বঙ্গ-নিউজ: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ২৯ জানুয়ারির জনসভাটি রাজশাহীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আসছেন।
তিনি বলেন, এই পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, বিসিক শিল্পনগরী-২, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতেও ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহী মহানগরী, জেলা ও আশপাশের জেলায় যে উন্নয়ন দিয়েছেন, তার জন্য জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজশাহীর কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাসিক মেয়র এসব কথা বলেন। রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনসভায় পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের জনসমাগম হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করার লক্ষ্যে প্রায় এক মাস ধরে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা ও মহানগরের যৌথ সভা, উপ-কমিটি গঠনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ জেলাও আমরা সফর করেছি। রাজশাহী উপজেলা পর্যায়ে আমরা সফর করেছি।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠটি ঐতিহাসিক একটি মাঠ। এখানে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। সেই কারণে মাদ্রাসা মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। মাদ্রাসা মাঠের পাশে যে ঈদগাহ মাঠ রয়েছে, সেটিও আমরা জনসভার মাঠের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিয়েছি। এই দুটি মাঠসহ আশপাশে যত জায়গা আছে, সড়ক আছে, মাদ্রাসা মাঠ থেকে জিরোপয়েন্ট, সিএন্ডবি মোড় থেকে লক্ষ্মীপুর, ঘোষপাড়া মোড়সহ ওই সব এলাকাকে আমরা জনসভা মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেখানে ২২০টি মাইক ও ১২টি এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে যাদের মাঠে জায়গা হবে না, তারা বাইরেও প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পারেন, বক্তব্য শুনতে পারেন।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জনসভাকে কেন্দ্র রাজশাহী বিভাগে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্বীপনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃশ্যমান উন্নয়নগুলো একটার পর একটা উদ্বোধন করছেন। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন, মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন, মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। এ বছর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল উদ্বোধন করবেন। সবকিছু মিলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ মানুষেরা উৎফুল্ল। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা, তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্বীপনা ব্যাপক আমরা লক্ষ্য করছি। নারীদের মধ্যেও আমরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি। জনসভায় বিপুল পরিমাণ নারী ও নতুন ভোটাররা উপস্থিত থাকবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে রাসিক মেয়র বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। জনসভা মাঠ ও মাঠের বাইরে ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবে। জনসভায় আগতদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। খারওয়ার পানির তৃষ্ণা মেটাতে মাঠ ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় দেড় লক্ষাধিক পানির বোতল থাকবে, যাতে কেউ চাওয়া মাত্র দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে ওয়াসার দুটি পানির গাড়িও থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। আমরা চাই, সবত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক। বিএনপি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটাই চাই। তারা গতবার সব দল নিয়ে জোট করেছিল, এবারও জোট করে অংশগ্রহণ করুক। আমরা খেলে জিততে চাই। বিএনপির সঙ্গে খেলেই আমরা জিততে চাই। যেভাবে জিতেছি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ব্যাপার। বিএনপি ২০১৪ সালে যে সহিংসতা করেছিল, এবার সেটির সুযোগ পাবে না। আমরা ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মোকাবিলা করেছি। এবারও অপচেষ্টা চালালে জনগণ তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সরকারের অধীনে হয় না। নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তফসিল ঘোষণার পর সরকারের একজন ওসি, ইউএনও কিংবা দারোগা বদলি করার ক্ষমতাও থাকে না। এসব চাকরি নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়। সরকার শুধুমাত্র রুটিন কাজ করে। পৃথিবীর কোথাও এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই, আছে শুধু পাকিস্তানে। বিএনপি তো পাকিস্তানকে অনুকরণ করে। আমাদের দেশে ভোট হবে সেইভাবে, যেভাবে অস্ট্রেলিয়ায় হয়, ইন্ডিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কন্টিনেন্টাল ইউরোপ, জাপানে হয়। সেখানে যখন ভোট হয়, সরকার রুটিন কাজ করে। তাদের অধীনে নির্বাচন হয় না। আমাদের দেশেও তাই হবে।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই চাই ইভিএম। যে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোট হয়। এতে কারচুপির সুযোগ নেই। কিন্তু ইভিএম কিনতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। অর্থাৎ এক বিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাব। এ টাকায় ইভিএম মেশিন আমদানি করতে হবে। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই সময়ে এত বড় প্রকল্প পাস করে ইভিএম কেনা, অর্থনীতির জন্য সমীচীন নয়। বিশ্বমন্দার মধ্যে মানুষের অন্য কল্যাণগুলো আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে। সে জন্য আমরা ইভিএম চাইলেও বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন যত আসনে ইভিএম করুক, আমরা সেটি মেনে নেব। কারণ, মানুষের কল্যাণই আমাদের কাছে প্রাধান্য পায়।
মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারে পরিালনায় সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, মেরিনা আখতার কবিতা, মাগুরার এমপি সাইফুজ্জামান শিখর, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।