বঙ্গ-নিউজ :কাতার থেকে যারা মুখ ফিরিয়েছেন তারা মত বদলাবেন। ২০২২ বিশ্বকাপ উদ্বোধনী দেখে এর ভিন্ন কিছু ভাবার সুযোগ নেই। অভিনব ও নতুনত্বে ভরপুর মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান উপহার দিয়ে সত্যি মন জিতেছে কাতার। তাই এতদিনের সব সমালোচনা ও ঠাট্টা দূর করে বাহবা পেল এই আয়োজন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী হলো ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর মতোই। তাতে ছিল আরব দেশটির নিজস্ব রক্ষণশীল ঐতিহ্য। ছিল পাশ্চাত্য সুরের ঝঙ্কারও। ফিরিয়ে আনা হয় অতীতের সব বিশ্বকাপের মাসকট। সুর বেজে ওঠে আগের বিশ্বকাপ থিম সং-এর। সবশেষে বেদুইন তাঁবুর ছাঁচে তৈরি ৬০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের ছাদের চারপাশে জ্বলে ওঠে আগুনসদৃশ আতশবাজি। মরুর বুকে সত্যিকার তাঁবুর অস্তিত্বও মেলে তাতে। সবমিলিয়ে ৪০ মিনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপ আয়োজনের সামর্থ্যরে জানান দিয়ে বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কাতার।
অথচ এই অনুষ্ঠান এবং তারও আগে এই বিশ্বকাপে জল ঢেলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। দেশটিতে বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণার পর থেকেই এর বিপক্ষে জার্মানি, নরওয়ে, বেলজিয়ামের মতো দেশের ফুটবলার, কোচ ও বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে কাতারের ওপর সমকামীদের নির্যাতন, শ্রমিক আইন লঙ্ঘন ও মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে বারবার। সেসব হয়তো সত্য তবে এর মধ্যেও এগিয়েছে কাতার। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ এসেছে দুয়ারে। আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাধা পড়েছে সেসব সমালোচনার ঢেউয়ে। একদিন আগেই ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ানি ইনফান্তিনো বলেছেন, সমালোচনা নয় ফুটবলে নজর দিন। সাবেক ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটারের বাছাই করে দেওয়া আয়োজকদের ওপর আসা চাপ সামলাতে হয়েছে তাকেও। অবশেষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাঁফ ছেড়ে বাঁচা তার। কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচের আগে তাই স্বস্তির সঙ্গেই বিশ্বকে কাতার বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ইনফান্তিনো।
কাতারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ নতুনত্বের ছোঁয়া ছিল। আরব দেশের আয়োজন বলে এই প্রথম কোনো ফুটবল বিশ্বকাপ উদ্বোধনীতে উচ্চারিত হলো কুরআনের আয়াত। তার মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের এক হওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এর শুরুটা হয় ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনে। চারটি নীল তিমি চারদিক থেকে ভেসে আসে আল বায়াত স্টেডিয়াম মানে তাঁবুর দিকে। সব বর্ণ, গোত্রের মানুষ সেদিকে লক্ষ করে খুঁজে পায় ওই তাঁবু। মরুভূমিতে এই বেদুইন তাঁবুর এমনই মাহাত্ম্য যে তাতে সবার জায়গা হয়, সবাই এক হয়। অস্কারজয়ী খ্যাতিমান হলিউড তারকা মরগান ফ্রি ম্যান এবং বিশ্বকে একজন কাতারি শারীরিক প্রতিবন্ধী কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়ে তা বুঝিয়ে দেন।
এরপরই শুরু মূল শো। কাতারের ঐতিহ্যবাহী খোলা তরবারি হাতে বেদুইন নৃত্য ও ঢোলের তালে মুগ্ধ করেন শিল্পীরা। তাদের পর আগের বিশ্বকাপগুলোর মাসকট আসে মাঠে। সেই সঙ্গে আগের থিম সংগুলো কোলাজ করে ফিরিয়ে নেওয়া হয় ওই বিশ্বকাপগুলোতে। এই কোলাজ গানের মধ্য দিয়ে কাতারে আসতে অস্বীকৃতি জানালেও ছিলেন শাকিরা। জনপ্রিয় পপ শিল্পী দুয়া লিপা কাতার থেকে মুখ ফিরিয়েই নিয়েছেন। এছাড়া আসেননি রড স্টুয়ার্টও। তাই ইতিহাসে প্রথমবার এশিয়ান কোনো জনপ্রিয় শিল্পী বিশ্বকাপ উদ্বোধনী মাতালেন। কোরিয়ান ব্যান্ড দলের লিড ভোকাল জং কুকের সঙ্গে গান গেয়েছেন কাতারের শীর্ষ শিল্পী ফাহাদ আল কুবাইসি। তাদের পারফরমের পর কাতার প্রেসিডেন্ট হামাদ বিন আল থানির আহ্বানে উদ্বোধন হয় বিশ্বকাপের।
নাচ-গানের এই চাকচিক্যে কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সফল বলা যাবে না। এখনো পুরো আসরটাই বাকি। আর সেটাই তো ফুটবলের মূল। তবে যাই হোক উদ্বোধনী দিয়ে কাতার অবশ্যই গা-ঝাড়া দিয়ে সমালাচনার ধুলো ঝেড়েছে।