হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ:বেশির ভাগ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি

Home Page » সারাদেশ » হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ:বেশির ভাগ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি
বুধবার ● ১৮ জানুয়ারী ২০২৩


বেশির ভাগ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি

সাজেদা আহমেদ; বিশেষ প্রতিনিধি, জলবায়ূ ও পরিবেশ,বঙ্গ-নিউজ:
নির্ধারিত সময়ের এক মাস পার হলেও সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের বেশির ভাগ প্রকল্পে এখনো মাটি পড়েনি। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পুরো কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত অনুমোদন হওয়া ৫৮০টি প্রকল্পের মধ্যে ৪০৫টিতে এখনো কাজই শুরু হয়নি। যেগুলোতে শুরু হয়েছে, সেগুলোতেও কাজের গতি কম। গত এক মাসে কাজের অগ্রগতি কত শতাংশ, এর কোনো উত্তর নেই বাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন ও তদারককারীদের কাছে।

বাঁধের কাজের ধীরগতিতে চলছে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ‘আমরা হাওরবাসী’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রাসেল আহমদ। বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘নভেম্বর মাসের মধ্যে সব প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের পর ১৫ ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে নীতিমালা তা-ই বলে, কিন্তু এবারও সেটি হয়নি। কাজের চেয়ে প্রকল্প আর ব্যয় বাড়ানোতেই পাউবো’র কর্মকর্তারা বেশি মনোযোগী। বন্যার অজুহাতে এবারও বিভিন্ন স্থানে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিজেদের পিঠ বাঁচাতে প্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে বাদ দেয়া হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত ১২টি উপজেলা থেকে ৯১৩টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটিতে জমা হয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদন হয়েছে ৫৮০টির। বাকি ৩৩৩টি প্রকল্পের এখনো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে কাজ চলছে ১৭৫টিতে।

হাওরে বাঁধ নির্মাণের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি প্রকল্পের কাজ করে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। হাওরপারের প্রকৃত কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি পিআইসি গঠন করা হয়। প্রতিটি পিআইসি একটি প্রকল্পে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।

হাওরে উজানের পাহাড়ি ঢল প্রথমে আঘাত হানে জেলার সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলায়। উত্তরের মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢল এসে প্রথমেই। পড়ে উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে। গত বছরের ২ এপ্রিল প্রথমেই টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটে। অথচ এই উপজেলায় সবচেয়ে কম প্রকল্পে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী শওকত উজ জামান বলেন, অনেক হাওরে এখনো পানি থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না।

মধ্যনগর উপজেলায় এ পর্যন্ত অনুমোদিত ৫ টি প্রকল্পের ৩টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে ১টিতেও কাজ চলমান আছে এমনটি দেখা যায়নি। মধ্যনগর উপজেলার ঘোড়াডোবা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ১ নম্বর প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ। মুঠোফোনে ওই প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি অব্রত চৌধুরী বলেন, বাঁধের আশপাশে কোনো মাটি নেই। মাটি আনতে হয় এক কিলোমিটার দূর থেকে, সেখানেও পানি। তাই একসপ্তাহ পর ছাড়া মাটি আনা সম্ভব নয়।

বাঁধের প্রকল্প নির্ধারণে জরিপ, প্রাক্কলন প্রস্তুতে বিলম্ব হওয়ায় পিআইসি গঠন সময়মতো শেষ করা যায়নি বলে গনমাধ্যমকে জানান মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার গনমাধ্যমকে বলেন, এখনো অনেক হাওরে পানি আছে, এটা একটা সমস্যা। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় বাঁধের ক্ষতি হয়েছে বেশি। যে কারণে প্রকল্প ও ব্যয় দুটোই বেড়েছে। সব প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরুর চেষ্টা চলছে।গত ২৬ দিনে কত শতাংশ কাজ হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই হিসাব আমরা এখনো করিনি। তবে যথাসময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৫:১৯ ● ৩৬২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ