সস্ত্রীক গ্রেপ্তার হলো হেনোলাক্স গ্রুপের নুরুল আমিন

Home Page » জাতীয় » সস্ত্রীক গ্রেপ্তার হলো হেনোলাক্স গ্রুপের নুরুল আমিন
বুধবার ● ৬ জুলাই ২০২২


হেনোলাক্স গ্রুপের এমডি নুরুল আমিন

বঙ্গ-নিউজ: জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে নিজ গায়ে আগুন দিয়ে গাজী আনিস নামক ব্যক্তির নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে আমিন ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি হেনোলাক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খন্দকার আল মঈন জানান, গাজী আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিনকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে সোমবার সকালে তাদের নামে মামলা হয়েছিল।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত সোমবার বিকেলে গাজী আনিস তার নিজ শরীরে আগুন দেন। আগুনে তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

নিহত গাজী আনিস

সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় গাজী আনিসের। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তার বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামে। বাসিন্দা। তিনি কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা। কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গাজী আনিসের কাছ থেকে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন প্রতারণা করে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করেও কোনো প্রতিকার পাননি গাজী আনিস।

কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন আনিস। একই সাথে নিজের ফেসবুক পেজেও দিয়েছিলেন ঘটনার বর্ণনা। সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেই জানা যায় আসল ঘটনা।

গাজী আনিস তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই বোন বন্ধু। আমি মো. আনিসুর রহমান (গাজী আনিস) একজন কবিতা প্রেমিক মানুষ। নিজে হয়তো ভালো কবিতা লিখতে পারি না, কিন্তু আমি কবিতা ভীষণ ভালোবাসি।

আমি একজন ব্যবসায়ী এবং জীবনে প্রচুর রোজগার করেছি। আমার রোজগারের সবচেয়ে বড় অংশ স্থানীয় স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ এবং অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি সেইসাথে নিজেও সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সৎ জীবন যাপন করেছি। আমি তিনটি কন্যা সন্তানের জনক। আমার বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচ,এস,সি পরীক্ষার্থী আগস্ট ২০২২ মেঝ মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এস,এস,সি পরীক্ষার্থী জুন ২০২২ এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

২০১৬ সাথে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং কুষ্টিয়া শহরেই বসবাস করি।

প্রতিমাসেই নিজের প্রয়োজনে ঢাকা এলে তাদের সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভালো রেস্তোরাঁয় আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করতাম। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতেও যেতাম। যেহেতু আমি স্বচ্ছন্দ দিনযাপনে অভ্যস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাভলম্বী তাই নিজস্ব গাড়িতেই সব সময় যাতায়াত করি। আমি মো. নুরুল আমিন এবং ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নিজ খরচায় দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গিয়েছি।

২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একইসাথে অবস্থানকালে ওনারা আমাকে হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করে যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান। আমি প্রথমে অসন্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হই এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করি। পরবর্তীতে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ছাব্বিশ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি। অধিকাংশ টাকা ঋণ হিসেবে আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে নেওয়া।

বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি, তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরবর্তী সময়ে রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করলে ওনারা গড়িমসি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ওনারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করতেন তাও বন্ধ করে দেন। একাধিকবার ওনাদের লোকজন দিয়ে আমাকে হেনস্তা-ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশসহ আমার ন্যায্য পাওনা তিনকোটি টাকার অধিক।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া আমলী আদালতে আমি ওনাদের আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেছি, যা বিচারাধীন রয়েছে। গত ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করি। আমি এই প্রতারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি। সেই সাথে যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী তারাও সোচ্চার হবেন বলে আশা করছি।’

বলা হচ্ছে, এসব কারণেই হতাশা থেকে গাজী আনিস প্রেসক্লাবের সামনে নিজ গায়ে আগুন দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৪২:১০ ● ৩৬৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ