বঙ্গনিউজ খেলার খবর : আইপিএলের সম্প্রচার সত্ত্বের জন্য দৌড় শুরু হয়ে গেছে। ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে লোভনীয় প্রতিযোগিতার সঙ্গে জড়িত থাকার দুটি উপায় আছে। একটি সরাসরি সম্প্রচার সত্ত্ব কেনা, আরেকটি হলো অনলাইন স্ট্রিমিং সত্ত্ব কেনা। শুধু স্ট্রিমিং সত্ত্বের জন্যই লড়াই করবে ওয়াল্ট ডিজনি, রিলায়েন্স ও সনির মতো প্রতিষ্ঠান। পাঁচ বছরের জন্য আইপিএলের সম্প্রচার সত্ত্ব বুঝে পাওয়া মানে যে আগামী পাঁচ বছর আয় নিয়ে নির্ভার থাকা।
ওদিকে নতুন পাঁচ বছরের চুক্তি থেকে বিসিসিআই যা আয় করার আশা করছে, তাতে দামের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ের টুর্নামেন্ট হয়ে যাবে আইপিএল।
আইপিএল সবশেষ চুক্তিতে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে যা আয় করেছিল, ম্যাচপ্রতি আয়ে সেটা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ ছিল। শীর্ষ তিনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তিনটি লিগ—ন্যাশনাল ফুটবল লিগ(এনএফএল), ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল) এবং মেজর লিগ বেসবল (এমএলবি)। প্রথমে রাগবি, দুইয়ে ফুটবল আর তিনে বেসবল। জনপ্রিয়তায় বিশ্বজুড়ে ফুটবলের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও নতুন চুক্তিতে ফুটবলকে হটিয়ে দুইয়ে উঠে যাবে ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্ট।
আইপিএলের স্ট্রিমিং সম্প্রচার নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিলামে থাকবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজন। কিন্তু রিলায়েন্সের ভুট, ডিজনির হটস্টার এবং জিও সনির ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দুটি এই সম্প্রচার পেতে লড়বে। অনেকের তো ধারণা টিভি সম্প্রচার সত্ত্বের চেয়ে স্ট্রিমিং সম্প্রচার সত্ত্ব থেকেই এবার বেশি অর্থ পাবে। তবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহর দাবি, নিলামের যে ভিত্তি মূল্য সেটি পেলেই ম্যাচপ্রতি আয়ে দুইয়ে চলে যাবে আইপিএল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জয় শাহ বলেন, ‘বর্তমানে একটি এনএফএল ম্যাচে সম্প্রচারকের খরচ হয় ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যেটা যেকোনো ক্রীড়া লিগে সর্বোচ্চ। এরপর আছে ইপিএল, সেখানে ব্যয় হয় ১ কোটি ১০ লাখ। এমবিএলের খরচও এর কাছাকাছি। গত পাঁচ বছরের চক্রে আমরা এক আইপিএল ম্যাচ থেকে ৯০ লাখ ডলার পেয়েছি। এবার ন্যূনতম ভিত্তি মূল্য অনুযায়ী প্রতি আইপিএল ম্যাচের জন্য বিসিসিআই ১ কোটি ২০ লাখ ডলার পাবে। এটা বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য বড় এক লাফ। আমরা তখন শুধু এনএফএলের পেছনে থাকব।’
২০১৭ সালে স্টার ইন্ডিয়া আইপিএলের পাঁচ বছরের সম্প্রচার সত্ত্বের জন্য ৩০০ কোটি ডলার খরচ করেছিল। ২টি দল বেড়ে বর্তমানে আইপিএলে ১০টি দল। ফলে ম্যাচ সংখ্যা বেড়েছে। এবারের নিলামে আরও অনেক বেশি আয়ের প্রত্যাশা করছে বিসিসিআই।
আইপিএলের প্রতি যে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ বাড়ছে, সেটি বোঝা গেছে এ বছরই। নতুন দুটি দলের মালিকানা বিক্রি করে বোর্ড এবার ১৭০ কোটি ডলার পেয়েছে! এর মধ্যে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের মূল্য ভিত্তি মূল্যের আড়াই গুণ বেশি ছিল।
এবার আইপিএলের সম্প্রচার সত্ত্বের নিলাম অনলাইনে হবে। জয় শাহর দাবি, এতে নিলামে অংশগ্রহণকারী পুরো প্রক্রিয়া যে স্বচ্ছ, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন। তবে কে কত দর হাঁকাচ্ছেন, সেটা তখনই জানা যাবে না। নিলাম শেষেই বিজয়ীর নাম জানা যাবে। এতে পুরো ব্যাপারটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলে ধারণা তাঁর।
আইপিএলের সম্প্রচার সত্ত্বকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্যাকেজ এ—তে আছে ভারতীয় উপমহাদেশের টেলিভিশন, প্যাকেজ বি—তে থাকছে ডিজিটাল, প্যাকেজ সি—তে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের বাড়তি সংযোজন এবং প্যাকেজ ডি—তে থাকবে উপমহাদেশের বাইরের সত্ত্ব। প্যাকেজ—সিতে শনি ও রোববারের ম্যাচ, প্লে-অফ ও ফাইনালের ম্যাচ থাকবে। এবার স্ট্রিমিং সত্ত্বেই বেশি নজর বিসিসিআইয়ের, ‘২০২৪ সাল নাগাদ ভারতের ৯০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। এ কারণেই ক্রিকেটের প্রচারে ডিজিটাল সত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
ম্যাচপ্রতি আয়ে দুইয়ে উঠে গেলেও টুর্নামেন্টজুড়ে সম্প্রচার আয়ে অবশ্য আইপিএল অনেক পিছিয়ে থাকবে। কারণ, আইপিএল মাত্র দুই মাস খেলা হয়। ওদিকে ফুটবল, রাগবি বা বেসবল বছরজুড়ে হয়। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দুই লিগের ধারেকাছে নেই কেউ। এনএফএলের সম্প্রচার সত্ত্বের মূল্য ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। আর এনবিএর ক্ষেত্রে সেটা ২ হাজার ৩০০ কোটি।