হাসিই সম্ভবত পৃথিবীতে একমাত্র ছোঁয়াচে কিছু, যার সংক্রমণে অপর ব্যক্তির ‘উপকার’ হয়। হাসি শুধু মনভারের উপশমই ঘটায় না, শরীরের জন্যও উপকারী। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ কথা আজ প্রমাণিত, হাসি আপনার হার্ট ভালো রাখে। মুড বা মনের অবস্থা ঠিকঠাক রাখে। সুতরাং হাসির বিকল্প নেই।
‘বহি সব সুখদুখ/ এ ভুবন হাসিমুখ,/ তোমারি খেলার আনন্দে তার/ ভরিয়া উঠেছে বুক’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ চরণ দুটি বলে দেয় হাসি, হাসিমাখা মুখের জাদুশক্তি। একটু ভেবে দেখবেন, আপনার চারপাশে যত মানুষ আছেন, তাঁদের মধ্যে হাসিমাখা মুখের মানুষটিকে আপনি আলাদা রকম পছন্দ করেন। কোনো কারণে হয়তো আপনার মন খারাপ, তেমন মুহূর্তে ওই মানুষটির দেখা পেলে দেখবেন আপনার মনের আকাশের মেঘ অনেকটাই কেটে গেছে! কেননা, হাসি ছোঁয়াচে! একজনের কাছে থেকে অন্যজনে ছড়ায়।
হাসি নিয়ে এত কথার কারণ, আজ বিশ্ব মৃদু হাসি দিবস,
হাসি নানা রকমের—প্রাণখোলা হাসি, অট্টহাসি, উচ্ছল হাসি, মুচকি বা মৃদু হাসি। এর মধ্যে শেষেরটির কথা ভাবলেই আমাদের মনের চোখে ভেসে ওঠে ‘স্মাইলি’। এই ইমোজি (ছবি) আনন্দের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সারা বিশ্বে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখো কোটি মানুষের আনন্দের ‘প্রতিক্রিয়া’ প্রকাশের উপায় হয়ে উঠেছে এটি। শুধু আনন্দের নয়, সদিচ্ছারও প্রতীক আজ স্মাইলি। কিন্তু কীভাবে?
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের উয়েস্টারের চিত্রশিল্পী হার্ভি রস বল স্মাইলি বা মৃদু হাসির মুখ আঁকেন, ৫৯ বছর আগে, ১৯৬৩ সালে। গোলাকার হলুদ রঙের মুখমণ্ডল, দুটি গোল চোখ ও একটি ধনুকাকৃতির ঠোঁট, যা মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলেছে।
ওয়ার্ল্ডস্মাইলডে ডটকমের তথ্য বলছে, হার্ভি বলের আঁকা মৃদু হাসির ছবিটির দিন দিন বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ছিল। এতে উদ্বেগ বোধ করেন তিনি। তাঁর মনে হলো, ছবিটির অনুকরণের মাধ্যমে যেভাবে নতুন নতুন ছবি তৈরি হচ্ছে, এতে হারিয়ে যাচ্ছে এটির প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য।
তেমন এক পটভূমিতে বিশ্ব মৃদু হাসি দিবসের ধারণাটা সামনে আসে। স্মাইলির স্রষ্টা হার্ভি বল বিশ্বাস করতেন, বছরের একটি দিন মৃদু হাসির জন্য উৎসর্গ করা উচিত। কেননা, হাসি বোঝে না রাজনীতি, মানে না এলাকার গণ্ডি। ফলে প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথম শুক্রবার বিশ্ব মৃদু হাসি দিবস হিসেবে উদ্যাপনের ঘোষণা আসে।
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো উদ্যাপিত হয় বিশ্ব মৃদু হাসি দিবস। এরপর থেকে প্রতিবছর উদ্যাপন করা হচ্ছে।