বঙ্গনিউজ : নিরুত্তাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ করল পাকিস্তান। ম্যাচে দুর্দান্ত শুরুর পর আর খুঁজেই পাওয়া গেল না বাবর আজমদের। আজ দুবাইতে এশিয়া কাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হেরে গেল পাকিস্তান। দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের ২৩ রানে হারিয়ে লঙ্কানরা মেতে উঠল শিরোপা উৎসবে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুর বিপর্যয় সামলে নির্ধারিত ওভারে ছয় উইকেটে ১৭০ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে ১৪৭ রানে গুটিয়ে গেছে পাকিস্তান। এই জয়ে আট বছর পর টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতল লঙ্কানরা। সবশেষ ২০১৪ সালে ঢাকায় এই পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে উৎসবে মেতে উঠেছিল দ্বীপরাষ্ট্রের দেশটি।
সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে এটা লঙ্কানদের কাছে পাকিস্তানের তৃতীয় হার। ফাইনালের হিসেবে ছাড়াও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে এমনিতেই শ্রীলঙ্কার তুলনায় বেশ পিছিয়ে পাকিস্তান। এই দলটার কাছে টানা পাঁচ ম্যাচ হারলেন বাবররা। সবশেষ সুপার ফোরের আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচও লঙ্কানদের সামনে পাত্তা পাননি তারা।
চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ‘উপহার’ সূচক বাড়তি ১০ রান পেয়েছিল পাকিস্তান। সেই হিসেবে ২০ ওভারে পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬১ রানের। এই রানটাই যেন পাহাড়সম হয়ে উঠল তৃতীয় ওভারে জোড়া ধাক্কার পর। অধিনায়ক বাবর এবং ফখর জামান সাজঘরে ফিরে গেলেন প্রমদ মদুশানের ছোঁবলের শিকার হয়ে।
মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহেমদ উইকেটের রাশ টেনে ধরতে গিয়ে আস্কিং রেটের চাপ উঠিয়ে দিয়েছেন চূড়ায়। ওই চাপেই শেষ হয়ে গেল পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেটে তাদের ৭১ রানের জুটিতে দুজন যেভাবে ব্যাটিং করেছেন সেটা ঠিক বিরক্তর সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে। তাদের প্রস্তুর যুগের ব্যাটিং দেখে কে বলবে পাকিস্তান একটা শিরোপার জন্য লড়ছে!
পাকিস্তানের পাঁড় ভক্তরা অবশ্য অপেক্ষায় ছিলেন রিজওয়ান-ইফতিখার ঝড়ে। আশাটা নিরাশায় পরিণত করে দুজনই ফিরে গেলেন সাজঘরে। রিজওয়ান ৪৯ বলে ৫৫ এবং ইফতিখার ৩১ বলে ৩২ রানে আউট হন। পাকিস্তানের হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে তাতেই। বাবরদের ইনিংসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা হচ্ছে এই দুজন ছাড়া হ্যারিস রাউফ কেবল দুই অংকে পৌঁছেছেন।
রিজওয়ান-ইফতিখার বিচ্ছিন্ন হতেই সাজঘরে আসা-যাওয়ার মিছিল পাকিস্তানের। একটা পর্যায়ে তো অলআউটের আশঙ্কাতেও পড়েছিল তারা। যা সত্যি হয় ম্যাচের শেষ বলে। চামিকা করুনারত্নে দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন রউফ। একটি করে চার-ছক্কায় ১৩ রানে আউট হন তিনি। মধুশান চারটি ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা তিন উইকেট নিয়ে বোলিং ইনিংসে লঙ্কানদের দিয়েছেন নেতৃত্ব।
শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কারও। নবম ওভারে ৫৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। আউট হওয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ বলে ২৮ রান করেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। এরপর দলের হাল ধরেন ভানুকা রাজাপাকশে। ৪৫ বলে ৭১ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে অপরাজিত থাকেন তিনি। হাসারাঙ্গা ২১ বলে ৩৬ এবং করুনারত্নে ১৪ বলে ১৪* রান করেন। পাকিস্তানের হ্যারিস রউফ তিন উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার।
অনেক দিন ধরেই শ্রীলঙ্কাজুড়ে চলছে অস্থিরতা। এ কারণে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে ট্রফি জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। দাসুন সানাকার নেতৃত্বে দলটি সেটার প্রতিফলন দেখালেন। হাসি ফোটালেন দেশবাসীর মুখে। এশিয়া কাপের ষষ্ঠ শিরোপা শ্রীলঙ্কার দুঃসময়ে একপশলা স্বস্তির বাতায়ন হতে পারে।