রিপোর্টার:: গ্রামবাংলার জনপ্রিয় খেলার মাধ্যমে তারুণ্যকে মাদক থেকে দূরে রাখতে সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে আগামীকাল শনিবার দুপুর থেকে দুদিনব্যাপী হাওর-ভাটির জনপ্রিয় কুস্তিখেলার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ‘কুস্তি প্রতিযোগিতা-২০২২’ উদ্বোধন করবেন। হাওর-ভাটির ৫টি উপজেলার জনপ্রিয় এই কুস্তিখেলাকে ঘিরে সুনামগঞ্জে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সুনামগঞ্জ জেলা ক্রিড়া সংস্থার সূত্রে জানা গেছে কুস্তি খেলা সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় আঞ্চলিক একটি খেলা। বর্ষা মওসুম থেকে হেমন্ত পর্যন্ত এই খেলা বিভিন্ন গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কোন সাংগঠনিক তৎপরতা ছাড়াই আমন্ত্রিত ও স্বাগতিক গ্রাম মিলে নির্ধারিত দিনে গ্রামের তরুণদের নিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। তাই অতীতে কোন সংগঠনের উপর নির্ভর না করেই জনপ্রিয় এই খেলাটি এগিয়ে চলছে সম্প্রীতির মাধ্যমে। এই খেলাকে দাওয়াতি ও ভাইয়াপি কুস্তিখেলা (খেইড়) হিসেবে ডাকা হয়। তিনটি পর্বে খেলা পরিচালিত হয়। প্রাথমিক পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব (ছানি দাগা) এবং চূড়ান্ত পর্ব (দাগা) খেলা হয়। দাগার খেলার উপরই জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়। খেলোয়াড়দের ডাকা হয় ‘মাল’। যারা খেলা পরিচালনা করেন তাদেরকে ‘আমিন’ বলা হয়। খেলায় যেসব কৌশলে এক কুস্তিগীর আরেক কুস্তিগীরকে পরাজিত করেন সেসব কৌশলকে ‘প্যাছ’ বলা হয়। বাইমা, আউকরা, গাড়িমোছকা, বাল্লা, বস্তাটানসহ নানা নামে প্যাছগুলো পরাজিত। শত বছর ধরে চলা ঐতিহ্যবাহী এই খেলা মাঝখানে বন্ধ থাকায় এখন আবারও নতুন রূপে ফিরেছে বলে সূত্র জানায়। চলতি বছর জেলার সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রামে খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি মাঠে হাজার হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করেছেন। জনপ্রিয় ও আঞ্চলিক এই খেলাটিকে আরো বড়ো পরিসরে নিয়ে আসতে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রিড়া সংস্থা প্রথম বারের মতো ৩০ টাকা টিকেটে সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে কুস্তিখেলার আয়োজন করেছে। কুস্তি খেলা উপলক্ষে কুস্তি অনুরাগীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ৫টি উপজেলার ৫০ জন শ্রেষ্ট খেলোয়াড়রা এতে অংশ নিবেন। টিকেটের টাকা কুস্তিগীর ও তাদের টিমের জন্য ব্যয় করা হবে। জেলা ক্রিড়া সংস্থার কুস্তি আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও উৎসবমুখর খেলা হচ্ছে কুস্তি। জনপ্রিয় এই খেলায় তরুণদের উৎসাহিত করতে এবং বড়ো পরিসরে খেলাটি নিয়ে আসতে আমরা স্টেডিয়ামে টোকেনমূল্য দিয়ে উৎসবের আয়োজন করেছি। হাজার হাজার দর্শক এতে সাড়া দিয়েছেন। খেলার মাধ্যমে আমরা সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে মাদকসহ সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে চাই। তিনি বলেন, আগামীতে জেলা ক্রিড়া সংস্থা এমন আরো সফল আয়োজন করবে। খেলা গুলো নির্বিগ্নে সম্পন্ন করতে এবং কুস্তি অনুরাগী প্রবীণদের পরামর্শে সাংগঠনিক রূপ দিতে আগামীতে কাজ করবে জেলা ক্রিড়া সংস্থা। আয়োজক কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন বলেন, কুস্তি উৎসবকে জাতীয় পর্যায়ে এবং আরো বড়ো পরিসরে নিয়ে যেতে আমরা স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বড়ো উৎসবের আয়োজন করেছি। মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয় আমাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। তারুণ্যকে মাদক থেকে ফেরাতে এবং ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে এই উদ্যোগ। ##