সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৩৭

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৩৭
রবিবার ● ২৪ জুলাই ২০২২


স্বপন কুমার চক্রবর্তী

বঙ্গ-নিউজ:  রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল সম্পর্ক-২

১৯২২ সালের ১২ আগস্ট নজরুলের ”ধুমকেতু ” পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকাটি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের আশীর্বাণী শীর্ষে ধারণ করে প্রকাশিত হতো। যাতে লিখা থাকতো- “ কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধুম কেতু , আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এ দূর্গ শিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন” ।
নজরুল যখন আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁর ”বসন্ত” গীতিনাট্যটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন ( ২২/০১/১৯২৩ ) এবং নজরুলকে “কবি” হিসাবে উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় উল্লসিত নজরুল জেল খানায় বসে তাঁর অনুপম কবিতা “ আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে “ রচনা করেন। সমকালীন অনেক রবীন্দ্র ভক্ত ও অনুরাগী কবি সাহিত্যিক বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি। এ ব্যপারে কেউ কেউ অভিযোগ করলে রবীন্দ্রনাথ তাদেরকে নজরুলের কাব্য পাঠের পরামর্শ দিয়ে বলেন , “ যুগের মনকে যা প্রতিফলিত করে তা শুধু কাব্য নয়, মহাকাব্য। ও ( নজরুল ) যা লিখেছে তাই কবিতা। তলোয়ারের মত ঝনঝনানি দিয়েই তো কবিতা লিখতে হয়।

ফাইল ছবি-রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলাম
নজরুল তাঁর উৎকৃষ্ট কবিতা সমগ্র ’সঞ্চিতা” রবীন্দ্র নাথকে উৎসর্গ করে ছিলেন। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট, ( ২২ শ্রাবণ ,১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে শোকাহত নজরুল তাৎক্ষণিক রচনা করেন “ রবিহারা” ও সালাম অস্তরবি” এবং “ ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিরে “ শোক সংগীত। রবিহারা কবিতা নজরুল স্বকন্ঠে আবৃত্তি করেন কলকাতা বেতারে, গ্রামোফোন রেকর্ডে । “ ঘুমাইতে দাও “ গানটি কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে স্বকন্ঠে গেয়েছিলেন কাজী নজরুল। সম্মানিত পাঠক, যারা রবিহারা কবিতার আবৃত্তিটি শোনেননি, তাঁদেরকে অনুরোধ করবো নজরুলের স্বকন্ঠের এই আবৃত্তিটুকু একবার শোনবেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুতে কত বেশী আহত হয়েছিলেন কাজী নজরুল, তার কিছুটা আন্দাজ করা যাবে।
১৯২৩ সালের ১৪ এপ্রিল নজরুলকে হুগলী জেলে স্থানান্তর করা হয়। রাজবন্দীদের প্রতি ইংরেজ জেল সুপারের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে ওই দিন থেকেই তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ অনশন ভঙ্গ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে নজরুলকে টেলিগ্রাম করেন- “ Give up hunger strike . Our Literature claims you.” অবশ্য জেল কর্তৃপক্ষের বিরূপ মনোভাবের কারনে নজরুল টেলিগ্রামটি পাননি। জনমতের চাপে ১৯২৩ সালের ২২ মে জেল পরিদর্শক ড, আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দি হুগলী জেল পরিদর্শনের সময় তাঁর আশ্বাসে ও অনুরোধে নজরুল চল্লিশ দিনের অনশন ভঙ্গ করেন। -(বাংলা পিডিয়া, ইসলাম, কাজি নজরুল।)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ গোরা “ উপন্যাসটি ১৮৮০ এর দশকে ব্রিটিশ রাজত্বকালের সময়কার কলকাতার পটভুমিতে লেখা। প্রকাশনার সময়কাল ১৯০৯ । রবীন্দ্রনাথের ১৩ টি উপন্যাসের মধ্যে এটি সবচেয়ে দীর্ঘতম। এটি রাজনীতি এবং ধর্ম নিয়ে দার্শনিক বিতর্কে সমৃদ্ধ একটি উপন্যাস, যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬২৪। এটি নিয়ে পরে ১৯৩৮ সালে সিনেমা তৈরী হয়। সিনেমাটির সংগীত পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সিনেমাটির ছাড়পত্র আটকে যায় গীতিকারের অনাপত্তি পত্র সাথে না থাকার কারণে। কাজী নজরুল তখনই একটি টেক্সি নিয়ে এবং সিনেমার কিছু সরঞ্জাম ( রিল) সাথে নিয়ে উপস্থিত হলেন কবিগুরুর নিকট। ঘটনার বিস্তারিত শোনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “ দেখদেখি কান্ড, আমার গানের ভাব তুমি ছাড়া আর ক’জনই বা এমন ভালো করে বুঝে? “ এই বলে সাথে সাথেই অনাপত্তি পত্রে রবীন্দ্রনাথ স্বাক্ষর করে দিলেন।
( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৫:১৮ ● ৭০৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ