বঙ্গনিউজঃ দুঃখ পেলেও বলতে নেই। বললেও কাঁদতে নেই। সঙ্গোপনে দুঃখ পুষতে পুষতে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হয়ে যায় একেকজন পুরুষ। একসময় ঠিকই অগ্ন্যুৎপাত হয়। সেই সুতীব্র লাভা অন্যকে হয়তো পোড়ায় কিছুটা। কিন্তু পুরুষটাকে পুড়িয়ে করে নিঃশেষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ বলছে, অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের বড় ঘাতক আত্মহত্যা।
বাবা, ভাই, বন্ধু, প্রেমিক, স্বামী কিংবা পুত্র—সময় ও সম্পর্ক ভেদে তাঁরাই তো সবচেয়ে আপনজন। নির্ভরতার আশ্রয়। একইভাবে আপনিও তাঁদের জন্য তা–ই হয়ে উঠুন। তাঁরা যেন তাঁদের শোক-দুঃখ, হাহাকার-চিৎকার পরম মমতায় জমা রাখতে পারেন আপনার কাছে। গলা ছেড়ে কাঁদতে পারেন আপনাকে জড়িয়ে ধরে।
এ রকম ভাবনা থেকেই প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টমাস ওস্টার ধারণাটির জন্ম দেন এবং সে বছর ফেব্রুয়ারিতে এটি পালিত হয়। এরপর ১৯৯৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের অধ্যাপক জেরোম তিলক সিংয়ের প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির দিন ধার্য হয় ১৯ নভেম্বর। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—হেলপিং মেন অ্যান্ড বয়েজ—পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো।
ইতিহাস
পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে।
২০০২ সালে দিবসটির নামকরণ করা হয় ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ তখনকার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই দিবসটি পালন করা হতো। বলা যায়, নারী দিবসের অনুরূপভাবেই দিবসটি পালিত হয়। ষাটের দশক থেকেই পুরুষ দিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস নিজের লেখায় এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম। পরবর্তী সময়ে ১৯ নভেম্বর পুরো বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এই দিবসের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছেঃ
পুরুষ ও বালকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি;
নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক প্রচারণা;
নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক সাম্যতার প্রচার;
পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা;
পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী;
পুরুষ ও বালকদের অর্জন ও অবদানকে উদ্যাপন;
সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যত্নের ক্ষেত্রে পুরুষ ও বালকদের অবদানকে তুলে ধরা।