বঙ্গনিউজ : ভুতুড়ে পার্টি বাস্তবেই হয়ে উঠল ভয়ংকর। চরম বিপর্যয় ডেকে আনল দক্ষিণ কোরিয়ায়। মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ে সিউলের রাস্তায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৫১ জনের। যার মধ্যে অধিকাংশই টিনএজার এবং তরুণ তরুণী। গুরুতর আহত ৮২। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন একাধিক। হুড়োহুড়ি, ছুটোছুটির মধ্যে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে, দমবন্ধ হয়ে গিয়েছিল বহু মানুষের। নিঃশ্বাস নিতে না পেরেই প্রাণ হারিয়েছেন অধিকাংশ। কিন্তু, আনন্দের একটি পার্টি কী ভাবে বিপর্যয় ডেকে আনল? কেন এত মানুষ পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন?
সোশাল মিডিয়া ভাইরাল হয়েছে সিউলের ইতেয়ন শহরের ওই হ্যালোউইন পার্টির একাধিক ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে ভিড় উপচে পড়েছিল সরু ঘিঞ্জি এলাকায়। হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কিতে একে অপরের ঘাড়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। পায়ের তলায় চাপা পড়ে দম আটকে যায় বহু মানুষের। লাশের তলায় চাপা পড়েও শ্বাস নিতে না পেরে হার্টফেল করে অনেকের। উদ্ধারকারীদের দেখা যায় বুকে চাপ দিয়ে বাঁচিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করতে। পরিজনের নিথর দেহে মুখ দিয়ে শ্বাস দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছিল অনেকেরই। কেউ কেউ আবার একাধিক লাশের তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিলেন। করুন অনুরোধ জানাচ্ছিলেন উদ্ধারের। ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছে বিশ্ব। সকলেরই প্রশ্ন, অত ছোট জায়গায় কী ভাবে এত মানুষকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হল?
করোনা মহামারি পর্ব শেষে কার্যত তিন বছর পর নো মাস্ক হ্যালোউইন পার্টির আয়োজন হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে। বাঁধনভাঙা উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেনি কেউই। ভুতুড়ে পার্টি অংশ নিয়ে দলে দলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ইতেয়ন শহরের আলো ঝলমলে সেই সরু রাস্তায়। আর সেটাই কাল হল। গলির একপ্রান্তে হ্যামিলটন হোটেলে চলছিল হ্যালোউইনের পার্টি। খবর পাওয়া যায়, সেখানেই রয়েছেন জনপ্রিয় এক সেলেব্রিটি। ব্যস, সকলেই ছুটতে শুরু করেন হ্যামিলটন হোটেলের দিকে। ফলে ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান অনেকে। তাদের মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন বাকিরা। এভাবেই ধীরে ধীরে একের পর এক ব্যক্তি পদপিষ্ট হয়ে যান। দম আটকে সেখানেই নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বহু মানুষ। কারও কারও হার্টফেল হয়ে যায়। লাশের তলায় চাপা পড়ে যান আরও বহু।
ভয়াবহ এই বিপর্যয়ে শোকের ছায়া দক্ষিণ কোরিয়ায়। প্রসিডেন্ট উন সুক ইয়ল জানিয়েছেন, রোববার জাতীয় শোক পালিত হবে দেশজুড়ে। তিনি বলেন, ‘আমি মর্মাহত। এমন ঘটনায় আমি ভেঙে পড়েছি। পরিজনহারাদের সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য সবরকমভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করবে দেশ। নিহতদের পরিবার পিছুও আর্থিক সাহায্য করা হবে।’ এদিকে, প্রশাসনের গাফিলতিকেই দুষছেন প্রিয়জনহারারা। তাদের অভিযোগ, করোনা পর্ব শেষে এমন পার্টির আয়োজনে ভিড় হওয়া স্বাভাবিক। সরু গলিতে এক লাখের উপর মানুষ প্রবেশ করে কী ভাবে? কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না? কেন নজরদারি ছিল না এলাকায়? সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।