বঙ্গ-নিউজ: উইকিপিডিয়া:-
ঘেটুগান সম্পর্কে উইকিপিডিয়া বলে- ঘেটু গান প্রায় দেড়শ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে বর্তমান বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটু গান নামে নতুন গানের উদ্ভব ঘটে। ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে এই গান গাওয়া হতো বলে এর নাম হয় ঘাটু গান। অন্য পক্ষে কৃষ্ণের বাঁশীর ঘাট শব্দ থেকে ঘাঁটু শব্দের উৎপত্তি। কারণ ঘাটু ছোকড়াদের নাচে-গানে নিয়ণ্ত্রন করে বাঁশি।
যাই হোক অধিকাংশই এই মতের সাথে একমত যে, সিলেটের এক বৈষ্ণব আখড়া হতে এই গানের উদ্ভব। আর ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে এই গান গাওয়া হতো বলে এর নাম হয় ঘাটু গান।
ঘাটু গানের উৎসকে চিন্তা করেই বিখ্যাত লেখক নাট্য নির্দেশক ও চলচ্চিত্র পরিচালক ডঃ হুমায়ুন আহমেদ তৈরী করে ছিলেন একটি চলচ্চিত্র “ ঘেটু পুত্র কমলা”। তাতে তিনি কঠিন ভাবে আঘাত করতে চেয়েছেন এর কুৎসিৎ দিকটিকে। ঘাটু শিল্পীদের জীবনযাত্রা ও তাদের দুরাবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতেও এই গানের উৎপত্তি হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রাম।
এই চলচ্চিত্রে তিনি ঘাটুদের জীবনের করুণ কাহিনীটিই ফুটিয়ে তুলেছেন। এটা এই ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধেও তাঁর একটা চরম আঘাত বলা যেতে পারে। ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় মুক্তি পায় ছবিটি। ছবিটি তিনি শুধু মাত্র সিনেমা হলে প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করেন। একই সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরকে না দেখার জন্যও অনুরোধ করেন। কমলার চরিত্রে অভিনয় করেন শিশু শিল্পী মামুন। ছবিটি ৮৫তম অস্কার পুরস্কার প্রতিযোগীতার জন্য মনোনীত হয়। অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কমলার পিতার ভুমিকায় অভিনয় করেন। জমিদারের ভুমিকায় ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা তারেক আনাম। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শ্যূটিং কালীন সময়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা কালে কমলার করুণ মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন। ছবিটিতে কমলাকে জমিদারের স্ত্রী হত্যা করায় কাজের মহিলাকে দিয়ে। মুনমুন আহমেদ এই চরিত্রে খুবই সাবলীল অভিনয় করেন। কমলার প্রতি ঘৃণা ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠে জমিদার গৃহিনী। নানা ভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন তিনি। কিন্তু এক পর্যায়ে জমিদার স্ত্রীকে তালাক দিতে উদ্ধত হলে স্ত্রী নীরব হয়ে যায়। প্রতিহিংসা থেকে যায়। সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন জমিদার গিন্নী। এক সময়ে সুযোগ মতো উঁচু ছাদ হতে ফেলে কমলাকে হত্যা করা হয়। এই দৃশ্যটি বিষয়ে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, এই উঁচু ছাদের উপর যখন কমলারূপী মামুনকে উঠানো হয় তখন হুমায়ুন আহমেদ সহ অন্যরাও আতঙ্কিত হন। হুমায়ুন আহমেদ নাকি বলে ছিলেন, আমি এই দৃশ্য দেখতে পারছি না। কিন্তু ছবির প্রয়োজনে সতর্কতার সাথে শ্যুটিং করেন। যা হোক ছবিটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক কাহিনী। এই ছবিটিই ছিল হুমায়ুন আহমেদের শেষ ছবি। তবে তিনি প্রিমিয়ার শো দেখে যেতে পেরেছিলেন।
এই ছবিতে তিনি ঘাটু গান পরিবেশন নয়. বরং নির্মাতা এই শিল্পের কুশী-লবদের জীবনের করুণ দিকটির প্রতি আলোকপাত করতে চেয়েছেন। কাহিনীতে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য পিতা হয়ে নিজের কিশোর সন্তানকে ঘাটু দলের একজন পারফর্মার করেছেন। নিজে সন্তানের মুখে মেকাপ মাখিয়েছেন। আবার জমিদার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে কান্নাকাটি করলে সন্তানকে শান্তনা দিয়ে বলেছে, ”মাত্র তো তিনটি মাস। হাওরের পানি নেমে গেলেই তো আমরা চলে যাব। তখন আমরা বাড়িতে গিয়ে একটা টিনের ঘর দিতে পারবো,। অর্থাৎ সংসারে সুখ আসবে।” ছেলে রূপী কমলার আকুতি “ মাকে দেখতে যাব” । কিন্তু সব অসহায়। এক সময় অস্থির হয়ে কমলার মাও পুত্রের মুখ দেখতে ব্যাকুল হয়ে একবার তার ছোট মেযয়টিকে নিয়ে কমলাকে দেখতে এসেছিল। কিন্তু তার স্বামী জমিদার বাড়ির কড়া নিষেধাজ্ঞার কথা ভেবে হয়তো জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতে না দিয়ে নৌকা ফিরিয়ে দেয়। জমিদারের ভুমিকায় শিল্পী তারেক আনামের অভিনয় ছিল খুব সাবলীল।
সিনেমাটির শ্যুটিং হয়েছিল ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার হাওর অঞ্চলের হরিপুর জমিদার বাড়িতে।
পাশ্চাত্যের অনেক খ্যাতিমানের জীবনীতেও এই অনৈতিক বালক প্রীতির কথা শোনা যায়। কথিত আছে যে, উইলিয়াম সেক্সপীয়ার নাকি চতুর্দশবর্ষী বালক ”উইলি হগকে“ তাঁর শয্যাসংগী করতেন। এই বালককে এতই ভালো বেশে ফেলেছিলেন যে, তাকে নিয়ে একটি কবিতাও রচনা করেন। কবিতাটি ছিল, “ আমি কি তোমাকে একটি গ্রীস্মের দিনের সাথে তুলনা করবো “( Shall I Compare Thee to a Summers day ?”) পাশ্চাত্য দেশে গ্রীস্মের দিন সবচেয়ে আনন্দের হয়।
( চলবে)