( একজন নির্বাচন কমিশনার, একজন আমলা ও একজন সাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধা )
যা হোক, আমার অভিনয় যে দর্শক নন্দিত হয়েছিল তা বুঝতে পেরেছিলাম তাদের আগ্রহ দেখে। অনেকে পরে এসে গ্রীণ রুমে দেখা করে প্রশংসা করেছেন, অনেকে পরের শো গুলোতে নবাগত দর্শকদের আগেই পরিচয় করে দিয়েছেন। সহকর্মীদের অকুন্ঠ সমর্থন, দর্শকদের উৎসাহ ইত্যাদি আমাকে খুব খুশী করেছিল। উপরন্তু মাহবুব তালুকদারের প্রশংসা আমাকে ধন্য করেছে। পরে আমি সাভারে চলে আসি। তারপরও আমাকে যেতে হয়েছে শো করে দিবার জন্য, যদিও তখন রিহার্সেল করা সম্ভব ছিল না।
মাহবুব তালুকদার গত ২৪ আগস্ট ২০২২ দুপুর ১ টায় পরলোক গমন করেন। তাঁর অমর স্মৃতি মনে চির জাগরুক থাকবে। অম্লান থাকবে দিনের পর দিন। তাঁর মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত। আজ বেশী করে তাঁর স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে। মাহবুব ভাই পরলোকে পরম শান্তিতে থাকুন, এবং বেহেশত নসীব হোক এই কামনা করি। আমাদের সেই নাট্যবন্ধুদের কে কোথায় আছে জানিনা। এই লেখাটি তাদের নজরে আসবে কিনা তাও জানিনা। নজরে আসলে তারাও স্মৃতি কাতর হবে, তাদেরও হৃদয় ভারাক্রান্ত হবে , তারাও হয়তো মাহবুব তালুকদারের বিদেহী আত্মার পরম শান্তি কামনা করবে।
মাহবুব তালুকদারের জন্ম ১ জানুয়ারী ,১৯৪১ সাল। তিনি ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করেন। ষাটের দশকের প্রারম্ভে দৈনিক ইত্তেফাকের সাথে যুক্ত হয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের তথ্য বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৭২ সাল হতে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গভবনে নিয়োজিত থাকেন। সেই সময়ে তিনি চারজন রাষ্ট্রপতির অধীনে সরাসরি দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। তিনি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারি প্রেস সচিব ছিলেন। এক সময় তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহনের পূর্বে পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ও সংস্থায় নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োজিত হন। নির্বাচন কমিশনার একটি সাংবিধানিক পদ।
সৃজনশীল লেখক মাহবুব তালুকদার বিগত ৬৫ বছর যাবৎ নিরলসভাবে সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। উপন্যাস, গল্পগন্থ কাব্যগ্রন্থ , শিশু সাহিত্য , ছড়ার বই, ও ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা ৪৮ টি। তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার লাভ করেন।
মাহবুব তালুকদারের রচনাবলীঃ-
১ । আমি কখনে সত্য কথা বলি না। ২। আমলার আমলনামা। ৩। বঙ্গভবনে পাঁচ বছর। ৪। স্বপ্ন। ৫। বধ্যভুমি। ৬। হেডস্যার। ৭। সুপ্রভাত আমেরিকা। ৮। মৃত্যু শয্যায় আমি একা। ৯ । গল্প সমগ্র। ১০ । বন্ধ করো না পাখা। ১১ । চাচার পাঁচালী। ১২ । স্বনাক ধন্য। ১৩। প্রেমের চতুর্দশ পদাবলী। ১৪ । চার রাজাকার। ১৫ । পলাশ ও শিমুলের গল্প।
তিনি টেলিভিশনের জন্যও ধারাবাহিক নাটক রচনা করেছিলেন, যা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর বেশ কিছু রচনা খুবই রসাত্মক ও জনপ্রিয়।