বঙ্গ-নিউজ: পদ্মা সেতু নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ আর প্রশ্নের অন্ত নেই। স্বপ্নের এই সেতু নির্মাণে কেনো বিশ্বের অপরাপর সেতুর চেয়ে তুলনামূলক বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে, সেটা নিয়েও আছে অনেকের জিজ্ঞাসা। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, এই সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সিমেন্ট।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫০ কেজির এক বস্তা সিমেন্টের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। যত ভালোই হোক না কেনো, ৬০০ টাকার ওপরে দেশে কোনো সিমেন্ট নেই। আর পদ্মা সেতুর পিলারে ‘মাইক্রো ফাইন’ নামের যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যার বস্তা প্রতি খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা! এই সিমেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, পদ্মার নিচের মাটি খুবই নরম। তাছাড়া খরস্রোতা নদী হওয়ায় নিচের মাটি সরে যায় প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় কীভাবে এত বড় একটা অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে, তা ঠিক করা ছিল প্রকৌশলীদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। তাই শুধু দামি সিমেন্ট নয়, পিলারের ব্যাস রাখা হয়েছে ১০ ফুট!
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পিলারের নিচে রয়েছে ৬ থেকে ৭টা বড় বড় পাইল। সবমিলিয়ে একেকটা পিলার প্রায় একেকটা ঘরের সমান। আমাদের দেশের সাধারণ সিমেন্ট দিয়ে এসব পিলারের গ্রাইন্টিং তৈরি করা সম্ভব ছিল না। তাই অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত মাইক্রো ফাইন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত মিহি এবং শক্তিশালী।
পদ্মা সেতুর জন্য বাজেট পাস হয় ২০০৭ সালে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। নকশা পরিবর্তন ও দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির কারণে ২০১১ সালে বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে বাজেটে যুক্ত হয় আরও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। চতুর্থ দফায় এই সেতুর বাজেট বৃদ্ধি পায় আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। অবশ্য এখনো এই বাজেটের পুরোটা খরচ হয়নি বলে জানা গেছে। সেতুর খরচের মধ্যে রয়েছে- ভূমি অধিগ্রহণ, সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, পুনর্বাসন ও পরিবেশ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা।
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পক্ষ থেকে। উদ্বোধন উপলক্ষে যে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে, তাতে ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।