সাজেদা আহমেদ; বিশেষ প্রতিনিধি, জলবায়ূ ও পরিবেশ, বঙ্গ-নিউজ:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন ও তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন দু’টির পাউবো’র প্রকল্প তালিকা থেকে বাদপড়া ‘গোরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপ-প্রকল্প’ এর প্রয়োজনীয়তা যাচাই ও সরেজমিনে শনিবার দুপুরে পরিদর্শন করেন জেলার জেলা প্রশাসক এবং কাবিটা স্কীম প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কমিটির জেলা সভাপতি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ,চামারদানী ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর খসরু, জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা,জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, পাউবো’র বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
উপস্থিত সকলের জ্ঞাতার্থে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, গোরমা বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পটির আওতায় প্রায় চারশো হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে।
জেলা প্রশাসক উপস্থিত কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাদপরা এই প্রকল্পটির একটি ক্লোজার সহ ক্ষতিগ্রস্থ অংশের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উপস্থিত কৃষকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, কোনো পরিস্থিতিতেই টাঙ্গুয়ার হাওরের অভ্যন্তরে নজরখালী বা অন্যকোনো বাঁধ নির্মাণ করা হবেনা।
জানাযায়, গতবছর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের দাবির মুখে টাঙ্গুয়া হাওরের ৩টি বাঁধ মেরামতের জন্য ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে পাটলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নজরখালি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে কৃষকদের চোখের সামনেই তাদের সোনার ফসল পানিতে ডুবে গিয়েছিল।
টাঙ্গুয়া হাওরের ২৪ হাজার ৭০৩ একর জলাভূমি থাকলেও হাওরের কান্দাগুলোতে প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে টাঙ্গুয়া পাড়ের জয়পুর, গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, রংচি, রুপনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা বোর চাষাবাদ করে থাকেন(সূত্র- দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর; ২ এপ্রিল,২০২২)।
এদিকে মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ও উত্তর ইউনিয়ন এবং তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ও উত্তর ইউনিয়ন মোট চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ফসল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ টাঙ্গুয়ার হাওরের অভ্যন্তরে অবস্থিত নজরখালীতে বাঁধ নির্মাণ হবেনা, শুনে মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছেন এসব গ্রামের কৃষকরা।
রংচী গ্রামের কৃষক রইচ মিয়া বলেন,’টাঙ্গুয়ার পেটে আমারার ক্ষেত। নজরখালী বাঁধ না দিলে আমরার বাঁচনের পথ নাই। আমরা গাঁও ছাইরা যাওনগা লাগবো।’
একই গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা কলেজে স্নাতক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বাবু বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের অভ্যন্তরেই আমাদের সব কৃষি জমি।প্রতি বছর এই ফসল রক্ষায় পানির সাথে যুদ্ধ করতে হয়।যদি টাঙ্গুয়ার ভিতরে নজরখালী বাঁধ না দেয়া হয়,আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পরবে। বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে বসতি অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে।’
শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ জানান, ‘আমরা এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করবো।’
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন,’ আমি কৃষকের পক্ষে আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার সর্ব্বোচ্চ চেষ্ঠা করেছি। আশাকরছি কর্তৃপক্ষ আমাদের চাওয়াটুকু বিবেচনায় নেবেন।’
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও রংচী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম এ প্রতিবেদককে জানান, ‘নজরখালী বাঁধ না দিলে দুই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল হুমকিতে পরবে। গতবারের মতো এবছরেও ফসলহানি হলে আমাদের বাঁচার উপায় থাকবে না। আশাকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি দেখে অসহায় কৃষককুলের প্রতি সদয় হবেন