সাজেদা আহমেদ; বিশেষ প্রতিনিধি, জলবায়ূ ও পরিবেশ, বঙ্গ-নিউজ:
সুনামগঞ্জের নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও তাঁর ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের ছবি সাত দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত। আদেশের কপিটি উচ্চ আদালত থেকে আজ রোববার বিকেলে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে।
মধ্যনগরের ইউএনও নাহিদ হাসান খান বলেন, আদেশটি হাতে পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ধর্মপাশার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও অলিদুজ্জামানও আদেশের কপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্মাণাধীন ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে ম্যুরালের নকশা পরিবর্তন করে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ) সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও তাঁর ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের ছবি যুক্ত করা হয়।
এ নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে এক রিট পিটিশন দাখিলের পরে ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছবি অপসারণের নির্দেশ দেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদেশে বলা হয়, মধ্যনগরে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের মূল নকশা অপরিবর্তিত রেখে সেখান থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের ছবি সাত দিনের মধ্যে অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানের পাশাপাশি ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারকে আগামী পনেরো দিনের মধ্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে এর ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হলো।
এলজিইডির ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের প্রস্তাবিত এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের জন্য গত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ থেকে ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোটেশনের মাধ্যমে কাজটি পায় ধর্মপাশার মেসার্স রানা ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তৎকালীন ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফ উল্লাহ খান ৩০ দিনের মধ্যে এই ম্যুরাল নির্মাণকাজ শেষ করার সময় বেঁধে দিয়ে গত বছরের ২৩ জুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেন। ম্যুরালের নকশা অনুযায়ী এক পাশে বঙ্গবন্ধু ও অন্য পাশে শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই সেখানে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও তাঁর ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের ছবি যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে মেসার্স রানা ট্রেডার্সের ঠিকাদার মো. ইজাজুর রহমান বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। আদালতের আদেশের কপিটি এখনো পাইনি। যেভাবে কাজটি হওয়ার কথা সেভাবেই করা হচ্ছে।’ তবে এর আগে তিনি বিভিন্ন গনমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমার পরিচিত হওয়ায় তার অনুরোধে আমার লাইসেন্সটি নিয়ে চুন্নু মিয়া নামের একজনকে দিয়ে এ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন।’
এবং চুন্নু মিয়া তখন ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তনের বিষয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশেই ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকনের ছবি লাগানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ নভেম্বর ধর্মপাশা উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার মুনতাসির হাসান ঠিকাদার ইজাজুর রহমান রানাকে ম্যুরালে ডিজাইন বহির্ভূত কাজ করায় তিন দিনের মধ্যে তার কারন দর্শানোর জন্য নোটিশ প্রদান করেন।
এছাড়া গত ৪ নভেম্বর মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে ডিজাইন পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির সাথে সংসদ সদস্য ও তার ভাইয়ের ছবি স্থাপনকে দৃষ্টতা প্রদর্শন আখ্যায়িত করে এর প্রতিবাদ জানায়।
এর দুইদিন পর ৬ নভেম্বর একই দাবীতে মধ্যনগর উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পরিতোষ সরকার বঙ্গ-নিউজকে জানান, ‘উচ্চ আদালতের এই আদেশে মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ সর্বস্তরের জনসাধারন খুশী। এই আদেশ দ্রুত কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আমরা আহবান জানাই। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কোনো স্থায়ী স্থাপত্যকর্মে ভবিষ্যতে যাতে আর কারো ছবি যুক্ত করার দৃষ্টতা কেউ দেখাতে না পারে, তার জন্য আইন প্রনয়নের দাবী জানাই।’