সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪৭: স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪৭: স্বপন চক্রবর্তী
রবিবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩


ফাইল ছবি- কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল; বহু বিশ্রুত ও বিস্ময়কর এক প্রতিভা: পর্ব-২

নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে আপন স্বাতন্ত্রে সমুজ্জ্বল। তিনি “ অগ্নিবীণা” “বিষের বাঁশী “ ”ভাঙ্গার গান” “ ফণিমনসা” ” সর্বহারা ‘” জিঞ্জির” ” সন্ধ্যা” “ প্রলয় শিখা” সাম্যবাদ, ইত্যাদি কাব্যে আবেগস্পন্দিত ভাষায় জাগরণী গান রচনা করেছেন। নজরুল ইসলামের কাব্য রচনার পেছনে ছিল মহৎ উদ্দেশ্য। তিনি নির্জীব জাতির প্রাণে তাঁর কবিতার ভেতর আশা, উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলেন। তিনি পুরাতনকে ভেঙ্গে নতুন করে সাজাতে চেয়েছেন। পথ হারা জাতিকে পথ দেখিয়েছেন। মানবতার গান গেয়েছেন, সাম্যের মন্ত্র উচ্চারণ করেছেন। শুধু বিদেশী ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধেই তাঁর লেখনী সোচ্চার হয়নি। তিনি সব রকম অনাচার ,অসাম্য, অত্যাচারের অবসান কল্পে রুদ্র লেখনী চালনা করেছেন। সংস্কারের দেয়াল ভেঙ্গে তিনি কালের নব সূর্যকে আহ্বান করেছেন। তাঁর কবিতায় সমসাময়িক কালের বিদ্রোহ , বিপ্লব, এবং অত্যাচার নিপীড়ন বিরোধী চেতনা স্থান পেয়েছে।

আপাত দৃষ্টিতে নজরুলের কবিতার ভাব ও প্রকাশে রুদ্র সুরের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। প্রচলিত শাসন, শোষণ ,ধ্যান-ধারণা রীতিনীতি, সংস্কার বিধির বিরূদ্ধে তিনি তাঁর কাব্য অগ্নিঝরা বাণীর মাধ্যমে প্রতিবাদ প্রজ্ঞাপন করেছেন। তিনি জাতীয় ঐতিহ্যকে কাব্যে স্থান দিয়ে ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। তাঁর অন্তরে ছিল মানবতাবোধ। মানুষের কল্যাণে জাতির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে তিনি কবিতা লিখেছেন। তাঁর বিদ্রোহের মূলে ছিল কল্যাণ বোধ। অনাচারী আবহাওয়া তাঁর সহ্য হয়নি। তাই বিদ্রোহের বৈরী হাওয়া বইয়ে দিয়ে উৎপাটিত করতে চেয়েছেন সকল বৈষম্য, নির্যাতন,নিপীড়ন। আসলে তিনি বিদ্রোহী ছিলেন না। তিনি সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলতে চেয়ে ছিলেন। মানবাত্মার মুক্তি কামনা করেছিলেন। সত্য বাণী উচ্চারণ করতে গিয়ে তিনি এক বলিষ্ঠ সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কবি দৃপ্ত কন্ঠে বলেছেন” আমি মানি নাকো কোন আইন। “ কবি সেই আইনের কথা বলেছেন, যে আইন অন্যায়কে ছায়া দেয়, দুর্বলকে নিপীড়ন করে। তিনি সব অনাচার, অত্যাচার থেকে জাতিকে মুক্ত করে সাম্য,স্বাধীনতার ছায়াতলে এক কল্যাণকর জীবন ব্যবস্থা চালুর শপথে ছিলেন দীপ্ত । প্রকৃত পক্ষে তিনি বিদ্রোহী ছিলেন না, তিনি ছিলেন বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী সৈনিক। তাঁকে বিদ্রোহী আখ্যা দিয়ে সমাজ মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কবি নিজেই বলেছেন, তিনি বিদ্রোহী নন, তিনি ধ্বংস করতে আসেননি, তাঁর কবিতায় সৃজনের গান আছে। যে,সমাজ অন্ধ অচল, তাকে নতুন করে গড়ে তোলাই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি অকল্যাণের অন্তিম সমাধি রচনা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। আত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হবার জন্য দেশবাসীর প্রতি প্রত্যয়ী ও নির্ভীক আহ্বান রেখেছেন। জাতীর বন্দীত্ব মোচনের জন্য তাঁর আকুলতা ছিল। কারাগারে আটকে রেখে যে সত্যকে গলাটিপে হত্যা করা যায় না সে কথা তিনি তাঁর কবিতায় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন-
লাথি মার ভাঙরে তালা
যতসব বন্দীশালা
আগুন জ্বালা আগুন জ্বলা।

এ আগুন ধ্বংসের আগুন নয়,আত্মমুক্তির, বন্দীত্ব মোচনের আগুন। তিনি ভালো বেসেছিলেন দেশকে, এ দেশের নির্যাতীত কোটি জনতাকে। তাই সত্য সৈনিকের বেশে তিনি চারণ কবির মত জাগরণী বাণীতে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন,আত্মবলে বলীয়ান হবার প্রেরণা দিয়েছেন। নতুন সমাজ নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন ছির তাঁর দু ‘চোখে। তাই “ যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মানুসের মুখের গ্রাস, তাদের সর্বনাশ “ করতে তিনি চেয়েছেন। তাঁর রক্ত লেখায় তাঁদের সর্বনাশের বাণীই ধ্বনিত হয়েছে। (চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৬:৪৩ ● ৩৬৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ