প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত এনামুল গ্রেফতার!

Home Page » জাতীয় » প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত এনামুল গ্রেফতার!
রবিবার ● ১৯ জুন ২০২২


মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী এনামুল গ্রেফতার

বঙ্গ-নিউজ: বহুল আলোচিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ মো. এনামুল হক ওরফে এনামুল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল।

২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে শেখ মো. এনামুল করিমসহ তার অপরাপর জঙ্গি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রাখে। ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩টি মামলা দায়ের হয়।

তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেপ্তারকৃত শেখ মো. এনামুল হক ওরফে শেখ মো. এনামুল করিমসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর র‍্যাব জানায়, ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও তৎকালীন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির আমীর মুফতি আব্দুল হান্নানের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় এনামুল হকের। ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ শহরে বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নারের ছোট ভাই আনিসের সাথে যৌথভাবে ‘সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

মুফতি হান্নান ও অন্যান্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালের জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার তার ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে। এনামুল হক তখন বিভিন্ন সময়ে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সাথে গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন। মুফতি আব্দুল হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত এনামুল দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে সভাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই কারখানায় সাবান তৈরির কেমিক্যাল সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি জমা করে লোহার ড্রামের ভেতর দুটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করে তারা। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে সেগুলো পুতে রাখে।

ঘটনার পর এনামুল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে গাজীপুরের একটি মসজিদে ৮ বছরের অধিক সময় ইমামতি করেন। সেখানে অবস্থানকালীন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।

এছাড়া গাজীপুরে অবস্থানকালে একটি হোমিওপ্যাথি কলেজে ২ বছর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বলে জানা যায়। কখনো তিনি নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দাবী করত। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। ২০১৫ সালে উত্তরায় ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে ক্যান্সার নিরাময় কেন্দ্র নামে ভুয়া হারবাল চিকিৎসা শুরু করে।

তার চিকিৎসায় ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় বলে দাবী করতেন। এছাড়া এইডস রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা প্রদানে সক্ষম বলে দাবী করতেন। সবসময় নিজস্ব গন্ডির মধ্যে চিকিৎসা প্রদান করতেন।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত এনামুল নিজেকে হেপাটাইটিস-ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিকস, মেদ, বন্ধ্যাত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনী, যৌন, মানসিক রোগসহ বহুবিধ রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবী করতেন। এভাবেই বহু বছর যাবত তিনি পালিয়ে ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৭:০৮ ● ৫৮৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ