শনিবার ● ২০ আগস্ট ২০২২
” দীপান্বিত গুরুকুল”- একটি পুস্তক পর্যালোচনা; পর্ব -১ স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » ” দীপান্বিত গুরুকুল”- একটি পুস্তক পর্যালোচনা; পর্ব -১ স্বপন চক্রবর্তীগুরুকুলের প্রতি শিক্ষাঋণের স্বীকারোক্তি ও অনুকরণীয় শ্রদ্ধা নিবেদন: পর্ব-১
’দীপান্বিত গুরুকুল” বইটির লেখক নিতাই সেন। বইটি পড়ে গুরুকুলের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা নিবেদনের অভিনব কৌশল লক্ষ্য করলাম। আমি প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই লেখক নিতাই সেনের প্রতি। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত কেউ নন। আর আমি বিখ্যাত কোন ব্যক্তিও নই। নেহায়েৎই এক অভাজন আমি। একদিন ফোন করে তিনি আমাকে জানালেন আমার ঠিকানাটি দিতে। সৌজন্যতার সহিত তিনি তাঁর পরিচয়টুকুও দিলেন। তাতেই আমি অভিভূত হলাম। পরে বইটি হাতে আসলো। তাঁরই প্রকাশনার তালিকা দেখে আমি অবাকও হলাম। বেশ কিছু পুস্তক তিনি প্রকাশ করেছেন। কাব্যগ্রন্থও রয়েছে এই তালিকায়। বইটির সাথে পাঠিয়েছেন তাঁরই অনুদিত বাংলা গীতাগ্রন্থ। গীতাগ্রন্থটি এখনও পড়ছি, আর চমৎকৃত হচ্ছি।
সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন আলোকিত ও আলো বিতরণকারী এক মশাল। তিনি কর্মজীবনে একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা ( যুগ্মসচিব )। কথা বলে এবং প্রকাশিত বই ও তার লেখার বৈশিষ্ট দেখে অনুমিত হলো যে, তিনি বিনয়ী , নিরহংকারি ও বহু গুণের অধিকারী একজন মানুষ। এই মানুষটির যে কোন একটি গুণ প্রাপ্তিই একজন মানুষের জন্য অহংকারের বস্তু হতে পারে। আমাকে তাঁর লেখা দুটি বই পাঠানো একটি মহানুভবতা।
“ দীপান্বিত গুরুকুল “ বইটিতে তিনি যাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তাঁদের পান্ডিত্য ও মহত্ব দেশে-বিদেশে শ্রদ্ধার সাথে সমান ভাবে স্বীকৃত। তাঁরা ছিলেন জাতির বিবেক, আলোকিত এক একটি প্রজ্বলিত প্রদীপ। এক সাথে এতো গুলো প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তির স্নেহধন্য আদর্শ ছাত্র ছিলেন লেখক নিতাই সেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ঈর্ষনীয় বিষয়।বলতে সংকুচ নেই যে এইটুকু অধিকার একান্তই কেবল লেখকের নিজস্ব অর্জন।
বইটির উৎসর্গ অংশে লিখেছেন
” আমার অথিক গুরু, ব্যথিক গুরু, গুরু অগণন,
আমার প্রথম যৌবনের স্বপ্নের রাজপুত্র শিক্ষাগুরু ড. মনিরুজ্জামান, শ্রদ্ধাষ্পদেষু-
শিক্ষাগুরু ড. মনিরুজ্জামানকে তিনি কি পরিমাণ শ্রদ্ধা করেছেন। এই শিক্ষকের অপরিশোধ্য ঋণ একজন ছাত্র হিসেবে কৃতজ্ঞচিত্তে তিনি স্মরণ করলেন।
লেখক বইটির প্রচ্ছদে লিখেছেন-
”প্রথম জন্মের পর জীবনের বেড়ে ওঠার দিনগুলি দ্বিতীয় জন্মের পূর্বাভাস দেয়। যার শুরু হয় শিক্ষালয়ে, শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার নিবিড় ছায়ায়, আদরে অথবা মায়ায়। বিশ্বকে জানা কিংবা চেনার দৃষ্টি খুলে যায় । এ এক অন্য রকম জীবন বোধ, উপলবদ্ধির নতুন দিগন্ত। এ ভাবেই দীপান্বিত গুরুকুলের হাত ধরে দ্বিতীয় জন্মের শুরু। শৈশব থেকে পরিণত জীবনের প্রবাহমানতায় অদ্ভূত মোহাচ্ছন্ন তার ইতিহাস। যার পরতে পরতে শুধুই গুরুকুলের প্রচ্ছন্ন আদর ,মমতা। “
কি সহজ সরল স্বীকারোক্তি । কত যোগ্য ছাত্র হলে এমন অকৃপণ গুরুঋণের দায় স্বীকার সম্ভব ! এখন প্রশ্ন যে,গুরুকুল শ্রেষ্ঠ বলে এমন ছাত্র তৈরী হয় নাকি ভালো ছাত্র হলে? প্রশ্ন জাগে “ সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলংকার “ ?
যাদের সান্নিধ্যে এসে লেখক স্নেহধন্য হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন এক এক জন জাতির এক একটি আলোকবর্তিকা, সর্বজন শ্রদ্ধেয়। উল্লেখিত গুরুকুলের যেকোন এক জনের একটি অটোগ্রাফ কিংবা নিদেনপক্ষে এক সাথে একটি ফটোগ্রাফ নিজের কাছে রাখা একটি অহংকার করার মতো বিষয় হতে পারতো। লেখকের শ্রদ্ধেয় গুরুকুল দেশের জন্য ছিল অহংকার। তাই লেখক লিখেছেন-
“ তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ছিলেন দেশের সেরা শিক্ষকবৃন্দ। সৈয়দ আলী আহসান স্যার ছাড়াও ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান, ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল,ড. মনিরুজ্জামান, ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী, ড. মোঃ কাইউম, ড. আব্দুল আউয়াল, ড. মঞ্জুর মোর্শেদ, ড. হায়াৎ মাহমুদ, ড. জাহাঙ্গীর তারেক, ড. রশিদ আল ফারুকী, ড. রাজীব হুমায়ুন, জনাব আবু জাফর, ড. শিপ্রা দস্তিদার, ড. শাহাজান মুনীর ,ড. শামছুল আলম প্রমুখ।”
এই দেশ সেরা শিক্ষকদের স্মরণ ও শিক্ষাঋণের কথা , দায়বদ্ধতার কথা লেখক এই বইটিতে পৃথক পৃথক ভাবে বর্ণনা করেছেন । আর তাতে করে অনেক অজানা গুরুত্বপূর্ণ ও কৌতুহলোদ্দীপক তথ্য জানা যায় বইটির মাধ্যমে।
( চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৬:১১ ● ৭৪৪ বার পঠিত