সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪২:স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪২:স্বপন চক্রবর্তী
সোমবার ● ৩০ জানুয়ারী ২০২৩


ফাইল ছবি-নজরুল-রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলাম-৭

নজরুলের লেখার পরিবর্তন করা নিয়ে অসংখ্য বাদানুবাদ আছে। আছে বিতর্ক। আমার ইতিপূর্বে লেখার কারণেও কেহ কেহ ভিন্ন মত পোষণ করতে পারেন। তবে নজরুল যে তার লিখার পরিবর্তন করা পছন্দ করতেন না ,তা “ সেবক” পত্রিকা অফিসে কাজ করতে না যাওয়া থেকেই স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। অসংখ্য পরিবর্তনের অগণন উদাহরণ আছে। এগুলো নিয়ে বলতে ইচ্ছে নেই। শুধু দু’একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে এ রূপ প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন একটি লেখার কিছু অংশ তুলে ধরছি। সাথে রয়েছে আমি যা মনে করি।

দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার ৩০ শে সেপ্টেম্বর,২০১৫ তারিখে জনৈক জিল্লুর রহমান লিখেছিলেন “ গোরস্থান না মহাশ্মশান “ নামে একটি নিবন্ধ। তিনি শুরুই করেছিলেন এ ভাবে- সম্প্রতি এক টিভি চ্যানেলের সংবাদপত্র পর্যালোচনায় অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে আলোচনা শুরু করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত একজন বুদ্ধিঝীবী পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনা শেষ করেন। এতে মনগড়া অনেক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন যে, কবি নজরুলের চল্ চল্ কবিতায় যেখানে….. সজীব করিব মহাশ্মশান” ছিল তাকে সজীব করিব গোরস্থান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যে, কবি নজরুল ইসলাম যখন কবিতাটি লিখেন, তখন মূল কবিতায় “গোরস্থান” শব্দটিই লিখা ছিল- যা তিনি পরে কেটে পাশে ” মহাশ্মশান’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করেন। .. এ প্রসঙ্গে কবি নজরুল বাস্তব দৃষিটভঙ্গিতে সম্ভবত একাধিক বিষয় বিবেচনা করেছিলেন। কলকাতা তখন সমগ্র বঙ্গদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী তথা কেন্দ্র। সেখানে তথা পশ্চিমবঙ্গে বাঙালী হিন্দুদেরই সংখ্যাধিক্য নজরুলের রচনাবলী প্রাথমিক পাঠক-গ্রাহক তারাই। নজরুলের দ্বিতীয় স্ত্রীও ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
তিনি নজরুলের নোবেল পুরস্কার না পাওয়ার বিষয়ে বলেছেন,- নোবেল পুরস্কার প্রদান তো কোন নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। নজরুলের যে কবি প্রতিভা, তাতে তাকে যথাসময়ে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা যেতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নজরুলের কবি প্রতিভা রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বেশি হলেও তিনি কোনদিনই এ পুরস্কার পেতেন না। কারণ তিনি ছিলেন ব্রিটিশ তথা ইংরেজ বিরোধী।
এ ধরনের লিখার উত্তরে কোন মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ানোর ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু প্রসঙ্গিকতা আমাকে বাধ্য করেছে। নজরুল যদি প্রথমে গোরস্থান লিখেন এবং পরে কেটে লিখেন মহাশ্মশান, তাহলে তো বুঝতেই হবে কোনটা একদম উপযুক্ত শব্দ চয়ণ ছিল। যেটাকে কেটে দিয়েছেন, সেটাকে আবার আমরা পুনরুজ্জীবিত করতে যাব কেন? নজরুলের সমালোচনা তার মৃত্যুর এতো বছর পরও বুঝি তার পিছু ছাড়ছে না। কোলকাতার হিন্দুদেরকে তুষ্ট করতে গিয়ে তার লিখা লিখে থাকলে কোলকাতায় বসে তিনি লিখতেন না “আমি বিদ্রোহী ভৃগু, আমি ভগবান বুকে এঁকেদেই পদচিহ্ন” । তিনি টিকি-দাড়ি নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন না। তিনি লিখতেন না “ মন্দির-মসজিদে আজ নাই মানুষের দাবী, মোল্লা পুরুত লাগিয়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি”। তিনি কীর্তন লিখেছেন, শ্যামা সংগীত লিখেছেন, ভজন লিখেছেন। অপরদিকে কোলকাতায় বসেই বসেই লিখেছেন ইসলামী গজল, হাম নাদ ইত্যাদি। অসংখ্য আরবী ফার্সী শব্দ সংযোজন করে তার কবিতা বা লেখাকে করেছিলেন সমৃদ্ধশালী। এমন শত শত উদাহরণ দেওয়া যায়। তবে দীর্ঘ করার আর ইচ্ছে নেই। আর নোবেল পুরস্কার পাওয়া না পাওয়া তো উক্ত কমিটির বিবেচনার উপর। এ ক্ষেত্রে উক্ত লেখকের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক উল্লেখ করে বক্তব্য শুরু করার হেতু বুঝা গেলো না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত হলে কি বিবেচনা বা বুদ্ধিজ্ঞান লোপ পায় ? রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশের দেওয়া ”নাইট” উপাধী বর্জন করেছিলেন তাদের দ্বারা জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে। তার অসংখ্য লেখা আছে ব্রিটিশ বিরোধী । হয়তো সে গুলোকে এড়িয়ে গেছেন শুধু নিজের ধারণাটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে। তিনি প্রমাণ ব্যতিরেকে লিখেছেন ”সম্ভবত” বলে। নজরুলের লেখা নিয়ে নোবেল পুরস্কার পেলে বাঙ্গালী হিসাবে গর্বিত হতাম। কিন্তু কেন হয়নি, তার দায় কার? রবীন্দ্রনাথ তার সমগ্র লেখাকে তার ইংরেজ বন্ধুর সহায়তায় ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোবেল কমিটি সমীপে উপস্থাপন করে ছিলেন। এ ক্ষেত্রে অন্যতম এক বন্ধু ছিলেন ডব্লিও বি ইয়েটস। নজরুল তা করেন নাই। তখন তো কেহ এগিয়েও আসেনি লেখকদের মতো লোকেরা। এখনও তো সে কাজটি করতে পারেন উক্ত প্রাবন্ধিক। নজরুল নিজে সর্বদাই রবীন্দ্রনাথকে গুরুজী গুরুজী বলে সম্বোধন করতেন, তার সান্নিধ্যে যেতেন। এ সব বিষয়ে পুর্বে আলোচনা করেছি। সাম্প্রদায়িক বলে তকমা দিয়ে যার বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন , সেখানে নিজেই তো সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিয়েছেন। যে ঘরানার পত্রিকাতে লিখাটি দিয়েছেন , সেটি সম্পর্কে সবার ধারণা যে, পত্রিকাটি সাম্প্রদায়িক। উক্ত পত্রিকাতে কি ধরণের লেখা চলে তাও সবার জানা আছে। তার লেখাতেও সেটা স্পষ্ট। নজরুল প্রেমিক উক্ত প্রাবন্ধিকের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে- কেন কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সরকারি কোন প্রজ্ঞাপণ জারির মাধ্যমে আজও জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করা হয় নাই ? ( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৩:১০ ● ৪০৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ