বঙ্গনিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, দেশের বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজনীয় সবকিছুই করেছি-যাতে করে আইনের শাসন ও জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।’ সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আজ সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (সংসদ সদস্য) জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইন সংশোধন করেন এবং বিচারকরা ওই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আইনের আওতায় যেসব মামলা রয়েছে- তা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। যদি সন্ত্রাসবাদী-বিরোধী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তবে যারা সন্ত্রাসবাদে জাড়িয়ে গেছে- তারা আর এই অপরাধে নিজেদের জড়াবে না। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাথে সাথে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ধরনও বদলে গেছে, এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ করা হয়। সাইবার অপরাধ ঠেকাতে আমরা একটি আইন প্রণয়ন করেছি। এই আইনটি নিয়ে নানা লোকে নানা কথা বলে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- যেভাবে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে, তাতে এটাকে ঠেকাতে এই আইনটি জরুরি।’
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ঠেকাতে দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা চালাতে প্রধানমন্ত্রী অভিভাবক, শিক্ষক ও আলেমসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কোন বাচ্চা যেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে- সেজন্য আমাদের বিশেষ মনযোগ দিতে হবে।’ ঝালকাঠি ও গাজীপুর আদালতে জঙ্গি হামলার উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিচারকগণ রায় প্রদান করে যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেজন্য তাঁর সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্বাচন মামলার দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে সারা দেশে বর্তমানে ১০১টি ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে এবং সাতটি ট্রাইব্যুনাল মানব পাচার সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো পরিচালনা করছে। যদি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তবে এ ধরনের অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।’ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে মোট ১২২৭ জন বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরও ২০০ বিচারক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি আমলের একটি আইনকে বাতিল করেন, যার ফলে বিচার ব্যবস্থায় নারীদের নিয়োগের পথ সুগম হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে তারা কী পেয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর কী পেয়েছেন, তা ভেবে দেখতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা বিচারব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দেখতে পাবেন। সরকার দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যহত রাখে সরকার। তাঁর সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পদক্ষেপ গ্রহণকালে রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন বিদেশি ফোন কল পাই। নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার রায় প্রদানের জন্য বিচারক গোলাম রসুলের প্রতি ধন্যবাদ জানেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোট (১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর) বিজয় দিবসে হরতাল ডেকেছিল, যাতে বিচারক রায় প্রদান করতে আদালতে আসতে না পারেন। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশী মিশনে নিয়োগ প্রদান এবং রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার বন্ধ করতে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে জেল থেকে ছেড়ে দেন। বঙ্গবন্ধু এদের বিচার শুরু করেছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন প্রদানের উদ্দেশে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের লক্ষ্য পুনর্ব্যাক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার বক্তব্য দেন। বিজেএসএ সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিজেএসএ’র ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিল নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।