণী-প্রকাশের বিষ্ময়কর স্বতঃস্ফুর্ততা, নির্বারিত প্রাণশক্তির উচ্ছল উদ্যামতা, সংবেদনশীল হৃদয়ের উদ্বেল আবেগ-উচ্ছাস নজরুলের কাব্যকে একটা অসামান্য বিশিষ্টতা দান করেছে।
সহায়ক গ্রন্থ-
১) কাজী নজরুল ইসলাম- অধ্যাপক লুৎফর রহমান জয় ।
২) ব্যাকরণ ও রচনা -অধ্যাপক হরলার রায়।
( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২০:০০:৫৪ ● ৪৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ