বঙ্গনিউজ : ক্রেন হেলে চলন্ত গাড়ির ওপর গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহত হবার একদিন পর মঙ্গলবার ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট বিআরটির ওই প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংস্থাটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যারা নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে, তাদের সব ধরণের কমপ্লায়েন্সের প্রমাণপত্র ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিআরটির সব ধরণের নির্মাণকাজ বন্ধ ঘোষণা করেন।
ঘোষণার সময় বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে নির্মাণকাজ বন্ধ করা প্রসঙ্গে বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেছেন, এখন শুধুমাত্র ডিএনসিসি অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকবে।
কিন্তু গাজীপুর ও অন্যান্য এলাকায় যে কাজ চলছে সেটি চলমান থাকবে।
“তবে অবশ্যই পুরোপুরি নিরাপত্তা মেনে সেটি করা হবে,” বলেন তিনি।
এদিকে, মেয়র মি. ইসলাম বলেছেন, নির্মাণকাজ পরিচালনাকারী কোম্পানির (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) কী ধরণের কমপ্লায়েন্সের ব্যবস্থা ছিল, তার প্রমাণ হাজির করতে হবে।
এবং সেটা সন্তোষজনক না হওয়া পর্যন্ত ঢাকায় বিআরটির সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেছেন, “এ প্রকল্পে কাজ পরিচালনায় ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটছে। জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এভাবে উন্নয়ন কাজ চলতে দেওয়া যাবে না।”
মেয়র মি. ইসলাম বলেন, কমপ্লায়েন্স বলতে কেবল রোড সেফটি নয়, বৈদ্যুতিক কাজের নিরাপত্তা এবং নির্মাণকাজের মাধ্যমে হওয়া বায়ুদূষণ ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তারও যথাযথ প্রমাণ ডিএনসিসিকে দেখাতে হবে।
ডিএনসিসির মেয়র বলেছেন, নির্মাণকাজের নিরাপত্তার ব্যাপারটি মোটেই গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
“দেখুন, এই কোম্পানিকে যখন কাজ দেয়া হয়েছে, কোম্পানি কিন্তু সব শর্ত মেনে সাইন করেছে, সাইন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে। এমন না যে সরকার টাকা দেয়নি, সবকিছু দিয়েছে। কিন্তু এটা হচ্ছে, সবচেয়ে বড় কথা খামখেয়ালী। পুরো কাজটাতে খামখেয়ালী করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
এদিকে, বিআরটি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. ইসলাম বলেছেন, এ প্রকল্পে ঠিকাদারি কাজ করছে দুইটি চীনা প্রতিষ্ঠান, এবং তাদের ‘কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থা নিয়ে সরকার সন্তুষ্ট নয়’।
এখন ঢাকায় বিআরটি, মেট্রোরেলসহ যতগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে, সব প্রকল্প পরিচালকদের ১৮ই অগাস্ট নির্মাণকাজে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানানোর জন্য নগর ভবনে সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে।
বাংলাদেশে গতকাল অর্থাৎ ১৫ই অগাস্ট ঢাকার ব্যস্ত একটি রাস্তায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কংক্রিটের বিশাল গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলার সময় চলন্ত গাড়ির ওপর পড়ে ৫ জন নিহত হয়েছেন।
সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে উত্তরা জসীমউদ্দীন রোডের মোড়ে বিপণি-বিতান আড়ংয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর গার্ডারটি সরিয়ে মরদেহগুলো বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।
নিহতদের সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে।
তারা একটি বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে ঢাকার কাওলা থেকে আশুলিয়ার দিকে যাওয়ার পথে গার্ডারটি ধসে পড়ে।
গার্ডারের নীচে পিষ্ট হয়ে যাওয়া গাড়িটি থেকে আহত অবস্থায় নবদম্পতিকে উদ্ধার করা হয়। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও শঙ্কামুক্ত আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন বরের বাবা, কনের মা, খালা ও খালাতো ভাইবোন।
ঢাকায় একটি সমন্বিত গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে টঙ্গি থেকে বিমানবন্দর হয়ে প্রধান সড়কটির ওপর দিয়ে যে বাস র্যাপিড ট্রানজিট তৈরি করা হচ্ছে। জসীমউদ্দীন সড়কে সেই প্রকল্পের একটি নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নীচে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজ চলছে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ত একটি সড়কের ওপর।
যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে
বাস র্যাপিড ট্রানজিটের ফ্লাইওভারের পিলারগুলোর ওপর বিরাট বিরাট কংক্রিটের গার্ডার বসানোর কাজ চলছে গত বেশ কিছুদিন ধরেই। বড় বড় ক্রেন দিয়ে এই গার্ডারগুলো পিলারের ওপর তোলা হয়।
ভবন তৈরির সময় যেরকম ছাদের ভার বহনের জন্য বিম বসাতে হয়, তেমনি ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে পিলারের ওপর বসানো হয় গার্ডার।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, সোমবার ক্রেন দিয়ে গার্ডার তোলার সময় ক্রেনটি হেলে যায়, এরপর গার্ডারটি পড়ে চলন্ত গাড়ির ওপর। এসময় ব্যস্ত রাস্তাটি দিয়ে অনেক গাড়ি চলাচল করছিল।
একটি ছবিতে দেখা যায়, গার্ডার বহনকারী ক্রেনটি একপাশে হেলে পড়েছে এবং গার্ডারটি আছড়ে পড়ে ওই প্রাইভেট কারের ডান পাশের একটি অংশকে সম্পূর্ণ পিষ্ট করে ফেলেছে।
গাড়ির ভেতর থেকে দুজনকে টেনে বের করা গেলেও পাঁচ জন চাপা পড়ে নিহত হয়েছে ঘটনাস্থলেই। এরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনরা।