বঙ্গ-নিউজ: ৬৯,৭০ ও ৭১ এর উত্তাল দিনগুলোতে বিধুদার চায়ের দোকানে বসতো আড্ডা। জমে উঠতো রাজনীতি নিয়ে কত কথা। কিন্তু বিধুদা ছিলেন একেবারেই নিরাশক্ত এবং অরাজনৈতিক একজন ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ছিল মধুদার ক্যান্টিন। তখন সেখানে বসতো সব রাজনৈতিক আড্ডা। কিন্তু মধুদাও সবার সেবা দিয়ে থাকতেন। তিনিও ছিলেন অনেকটা অরাজনৈতিক ব্যক্তি। বিধুদাও অনেকটা তাই। দইখাওয়ায় বিধুদার চায়ের দোকান অনেকটা মধুদার ক্যান্টিনের মতো ছিল । মধুদাকে পাকবাহিনী মেরে ফেলে। আর বিধুদা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেন ভারতের কোচবিহারের লালবাজার । বিধুদার দোকানে বসতেন সত্তরের নির্বাচনের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা কারী পাটগ্রামের মোঃ আবেদ আলী মিয়ার কর্মীগণ এবং কখনো সখনো আবেদ মিয়া নিজেও। আর তাঁর প্রতিপক্ষের প্রতিদ্বন্দী ছিলেন কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রার্থী বাঘ মার্কা প্রতীকের হাজী মোঃ শফিকুল ইসলাম। শফিকুল ইসলামের বাড়ি ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে। এই বাঘ মার্কার কর্মীগণও বিধুদার দোকানে বসে চা-মিষ্টি খেয়ে দইখাওয়ায় মিটিং ও কর্মীসংযোগ করতেন। সবারই বৈঠক হতো বিধুদার দোকানেই। হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম নিয়েই হলো একটি সংসদীয় এলাকা। বর্তমানে বিধুদার বয়স প্রায় ৮৬ বছর।
তাঁর চা মিষ্টি খুব বিখ্যাত। বিধুদার দোকানের ”পানি কম চা” এখনো অকৃত্রিম ও সমান জনপ্রিয়। ছানার জিলাপী ও রসগোল্লা ভোজন রসিকদের এখনো সমান ভাবে আকৃষ্ট করে। প্রতিটি মানুষের প্রিয় বিধুদার মিষ্টি। সন্ধার পর পরই বিধুদার দোকানে শোঁ শোঁ শব্দে জ্বলে উঠতো দোকানের হ্যাছাক লাইট। সেই সংগে কেরোসিনের স্টোভ সমান শব্দে পাল্লা দিয়ে চলতো। মনে হতো শব্দ করার যেন এক প্রতিযোগীতা চলছে। স্টোভ এবং হ্যাছাকের মধ্যে কিছুক্ষণ পর পর বিধুদা পিন করে নিতেন অথবা পাম্প করতেন। তখন বাজারে হ্যাছাক লাইট ব্যবহার করতেন এমন দোকানের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তারা জ্বালাতো কেরসিনের কুপি বাতি ,ল্যাম্প্ বা মশাল। বাজার শেষে দোকান বন্ধ করে অনেক রাতে বিধুদা বাড়ি ফিরে যেতেন হ্যাছাক লাইট হাতে নিয়ে। দোকান বন্ধ না হওয়া অবধি ভিড় থাকতো দোকানটিতে। তিনি চলে গেলে এক নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে যেতো এই গ্রাম্য বাজারটি। বিধুদা অবশ্য আরো জনহিতকর কাজও করতেন তাঁর হ্যাছাক বাতি দিয়ে। গ্রাম্য সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাঁর ডাক পড়তো আলোর সমস্যা সমাধানের জন্য।
তখন বিধুদা এই হ্যাছাক লাইট নিয়ে শুধু যে যেতেন তা নয়, অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত থেকে এবং কিছুক্ষণ পর পর লাইটে হাওয়া ও পিন দিয়ে আলোক সমস্যার নিশ্চয়তা দিতেন। হ্যাছাক লাইটের উপর দিকে থাকতো একটি মেন্টাল। সেই মেন্টালটি আগে একটু উত্তপ্ত করে নিতে হয়। পরে পাম্পের সাহায্যে নিচ থেকে উপরে জোরে কেরোসিন উঠে একটা গ্যাস সৃষ্টি করে এবং এই গ্যাসটি নীলাভ আলোয় জ্বলতে থাকে। এখন হয়তো বিধুদার সেই হ্যাছাক বাতিটিতে কতো মরিচাই না পড়েছে।
চলবে-