বঙ্গনিউজঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পিরোজপুর শহর থেকে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগছে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। যখন ফেরি চলাচল করত, তখন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগত। কখনো যানজটে আটকে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লেগে যেত।
গত রোববার থেকে পদ্মা সেতুতে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এরপর পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী চারটি পরিবহনের বাসচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছেছেন। এ যাত্রায় ছিল না দীর্ঘ যানজট। পাশাপাশি যাত্রীরা উপভোগ করেছেন পদ্মা সেতু পার হওয়ার আনন্দ।
গতকাল সোমবার ভোর ছয়টায় পিরোজপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে দোলা পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন কলেজছাত্র তানভীর আহমেদ (২২)। সকাল সাড়ে নয়টায় তানভীর রাজধানীর পোস্তাগোলা এলাকায় নামেন। তানভীর আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু দেখার জন্য পিরোজপুর থেকে বাসে ঢাকায় বোনের বাসায় গিয়েছি।
আমাদের বাস যখন পদ্মা সেতু পার হচ্ছিল, তখন যাত্রীরা বাসচালককে ধীরে চালাতে অনুরোধ করেছিলেন। কারণ, আমরা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। বাসের যাত্রীরা মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন, কেউ ছবি তুলছিলেন। বাসের গতি কমিয়ে দেওয়ায় আমরা ৯ মিনিটে সেতু পার হই। এ অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ।’
পিরোজপুর বাসস্ট্যান্ডের দোলা পরিবহনের কাউন্টারে সোমবার দুপুরে কথা হয় চালকের সহকারী মো. ফাইজুর রহমানের সঙ্গে (২৫)। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর গুলিস্তান থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। সকাল ১০টায় পিরোজপুরে পৌঁছান। তিনি বলেন, গত রোববার বাস নিয়ে দুবার ঢাকা-পিরোজপুর আসা-যাওয়া করেছেন তাঁরা। প্রতিবারই সোয়া তিন ঘণ্টা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে।
ইমাদ পরিবহনের বাসচালক মনিরুল ইসলাম (৪০) বলেন, রোববার ভোর পাঁচটায় রাজধানী থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পদ্মা সেতুতে প্রথম দিন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের জন্য ভিড় ছিল। এ জন্য যানজটে কিছু সময় বেশি লেগেছিল। তবে গতকাল সোমবার সকালে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সেতু পার হতে পেরেছেন। সাড়ে তিন ঘণ্টায় পিরোজপুরে পৌঁছে যান।
বাসচালক মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রোববার সকালে যখন যাত্রীদের নিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুতে উঠি, তখন যাত্রীদের মধ্যে এক অন্য রকম উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সেতুতে বাস ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা জানালা দিয়ে সেতু দেখতে থাকেন। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে বাসের সামনে চলে আসেন। কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করছেন, কেউ জানালা দিয়ে ছবি তুলছেন।
আমার ১৫ বছরের বাস চালানোর জীবনে যাত্রীদের মধ্যে এত আনন্দ আগে কখনো দেখিনি। পদ্মা সেতু যখন প্রথম পার হচ্ছিলাম, আমার নিজের মধ্যেও একধরনের উত্তেজনা কাজ করছিল। আট বছর ধরে স্বপ্ন দেখতাম, একদিন পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চালাব। সেই স্বপ্ন যখন বাস্তব হলো, সেটা অবশ্যই মহা আনন্দের।’
বাসচালকেরা জানান, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ না থাকায় সড়কে গাড়ি রাখায় কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়। প্রথম দিন সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসচালকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তবে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করায় স্বস্তি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল সোমবার থেকে সেনাবাহিনী তৎপর থাকায় সেতুতে কোনো যানজট ছিল না।
দোলা পরিবহনের সুপারভাইজার অপু বাড়ৈ (৩০) মুঠোফোনে বলেন, সোমবার দুপুরে পিরোজপুর থেকে যাত্রী নিয়ে রাজধানীর সায়েদাবাদে যাওয়ার পথে দয়াগঞ্জ মোড়ে শুধু যানজটে পড়তে হয়েছে। এ সময় আধা ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিলেন। বাকি পথ যানজট ছাড়াই নির্বিঘ্নে আসতে পেরেছেন। যানজটের কারণে তাঁদের চার ঘণ্টা সময় লেগেছে।
পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকিব বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় যাত্রীরা কম সময়ে যাতায়াত করতে পারছেন। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি দূর করেছে পদ্মা সেতু।
আগে লিচু, আম, তরমুজ, কাঁঠালসহ সবজি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক মাওয়া ফেরিঘাটে কয়েক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করত। এতে পণ্য নষ্ট হয়ে যেত। এখন সে সমস্যা দূর হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মাছ পাঠানো যাচ্ছে। পাশাপাশি অসুস্থ রোগীদের নিয়ে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা অবসান ঘটেছে।