সাজেদা আহমেদ,বিশেষ প্রতিনিধি, জলবায়ূ ও পরিবেশ: বঙ্গ-নিউজ :সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে হিমেল হাওয়া, প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশা অব্যাহত রয়েছে। তবে আগের চেয়ে কুয়াশা যেমন বেড়েছে তেমনি শীতের তীব্রতা বেড়েছে ।
উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের বুড়িপত্তন গ্রামের প্রতিবন্ধী সন্তানের জননী মোস্তরা বেগম বলেন , তিন দিন ধইরা হঠাৎ কইরা এমন শীত হরছে, যে ঘর থাইকা বাইর অওন যাইতাছেনা।প্রতিবন্ধী তিন সন্তান লইয়া ঠাণ্ডার মধ্যে লাকরি খের জ্বালাইয়া রাত যাপন করি।খাইয়া না খাইয়া কোনোমতে চলতাছি।অহন সরকারি কোনো শীতের কম্বল হাইছিনা।
ওই ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন,শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নানা রোগ বালাই। জ্বর-সর্দি ও কাশিসহ নানা ধরনের অসুখ হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখও বেড়েছে। এর উপর দিনের বেলা হালকা গরম লাগলেও বিকালের পর থেকে শীতের মাত্রা বাড়তে থাকে।ঠাণ্ডার কারনে হাওরে
বোরো ফসলের চারা রোপন করা যাচ্ছে না।প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারনে নিম্ন আয়ের মানুষেরা কাজে বের হতে পারছে না।যার ফলে অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে নিম্ন আয়ের মানুষের যাপিত জীবন।
এদিকে, শীতের তীব্রতায় জনজীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র শীতে বোরো বীজতলার ও রবিশস্য ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কীটনাশক স্প্রে করেও সুফল মিলছে না বলছেন কৃষকরা। অব্যাহত ঘন কুয়াশা ও রোদ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধানের চারা, ঝরে পড়ছে সরিষার ফুল। তীব্র ঠাণ্ডায় কৃষক জমিতে কাজ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ ধান গবেষণাইনস্টিটিউট এর প্রচারিত বিশেষ কৃষি আবহাওয়া বুলেটিনে বলা হয়েছে আগামী ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত বাংলাদেশের আকাশ তীব্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।বুলেটিনে শীতের প্রকোপে বোরো ফসলের সুরক্ষায় ৪ থেকে ১০ জানয়ারী পর্যন্ত চারটি কৃষি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
১.কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে।
২. স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা সারাদিন রাত ঢেকে রাখতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, পলিথিনের সাথে চারার পাতা যেন স্পর্শ না করে।
৩. প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম থিওভিট অথবা কমুলাস ভাল ভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করা যেতে পারে।
৪.এ সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিলে, বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিলে, প্রতিদিন সকালে চারার উপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিলে চারা ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায় এবং স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে।
মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকমল হোসেন বলেন, ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে আমরা কৃষকদের সহযোগীতা মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি।আশাকরি সম্ভাব্য বড় আকারের ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা হবে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন,নিম্ন আয়ের শীতার্ত মানুষের জন্য মধ্যনগর উপজেলার প্রতি ইউনিয়নের জন্য ২৫০ টি কম্বল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে শনাক্তকরার পর কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।