বঙ্গ-নিউজ: বিএনপি নেতাদের অফিসের চার দেয়াল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চোখ মেলে বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকানোর পরামর্শ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, মানুষ এবার স্বস্তির মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করার জন্য নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পেরেছে। ইসলামী ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মানুষ ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রেও আমরা যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, সেটি এবার আরো স্পষ্ট হয়েছে।
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুরপাড়স্থ বাসায় সমসাময়িক বিষয়ে ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন তথ্যমন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারের কঠোর অবস্থান ও সিদ্ধান্তের কারণেই সীমান্ত দিয়ে কোনো পশু দেশে ঢুকতে পারেনি। যাতে আমাদের দেশের খামারিরা উপকৃত হয়। এ ক্ষেত্রে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশ আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯২তম। কিন্তু আমরা উৎপাদনের দিক দিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধান উৎপাদনে আমরা পৃথিবীতে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের গরু-ছাগল দিয়েই এবার ঈদুল আজহার চাহিদা পূরণ করা সম্ভবপর হয়েছে। অনেক গরু-ছাগল বিক্রি না হওয়ায় ফেরতও গেছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বেশি জোগান ছিল। এগুলো সরকারের নানামুখী নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, সমগ্র পৃথিবী, অর্থনৈতিকভাবে অনেক সামর্থ্যবান দেশগুলোও সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। প্রধানমন্ত্রী সেভাবেই সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। যারা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, বিদ্যুতের দাবিতে মিছিলকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে, তাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলারই অধিকার থাকে না। আসলে বিএনপির কাছে কোনো ইস্যু নেই তো, তাই কিছু একটা তো বলতে হবে, সে জন্যই কথা বলে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে মহামারি চলছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। আপনারা জানেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও নানা প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র ছিল। সব প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু যেমন নির্মিত হয়েছে, পৃথিবীর এই সংকটের মধ্যেও সব প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতাকে উপড়ে ফেলে দেশ সমৃদ্ধির পথে অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশ পৌঁছবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে সেই প্রার্থনা আমরা করেছি, আজকেও একই প্রত্যাশা করি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে তো ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারেনি। বরং তখন বিদ্যুতের দাবিতে মানুষ বিক্ষোভ করেছে, তখন কানসাটে তাদের ওপর গুলি করে অনেককে হত্যা করেছে। চট্টগ্রামে মোমবাতি নিয়ে মিছিল হয়েছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও হয়েছে। মানুষ হারিকেন নিয়ে মিছিল করেছে। এখন হারিকেন কি এটি বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারবে না। কারণ হারিকেনের ব্যবহার নাই। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো জায়গায় ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর কোনো কোনোটিতেও লোডশেডিং হয়েছে এবং সেখানে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিনটি প্রকল্পে এগারো হাজার কোটির কাছাকাছি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে, এই টাকার সদ্ব্যবহার ও সমন্বিতভাবে কাজ করা তাদের দায়িত্ব। যারা জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আমি তাদের সবসময় তাগাদা দিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, আমি নিজেও চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার যেহেতু জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে গতবারের তুলনায় এবার পানি কম উঠবে। যেহেতু জলাবদ্ধতা প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি মাঝপথে আছে, সে জন্য মানুষ এখনো সুফল পাচ্ছে না। মানুষ যাতে তাড়াতাড়ি সুফলটা পায়, সেই কথাটাই তাদেরকে বলেছি। বৃষ্টি আরো দুই মাস হবে, এই দুই মাস যাতে কাজগুলো বন্ধ রেখে কাজের জন্য যেখানে খাল ভরাট করা হয়েছে, সংকুচিত করা হয়েছে, সেসব জায়গা কেটে দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছি, যাতে আবার বৃষ্টি হলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ থাকে। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলে যাতে কাজ শুরু হয়।