বঙ্গ-নিউজ: উত্তর-পশ্চিম চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে উইগুর মুসলমানদের বাস। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যায়, ঈদের দিন সেখানকার মুসলমানরা কাশগরের ঈদগাহ মসজিদের সামনের চত্বর এবং উরুমকির আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড বাজারের মতো জায়গায় হৈ-উল্লাস করছে, নাচছে। তাদের আনন্দ যেন সীমা ছাড়াচ্ছে। চীনের মতো একটি দেশে এমন চিত্র চোখের জন্য, অন্তরের জন্য স্বস্তিদায়ক।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলো পুরোটাই মেকি বা বানানো ছবি। এর পেছেনেও রয়েছে বেশকিছু কারণ। প্রথমত, এভাবে মিউজিকের সাথে নাচার অনুমতি ইসলামে দেয় না। অথচ সরকারের প্রচারিত ভিডিওতে সেটাই দেখা যাচ্ছে। আবার ঈদ উৎসবের ছবি দেখানো হচ্ছে, অথচ মূল অনুষঙ্গ ঈদের নামাজেরই কোনো ছবি দেখানো হচ্ছে না। আর বিগত কয়েক বছর ধরে মুসলমানরা যে পরিমাণ চাপের মুখে রয়েছে তাতে এমনভাবে উৎসব পালন করা দৃষ্টিকটুই বটে।
চীনা সরকার দাবি করে, জিনজিয়াংয়ে ২৪ হাজার মসজিদ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর সংখ্যা ১৫ হাজারেরও কম। অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে এ অঞ্চলের ৩০ শতাংশেরও বেশি মসজিদ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অবিশিষ্ট যা রয়েছে সেগুলোর মধ্যেও মিনার ও গম্বুজের মতো ইসলামিক স্থাপত্য অপসারণের মাধ্যমে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগে শত চাপের মধ্যেও কাশগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঈদগাহ মসজিদটি ঈদের দিন উইঘুর মুসলমানদের মিলনমেলায় পরিণত হতো। কিন্তু ২০১৬ সালে উইঘুরদের ওপর চীনা সরকারের দমন-পীড়ন শুরু করার পর সে চিত্র পাল্টে যায়। শত শত বছর ধরে ঈদগাহকে ঘিরে থাকা আনন্দময় পরিবেশের অবসান ঘটে। এখন ঈদগাহগুলোকে দেখা যায় সশস্ত্র চীনা সৈন্যদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতে। ঈদগাহে মুসলমানদের কোনো পতাকা দেখা যায় না, শুধু দেখা যায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির লাল পতাকা।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশ উইঘুরদের প্রতি চীনের নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা দিলে চীনা কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। পরে নির্যাতনের বিভিন্ন প্রমাণ ফাঁস হলে তারা ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়। চীন সরকার জিনজিয়াংয়ে সুখী উইঘুর জীবনের প্রচারণা চালাতে শুরু করে। ঈদুল ফিতরের দিনে প্রকাশিত চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের ভিডিওটি এ ধরনের অপপ্রচারের অন্যতম উদাহরণ।
কিন্তু বর্তমানে উইঘুরদের বাস্তবতা এমনই যে, ইসলামের চর্চা সেখানে পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং ইসলামিক বিশ্বাসের জন্য জিনজিয়াংয়ের মানুষেরা কারাদণ্ড ভোগ করে। এমন অবস্থায় নাচগানের মাধ্যমে ঈদ উপভোগ করার দৃশ্য আসলেই প্রশ্নের উদ্রেক করে।