২৫শে বৈশাখ ও কিছু অব্যক্ত অনুভূতি- ফারহানা আকতার

Home Page » সাহিত্য » ২৫শে বৈশাখ ও কিছু অব্যক্ত অনুভূতি- ফারহানা আকতার
রবিবার ● ৮ মে ২০২২


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনটি  এলেই আমার মাঝে এক বিশেষ অনুভূতি কাজ করে ৷ সত্যিকার অর্থে, বিশ্বের মনীষীদের জন্মদিনটি স্মরণ করতে আমার ভালো লাগে আর মৃত্যুদিনটি ভুলে যেতেই ভালো লাগে ৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম  ১৮৬১ সালের ২৫শে বৈশাখে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীতে ৷রবীন্দ্রনাথের রচনার তালিকায় রয়েছে- ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ, ৯৫টি ছোটগল্প , ১৯১৫টি গান ও ২০০০টির মতো আঁকা ছবি ৷ ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ ।প্রথমে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন । পরবর্তীতে, ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি।ইংল্যান্ডে থাকাকালীন শেকসপিয়র ও অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। এই সময় তিনি বিশেষ মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন রিলিজিও মেদিচি, কোরিওলেনাস এবং অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা । এই সময় তার ইংল্যান্ডবাসের অভিজ্ঞতার কথা ভারতী পত্রিকায় পত্রাকারে পাঠাতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮১ সালে সেই পত্রাবলি ইউরোপ-প্রবাসীর পত্র নামে গ্রন্থাকারে ছাপা হয়। এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্যগ্রন্থ তথা প্রথম চলিত ভাষায় লেখা গ্রন্থ। অবশেষে ১৮৮০ সালে প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শেষ না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তাঁর ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থের  ইংরেজী অনুবাদের জন্য নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন ৷ সেদিন ২৫শে বৈশাখে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ নামের এই শিশুটির জণ্ম না হলে আজ আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার, বাংলা গানের ভান্ডার অনেকটাই অপূর্ন রয়ে যেতো ! মূলত: একটি জাতির মূল পরিচিতি বহন করে তাঁর শিল্প-সাহিত্য,সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস ৷ তাই যে জাতি তাঁর শিল্প-সাহিত্য,সংস্কৃতি,ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষার প্রতি ও এদেরকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার প্রতি যত বেশী যত্নশীল, সে জাতি আজ স্বমহিমায় তত বেশী উজ্জ্বল ও উন্নত ৷তাই বাংলাদেশের টিভি-চ্যানেলগুলোতে আমরা (যারা শিক্ষক ও বাংলা সাহিত্য প্রেমী)যখন অসংখ্য বিদেশী মুভিগুলোর অনুবাদ দেখতে পাই, তখন তা আমাদের মনবেদনার কারন হয়ে দাড়ায় ৷

এরই মধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ কে নিয়ে আমার বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ৷ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হছ্ছে : দৈনিক জণকণ্ঠ, তীরন্দাজ(অনলাইন পত্রিকা), দৈনিক আজাদী ইত্যাদি ৷ তবু মনে হয়, তাঁর সৃষ্টি-কর্ম নিয়ে আরও অনেক বেশী কাজ করার রয়েছে৷ কবিগুরুর জণ্মবার্ষিকীতে সেইসব প্রকাশিত প্রবন্ধের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে আবার নতুন করে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

“ রবীন্দ্র স্মৃতি রক্ষার্থে রবীন্দ্র-গবেষনা ও রবীন্দ্র-দর্শনের মাধ্যমে পাঠদানের জন্য তাঁর নামে গড়ে উঠেছে ভারতের কলকাতায় দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশে মোট তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি ইনষ্টিটিউট ৷ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হছ্ছে, ১.বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ২.রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ৷
১.বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় : এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ফাউন্ডার চেয়ারম্যান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ ব্রম্ম্য  ধর্ম চর্চার জন্য কবির বাবা শান্তিনিকেতনে যে আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের বেশ কয়েকটি বছর কাটিয়েছিলেন এবং সেখানেই১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলেন ৷

২.রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় : এটি অবস্হিত কবির জণ্মস্হানে অর্থাৎ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীতে ৷রবীন্দ্রনাথদের ঠাকুরবাড়ীর স্মৃতি রক্ষার্থে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালের ৮মে ৷ এটি ভারতের একটি পূর্নাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৷
এবারে ফিরে দেখা যাক, রবীন্দ্র স্মৃতি রক্ষা, রবীন্দ্র চর্চা ও গবেষণার জন্য বাংলাদেশে কোন্ কোন্ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে :
১.রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, ২.ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনষ্টিটিউট (আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউট) ,৩.রবীন্দ্র –মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ও ৪.রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় ৷মূলতঃ তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের তিনটি জায়গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারী ছিল, যথাক্রমে: ১.নওগাঁ জেলার পতিসরে, ২.কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ও ৩.সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে৷রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি রক্ষার্থে উপরোক্ত প্রতিটি স্হানে গড়ে উঠেছে রবীন্দ্র-দর্শনের আলোকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৷
১.রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় : বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্হিত এটি সম্পূর্নরূপে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৷এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ৮ মে ৷ভারতের শান্তিনিকেতন ও বিশ্ব-ভারতীর আদলে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৷
২.ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনষ্টিটিউট (আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউট): বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নঁওগার পতিসরে রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের জমিদারী রক্ষার্থে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর এখানে কাটিয়েছিলেন কারন বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁর পতিসরে রবীন্দ্রনাথের বাবার যে জমিদারী ছিল সেখানে মূলতঃ তাঁর নিজস্ব অংশটুকু ছিল –নওগাঁর পতিসরে ৷ রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের বিভিন্ন সময়ে এখানে এসেছিলেন এবং সে সময় এই এলাকার হত-দরিদ্র মানুষের দুঃখ-দু্র্দশা তাকে গভীরভাবে মর্মাহত করে ৷ রবীন্দ্রনাথ তাঁর কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছিলেন ৷এখানে (নওগাঁ-পতিসরে) কাব্য-চর্চার সময় তিনি এখানকার দরিদ্র মানুষকে দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য এখানে গড়ে তুলেছিলেন একটি কৃষি ব্যাংক যেখান থেকে খুব সহজ শর্তে দরিদ্র জণসাধারকে ঋণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হতো ) , দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ৷রবীন্দ্রনাথ যে তাঁর নোবেল বিজয়ের পুরো অর্থই ব্যয় করেছিলেন এই কৃষি ব্যাংকের উন্নয়নের জন্য তা আজও ৯0% বাঙ্গালির অজানা যা সত্যিই অতি বেদনাদায়ক ৷এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আমি মনে করি, রবীন্দ্রনাথের জীবনীতে এই অংশটুকু অবশ্যই যোগ করার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী৷ পতিসরে রবীন্দ্র-স্মৃতি রক্ষার্থে ও রবীন্দ্র-দর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার আলো নতুন প্রজণ্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মহান উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই প্রতিষ্ঠানটি এখানে সম্পূর্ন নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন  এই এলাকার সংসদ সদস্য- ইসরাফিল আলম, এম.পি (গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সরকারের প্রাক্তন সংসদ সদস্য)৷তিনিই এ প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান৷এই প্রতিষ্ঠানটি নির্মানের সময় তাকে নিরলসভাবে সার্বিক সহায়তা করেছেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব,রবীন্দ্র-স্মৃতি সংগ্রাহক ও রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী এম.মতিউর রহমান৷ বর্তমানে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান (এ্যা্ক্টিং) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ তবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নানারকম জটিলতা সত্ত্বেও এই ইনষ্টিটিউটটিকে সম্পূর্ন পৃথক একটি বিশ্ববদ্যালয়ে রূপ দেয়ার জন্য অথবা অন্য একটি পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে পৃথক ইনষ্টিটিউট হিসেবে পরিচালনার জন্য যা যা থাকা প্রয়োজন তার প্রায় সবকিছুরই আয়োজন রয়েছে এখানে ৷ রয়েছে রবীন্দ্র-যাদুঘর (যা পুরোপুরি সরকারী তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হ্ছছে), রয়েছে গবেষক ও স্টুডেন্টদের জন্য মনোরম ক্লাশরুম,হোষ্টেল লাইব্রেরী ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, রয়েছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল কোর্স ও প্রো্গ্রামসমূহ৷ এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সরকারীকরনের পর্যায়ে রয়েছে৷ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ভিজিট করেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হছ্ছেন : ১.গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, চ্যাণ্সেলর, সকল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ২.অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী,মাননীয় ভাইস চ্যাণ্সেলর ,রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ভারত, ৩.জনাব,আসাদুজ্জামান নূর, মাননীয় মন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়,বাংলাদেশ, ৪.ড.আতিউর রহমান, বঙ্গবন্ধু চেয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ৫. অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী,মাননীয় ভাইস চ্যাণ্সেলর ,রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-এর সঙ্গে অন্যান্য যারা কবিতীর্থ পরিদর্শনে আসেন, তারা ছিলেন- রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন (২০১৪সালে) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. ভাস্কর সেনগুপ্ত , কিউরেটর শ্রীমতী ইন্দ্রাণী ঘোষ, গ্রাফিকস অ্যান্ড প্রিন্টিং মেকিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. পরাগ রায়, সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. চিত্ত মণ্ডল প্রমূখ ৷
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলটি মূলত: তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্যালারি স্থাপনের লক্ষ্যে এই পরিদর্শনে আসেন ৷ পরিদর্শন শেষে এক মত বিনিময় সভায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যাণ্সেলর অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন যে, “কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নিজস্ব জমিদারি পতিসর থেকে বিদায় নেওয়ার আগে এই এলাকার হত-দরিদ্র মানুষের দুঃখ–দারিদ্র অনুভব করে যেই কষ্ট পেয়েছিলেন এবং তাদের সেই কষ্ট লাঘবের জন্য নিজের জমিদারি হতে উপার্জিত আয় ও নোবেল প্রাইজের অর্থ ব্যয় করে তিনি যে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এখানে কৃষি ব্যাংক,দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, তা আজ স্বচক্ষে দেখে গেলাম এবং সেই কষ্ট অনুভব করলাম ৷”

৩.রবীন্দ্র-মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় : কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি-বিজড়িত স্হানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে৷এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনু, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী ও কুষ্টিয়ার সংসদ সদস্য ৷এটি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়৷
৪.রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় : এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকার উত্তরায় ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৷বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজজামান-এর রবীন্দ্র শিক্ষা-ভাবনা ও আদর্শের আলোকে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় ৷
মূলত: উপরে উল্লেখিত সবগুলো প্রতিষ্ঠানই বাঙ্গালি কৃষ্টি, সংস্কৃতি, রবীন্দ্র শিক্ষা ভাবনা, রবীন্দ্র দর্শন চর্চার মাধ্যমে তাদের কোর্স-কারিকুলামগুলো ডিভালপ করেছে এবং প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের জন্য অনার্স,মাষ্টার্স,এম.ফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের সকল বিষয়সমূহ৷

রবীন্দ্র চর্চা ও স্মৃতি-রক্ষার এত আয়োজনের পরেও যখন জানতে পারলাম যে, শুধু লেখালেখিতেই নয়, মানুষ হিসেবেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন মহৎ মানব এবং তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত নওগাঁর পতিসরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য তাঁর নোবেল বিজয়ের সম্পূর্ন অর্থ দিয়ে কৃষি ব্যাংক, দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং নিরলসভাবে এদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাওয়া ৷ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, নোবেল জয়ী বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের জীবনের গুরুত্বপূর্ন এ অংশটুকুর কথা কোথাও লিপিবদ্ধ নেই৷” – [প্রকাশিত : দৈনিক আজাদী (বন্দরনগরী চট্রগ্রাম, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত), ১৮ জানুয়ারী’২০২২ ] ৷

উপরে উল্লেখিত সবগুলো প্রতিষ্ঠানই নিয়মিতভাবে কোথাও সপ্তাহব্যাপী আবার কোথাও মাসব্যাপী বিশ্বকবির জণ্ম-জয়ন্তী পালন করে আসছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় ‘আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউট (ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনষ্টিটিউট)’-তার সৃষ্টির সেই প্রথম থেকেই এই দিবসটিকে ঘিরে আয়োজন করে চলেছে নানা ধরনের অনুষ্ঠানমালা ৷ তবে এই ইনষ্টিটিউটের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান-জনাব ইসরাফিল আলম,এম পি- এর অকাল মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানটি বলতে গেলে একরকম স্হবির হয়ে পড়েছে৷ এ কারনেই এ প্রতিষ্ঠানটির চলমান অবস্হা অব্যাহত রাখার জন্য ও রবী-তীর্থ নওগাঁর-পতিসরে রবীন্দ্র –স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন ৷আপাততঃ এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে না হলেও সরকারের স্হানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বল্প-পরিসরে পালিত হছ্ছে –এবারের ‘রবীন্দ্র-জণ্মোৎসব’ ৷

আমি মনে করি, “বিশ্বের সকল কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে একমাত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই এক অসাধ্য সাধন করে গেছেন আর তা হছ্ছে, একমাত্র তিনিই মানব-মানবীর মনের সকল অবস্হার অনুভূতির কথা প্রকাশ করে গেছেন কখনো সাহিত্যের মাধ্যমে, কখনো গানের মাধ্যমে আবার কখনও বা ছবির মাধ্যমে”৷ তাই তো, আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য, প্রশান্তির জন্য আমাদেরকে বার বার ফিরে আসতে হয় রবীন্দ্র-সৃষ্টির মাঝে ৷

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি এই অব্যক্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা শুধু আজকের এই বিশেষ দিনটির জন্য নয় , সবসময়ের জন্য ৷ তাইতো বৈশাখের এই গানটি শুধু নববর্ষকে নিয়ে নয়, এই গানটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসব-২৫শে বৈশাখের জন্যও প্রযোজ্য :

এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো

এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো ৷৷

তাপস-নিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,

তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,

বৎসরের আবর্জনা

দূর হয়ে যাক, যাক, যাক

এসো, এসো

এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো ৷৷

যাক পুরাতন স্মৃতি,

যাক ভুলে যাওয়া গীতি,

যাক পুরাতন স্মৃতি,

যাক ভুলে যাওয়া গীতি,

অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক যাক, যাক

এসো, এসো

এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো ৷৷

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা,

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা,

রসেরো আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,

আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।

মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক, যাক, যাক

এসো, এসো

এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো ৷৷

তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,

বৎসরের আবর্জনা

দূর হয়ে যাক, যাক, যাক

এসো, এসো

এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো ৷৷

তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷

লেখক : ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনষ্টিটিঊট (ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনষ্টিটিউট) , লেখক ও গবেষক ৷

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৩:৪৯ ● ২১৫৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ