সাজেদা আহমেদ;বিশেষ প্রতিনিধি, জলবায়ূ ও পরিবেশ,বঙ্গ-নিউজ:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার এক বিশাল হাওরে করচের চারা রোপন করে বাগ সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন এক প্রকৃতিমনা বৃক্ষ প্রেমী।খরচ যোগাতে নিজের শখের মোটরসাইকেল বন্ধক দিয়েছেন।
মধ্যনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নর বোয়ালার হাওর বোরো ফসলের অন্যতম ভান্ডার হিসেবে খ্যাত। সেই হাওরের কান্দা(উঁচু পতিত ভূমি)টিতে বৃক্ষ রোপনের ফলে মধ্যনগর ও কলমাকান্দা উপজেলার সংযোগকারী মেঠো রাস্তাটি সেজেছে প্রকৃতির অপরুপ সাজে।জমশেরপুর ও মাইজপাড়া গ্রামের বোরো জমির পাশের বোয়ালার কান্দাটি দেখতে বেশ ধনুকের ন্যায়। করচের চারাগাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে বাগিচাটি। এক প্রকৃতিপ্রেমী কৃষক তার নিজ হাতে লাগানো করচের চারাগুলো প্রকৃতিকে সাজিয়েছে নতুন সাজে। তাই স্থানীয় সাধারণ মানুষ এটিকে নাম দিয়েছেন ‘গোপেশ বাগ’।
বোয়ালার হাওরে করচ গাছের চারা রোপনকারী গোপেশ সরকার(৪৫)জমশেরপুর গ্রামের বৃদ্ধ গগন সরকারের একমাত্র ছেলে । তিনি বঙ্গ-নিউজকে বলেন,’আমার এই উদ্যোগটি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সামান্য প্রয়াস মাত্র। প্রায় তিন হাজার করচের চারাগাছ রোপন করেছি এই কান্দায়।যার মূল্য আড়াই লাখ টাকা। শ্রমিক থেকে শুরু করে রোপন,গোড়ায় পানি দেয়া সহ সবমিলে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আমি নিজস্ব অর্থায়নে এই কাজটি শুরু করলেও এক পর্যায়ে ধারদেনা করেই শেষ করতে হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন,প্রকৃতির প্রতি ভালবাসায় এই বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি। এর ব্যায় মেটানোর জন্য শেষ পর্যন্ত এক প্রতিবেশীর কাছে শখের মোটরসাইকেল ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে বন্ধক রাখতে হয়েছে। এখনো ফিরিয়ে আনতে পারেননি মোটরসাইকেলটি, যার মূল্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এটি উপহার দিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কল্লোল চৌধুরী।তবে মানসিক ভাবে তিনি তৃপ্তি পেয়েছেন তখনি, যখন গাছের পাতা গজিয়ে সতেজ হয়েছে। যখন লোকের মুখে মুখে শোনা যায়”গোপেশ বাগ”তখনই আনন্দে তার বুক ভরে যায়। তার ইচ্ছে, হাওরে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকের পেনশন নামে একটি প্রকল্প শুরু করার।
চারা গাছ গুলো মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে।অসংখ্য পথচারীদের অবসর সময় কাটানো,ছবি তোলা এবং কৃষি মৌসুমে রৌদ্রময় দিনে কিছুটা স্বস্তি পান কৃষকরা।
তিনি আরও বলেন, তার একান্ত ইচ্ছে সকলের সহযোগিতা পেলে সেখানে একটি বৃক্ষ মেলা আয়োজন করবেন।গাছের নকশায় মুজিববর্ষ অঙ্কিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।এজন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক সহযোগিতা।
হাওরে বৃক্ষ রোপনের এ উদ্যোগকে এলাকার সর্বমহলের জনগন স্বাগত জানিয়েছেন।
আমরা হাওরবাসী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রাসেল আহমদ বলেন, ‘একজন প্রকৃতিপ্রেমী ও মেধাবী মানুষ গোপেশ সরকার। তার স্ব-অর্থায়নে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপনের এ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি হাওর জনপদের সকলের জন্য উদাহরন হিসেবে কাজ করবে।’
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, প্রকৃতিমনা মানুষকে আমার নয় সকলের ভাল লাগবে। বাংলাদেশ সরকার বৃক্ষ রোপনের উপর জোর দিয়েছেন খুব বেশী।এই বৃক্ষ মানবকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে সাধুবাদ জানাই ।পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে ঐ স্থানে বৃক্ষের উপর মেলার আয়োজন করার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। এবং তাকে বলবো তিনি করচের চারা উৎপাদন করলে আমরা তার থেকে চারা সংগ্রহ করবো।যেহেতু নতুন উপজেলা পরবর্তীতে আমাদের পক্ষ থেকে তার এধরনের কাজে আমাদের সহযোগিতা থাকবে ইনশাআল্লাহ।