অধ্যাপক রাইট সাহেব একটি চিঠি লিখে স্বামীজীর হাতে ধরিয়ে দিলেন। রাইট সাহেবের সেই চিঠির সুবাদে শিকাগো ধর্ম মহাসভার রুদ্ধদ্বার আচমকা ,অপ্রত্যাশিত ভাবে স্বামীজীর সামনে খুলে গেলো। ৯ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীজী আবার শিকাগো শহরে উপস্থিত হলেন। কিন্তু এখানে আবার আর এক বিপত্তি ঘটলো। শিকাগো ধর্ম মহাসভার অন্যতম প্রতিনিধি ড. বেরোজির ঠিকানা তিনি হারিয়ে ফেললেন। বার বার চেষ্টা করেও শিকাগো ধর্ম মহাসভার সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধির ঠিকানা তিনি খোঁজে বের করতে ব্যর্থ হলেন। ক্লান্ত, অবসন্ন , ক্ষুধার্ত স্বামীজী সেই রাতে একটি মাল গাড়ির ফাঁকা কামড়ায় আশ্রয় গ্রহণ করলেন। পরের দিন অর্থাৎ ১০ই সেপ্টেম্বর, অবসন্ন ক্ষুধার্ত স্বামীজী আমেরিকার রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লেন ভিক্ষা বৃত্তির জন্য। কিন্তু সেই সময় আমেরিকা বাসীরা ভিক্ষাবৃত্তিকে কখনোই সমর্থন করতো না। ফলে স্বামীজীর ভিক্ষাবৃত্তি সেটিও ব্যর্থ হলো। ক্লান্ত অবসন্ন স্বামীজী প্রবল হতাশা নিযে রাস্তার পাশে বসে পড়লেন। আর তখনই ঘটলো আর এক নাটকীয় চমক। রাস্তার উল্টো দিকে একটি বড় বাড়ির জ্বানালা আচমকা খোলে গেলো। সেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো রাজরানী সদৃশ একজন ভদ্রমহিলা। তার নাম মিসেস জর্জ ডব্লিউ হেল। মিসেস জর্জ ডব্লিউ হেল স্বামীজীর কাছে এসে জানতে চাইলেন- Sir, are you a delegate to the parliament of religions ? – অর্থাৎ আপনি কি শিকাগো শহরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ধর্ম মহাসম্মেলনের প্রতিনিধি? স্বামীজীর উত্তর এবং আনুসঙ্গিক কয়েকটি কথা জানানোর পর তিনি স্বামীজীকে আন্তরিকতার সাথে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। ঐ দিন অর্থাৎ ১০ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যে বেলায় স্বামীজীকে নিয়ে মিসেস ডব্লিউ হেল শিকাগো শহরে ধর্মীয় মহাসম্মেলনের অফিসে হাজির হলেন। আর রাইট সাহেবের সেই ঐতিহাসিক চিঠির সুবাদে শিকাগোর ধর্ম মহাসভার কর্তা ব্যক্তিরা তৎক্ষনাৎ স্বামীজীকে একজন প্রতিনিধি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করলেন। প্রতিনিধির আবেদন পত্রে স্বামীজী তাঁর নিজের পরিচয় হিসাবে লিখলেন, A monk of the oldest order of Sannyasis. অর্থাৎ পৃথিবীর প্রাচীনতম সন্ন্যাসীদের ধারার তিনি একজন সন্ন্যাসী।
পরের দিন অর্থাৎ ১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর শিকাগো শহরে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলো প্রথম আন্তর্জাতিক ধর্ম মহাসম্মেলন। অনেক ঘটনার চড়াই-উৎরাই পার হয়ে অনেক নাটকীয় ঘটনা অতিক্রম করে স্বামীজী সেই প্রথম একজন ভারতীয় সন্ন্যাসী হিসেবে উপস্থিত হলেন আন্তর্জাতিক এক বিশাল মঞ্চে। ১১ই সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের দিনে আর্ট ইন্সটিটিউটের কলম্বাস হলে মোট দশটি ধর্মের প্রতিনিধিরা হাজার হাজার দর্শকের সামনে উপস্থিত হলেন। সেই দশটি ধর্মের উদ্দেশ্যে ১০টি ঘন্টা ধ্বনি দিয়ে অনুষ্ঠানের কাজ শুরু হলো। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করে রাখি যে, সেই দশটি ধর্ম ছিল – ইহুদী ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, তাও ধর্ম, কনফুসিয়াসের ধর্ম, শিন্টো ধর্ম, পারসিক ধর্ম, ক্যাথলিক ধর্ম, এবং গ্রীক চার্চ ও প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্ম।
( চলবে )