বঙ্গনিউজ : দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুতে ব্যবহূত নির্মাণসামগ্রীর জোগানদাতা হিসেবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের অবদানও স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো। সেতুতে রড, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহূত হয়েছে বাংলাদেশের। বিশাল এ প্রকল্পে পণ্য সরবরাহ করতে পেরে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে দেশের রড ও সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
তারা বলছে, এসব পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে একটি বড় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে দেশীয় নির্মাণসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
পদ্মা সেতুর পুরো কাজ পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মূল সেতু, নদীশাসন, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামো।
সাধারণত সেতু স্টিল অথবা কংক্রিটের হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু হয়েছে স্টিল ও কংক্রিটের মিশ্রণে। সেতুর মূল কাঠামো বা স্প্যান স্টিলের। সেতু বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সেতুতে রড লেগেছে ৯২ হাজার টনের বেশি। ‘বিএসআরএম’ এবং ‘কেএসআরএম’ নামে দুটি ব্র্যান্ডের দেশীয় রড ব্যবহূত হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ রড ব্যবহার করা হয়েছে বিএসআরএমের। এ ছাড়া ৫০ এমএম স্পেশাল রিবার (বিশেষ রড) ব্যবহার হয়েছে এক হাজার ১৩০ টন। এর মধ্যে বিএসআরএম সরবরাহ করেছে এক হাজার টন।
বিএসআরএম বলছে, সেতুতে প্রায় ৯২ হাজার টন রড ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে তারা একাই সরবরাহ করেছে ৮৮ হাজার টন। দেশের সেরা এই প্রকল্পে মানসম্মত রড সরবরাহ করে একটি মাইলফলক অর্জন করেছে তারা।
বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত সমকালকে বলেন, সেতুর মূল কাঠামোতে ব্যবহূত স্টিলের ৯৫ শতাংশই আমরা সরবরাহ করেছি। এই মহাপ্রকল্পের চাহিদা ও মান অনুযায়ী আমাদের পণ্য সরবরাহ করতে পেরে খুবই গর্ব বোধ করছি। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণে আরও বড় অংশীদার হবে বিএসআরএম।
পদ্মা সেতুর পুরো অবকাঠামোতে ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৮১৯ টন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুতে লেগেছে দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৯৬ টন। এসব সিমেন্টের বেশিরভাগই স্ক্যান, প্রিমিয়ার, হাইডেলবার্গ ও বসুন্ধরা সিমেন্ট। এ ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে ক্রাউন, আনোয়ার, পোর্টল্যান্ড, সেভেন রিংস ও শাহ সিমেন্ট।
প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক সমকালকে বলেন, এ সেতুতে ব্যবহূত মোট সিমেন্টের প্রায় ২৫ শতাংশই ব্যবহার হয়েছে প্রিমিয়ার ব্র্যান্ডের সিমেন্ট। দেশের গৌরবের প্রতীক এই সেতুতে গুণগত মানের সিমেন্ট দিতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। প্রিমিয়ার সিমেন্টের কারখানা পদ্মা সেতুর কাছাকাছি থাকায় সহজে সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এ প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য- এই প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহ করে মনে হচ্ছে, আমি দেশের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এটা অত্যন্ত সম্মানের বিষয়।