বঙ্গনিউজ : চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জারি করা লকডাউনের কারণে ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আর ভোক্তাদের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তার ফলে চলতি বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দেশটির অর্থনীতি অনেকটাই সংকুচিত হয়েছে।
এপ্রিল থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত তিন মাসে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি তার আগের প্রান্তিকের চাইতে দুই দশমিক ছয় শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ওই সময়ে চীনের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র সাংহাইসহ দেশটির প্রধান শহরগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিক লকডাউনে ছিল। আর তা জারি করা হয়েছিল দেশটির ‘জিরো কোভিড’ নীতির কারণে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় দশমিক চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবে এই সময়ে দেশটির অর্থনীতিতে এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ টমি উ বিবিসিকে বলেছেন, “মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এই দ্বিতীয় কোয়ার্টারের জিডিপির হিসাব ছিল সবচেয়ে খারাপ। লকডাউনের কারণে, বিশেষ করে সাংহাইতে এই কোয়ার্টারের শুরুতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে।”
এই মন্দার শিকার কোম্পানির একটি ব্রিটিশ লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড বারবেরি শুক্রবার জানায় যে চীনে তাদের বিক্রি মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
লকডাউনে ক্রেতারা বাড়িতে থাকতে বাধ্য হওয়ায় বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু জুন মাসে চীনে দোকানপাট খুলে দেয়ায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত মাসের সরকারি পরিসংখ্যানে এ পরিস্থিতির চিত্র দেখা গিয়েছিল, যেখানে দেখা গেছে যে নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার হয়েছে।
“জুন মাসের পরিসংখ্যান বেশি ইতিবাচক ছিল, লকডাউন তুলে নেওয়ার পরে কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। তবে আবাসন খাতের মন্দা প্রবৃদ্ধির হারকে কমিয়ে দিচ্ছে,” মিঃ উ বলেন।
এদিকে, ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ওয়ান্ডার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন বিশ্লেষক জেফ হ্যালি বিবিসিকে বলেছেন যে চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
“জিডিপি প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ ছিল, তবে বেকারত্ব ৩.৫% এ নেমে এসেছে এবং খুচরা বিক্রি বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে, ” তিনি বলেন।
তবে, অনেক বিশ্লেষক চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা করেন না, তার কারণ হচ্ছে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সরকার এখনো কঠোরভাবে জিরো-কোভিড নীতি চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির একসময়ের ক্রমবর্ধমান আবাসন খাতে এখন গভীর মন্দা চলছে এবং সেই সাথে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতিও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
জিডিপির মাধ্যমে কোন অর্থনীতির আকার পরিমাপ করা হয়। এর সম্প্রসারণ বা সংকোচন দিয়ে পরিমাপ করা হয় ওই অর্থনীতি কতটা ভাল বা খারাপভাবে কাজ করছে, এবং অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।
এর মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কখন ব্যবসাকে প্রসারিত করতে আরও কর্মী নিয়োগ করতে হবে বা বিনিয়োগ কম করতে হবে, কিংবা কখন কর্মী সংখ্যা কমাতে হবে।
সরকারও এসব পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কর থেকে ব্যয়সহ সব ধরনের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়।
মুদ্রাস্ফীতির সাথে সুদের হার বাড়াতে বা কমাতে হবে কিনা তা বিবেচনা করার জন্যও এ পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের জন্য একটি মূল পরিমাপক।