বঙ্গ-নিউজ: গত ১১ জুন রাতের ঘটনা। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার সাফুল্লী স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা শেষে বাড়ী ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয় মো. রানা আহমেদ, বয়স ১৯। ইনাম ক্লাবের সামনে পৌঁছামাত্র র্যাবের জ্যাকেট ও র্যাবের লোগো সম্বলিত মাস্ক পরিহিত অবস্থায় কতিপয় ব্যক্তি র্যাব পরিচয় দিয়ে রানার পথরোধ করে, মাথায় পিস্তল ঠেকায়।
তার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে তাকে মাদক পাচারকারী হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাত সাড় ১০টায় অপহরণকারী দলের এক সদস্য রানার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার পিতার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
রানার বাবা মুক্তিপনের টাকা কমানোর জন্য বারবার অনুরোধ করলে শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকায় রাজি হয়। টাকা নিয়ে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীর বাবাকে মিরপুর-১ গোল চত্তর এলাকায় আসতে বলে।
অপরদিকে রানার বার ওই রাতেই র্যাব-৪ অফিসে হাজির হয়ে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারীদের ধরতে অভিযানে নামে র্যাব।
র্যাব জানায়, রানার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাবের একটি আভিযানিক দল ১২ জুন সকাল ৬ টায় রাজধানীর পল্লবী থানার সাগুফতা হাউজিং এবং মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহৃত ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে।
এ সময় একটি পিস্তল, একটি গুলি, ৯৮ পিস ইয়াবা, র্যাব জ্যাকেট, সেনা আইডি কার্ড, ভুয়া র্যাব আইডি কার্ড, র্যাব লোগো সম্বলিত স্টিকার, র্যাব মনোগ্রামযুক্ত মাক্সসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- মো. আশিকুর রহমান, বয়স ২৯, শাহ মো. দোজাহান, বযস ২২, মো. মিঠুন, বয়স ১৮, মো. হাবিবুর রহমান, বয়স ২৭ ও মো. শরিফুল ইসলাম, বয়স ৩২।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, আভিযানিক দলের পরিকল্পনায় ও তত্ত্বাবধানে ভিকটিমের বাবা মুক্তিপণের টাকাসহ মিরপুর-১ নম্বর পৌঁছালে অপহরণকারীরা স্থান পরিবর্তন করে মিরপুর ডিওএইচএস’র ১ নং গেইটে আসতে বলে। সেখানে অপহরকারীর এক সদস্য উপস্থিত হলে র্যাবের আভিযানিক দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর সেই অপহরণকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পল্লবী থানাধীন সাগুফতা হাউজিং সমিতির প্লট হতে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারসহ অপহরণকারীর আরও দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে অপহরণকারী দলের মূল সহযোগী মো. হাবিবুর রহমান (৩৭) এবং অপর সহযোগী মো. শরিফুল ইসলামকে (৩২) মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে র্যাব-৪ এর অপারেশন অফিসার মো.সাজেদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। রানার বাবা চাল ব্যবসায়ী। তার পরিবার তুলনামূলক অর্থশালী হওয়ায় প্রতিবেশী মো. শরিফুল ইসলাম এবং হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাকি অপহরণকারীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
অভিযান চলাকালীন র্যাবের আভিযানিক দলের ৫ সদস্য আহত হয় বলেও জানান তিনি।