৭২বছরের সাহিত্য সাধনায় নাট্যকার জালাল উদ্দিন নলুয়ার পরিবার - বঙ্গনিউজ সম্পাদকীয় সমীক্ষা

Home Page » সাহিত্য » ৭২বছরের সাহিত্য সাধনায় নাট্যকার জালাল উদ্দিন নলুয়ার পরিবার - বঙ্গনিউজ সম্পাদকীয় সমীক্ষা
বুধবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২২


 আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত  ‘জাগো হুয়া সাভেরা’  ছবিতে কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার পিতা লিয়াকত হোসেন কানু মিয়া সরদার

‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ নামে খ্যাত শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদী। যে নদীর কোল ঘেষে নলুয়া এলাকা। ১৯৫০ সালে লেখক মোশাররফ আলীর প্রচেষ্টায় ৭২ নম্বর নলুয়া সড়ক,করিম ভিলায় প্রতিষ্টিত হয় মুকুল ক্লাব।এই বাড়ির মালিক ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কপ্রাপ্ত এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ১৯৫৯ সালে র ছবি ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ চলচ্চিত্রের অভিনেতা লিয়াকত হোসেন কানু মিয়া সরদার।যিনি নারায়নগঞ্জের হংস থিয়েটারে অভিনয় করেন। অভিনয়ে তিনি সিরাজুল হক স্মৃতি পুরস্কার (মরনোত্তর) লাভ করেন। তাঁর মামাত ভাই কবি এম.এ মালেক, ত্রিশ দশকের কবি ‘বাংলার পরিণাম’ কাব্যগ্রন্থের লেখক। কানুমিয়া সরদার বিবাহ করেন সংস্কৃতিবান পরিবারে পুরান ঢাকার বেগমবাজারের আব্দুল গফুর ভূইয়ার মেয়ে কাস্মিরি বেগমকে।১৯৫৬ সালে আব্দুল গফুর ভূইয়া কেরানীগঞ্জের আটি ভাওয়াল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । কাস্মিরি বেগমের ভাতিজাবৃন্দ  দেশের প্রখ্যাত কলামিস্ট ও ছায়ানটের অন্যতম  প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হক, বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সদস্য ও নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নাট্যকর্মী  এনামুল হক, পুরান ঢাকা বেগম বাজারের ৭১ এ উর্দু স্কুল অপারেশনের কারিগর বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক।  এই  সংস্কৃতিবান পরিবারে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়া।  তাঁর দুই ভাই বিশিষ্ট চলচ্চিত্রাভিনেতা মিয়া মোঃ আমানত হোসেন এবং দাবাড়ু খাজা মোঃ শওকত জাকির। বড় বোন আজমেরি বেগম ফাতেমা ৫০ দশকে বাংলাদেশ বেতারে শিশু বিভাগে নিয়মিত কবিতা আবৃত্তি করতেন।নাট্যকার  জালাল উদ্দিন  নলুয়ার পরিবার

কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়া নাটকের অনুশীলন করতেন নিজ বাড়ির নিচতলায়।৬৩ বছর ধরে সাহিত্য সাধনায় নিজে এবং তার পরিবারকে নিয়োজিত করেছেন।বাড়ির নাম রেখেছেন ‘সাহিত্যাংগন’। যেখানে বহু বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক এসেছেন।তাঁর বড় ছেলে প্রকৌশলী মোঃ জাকারিয়া জালাল,একজন গীতিকার এবং কবি,তার বেশ কয়েকটি গান ইতিমধ্যে শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন।মেজো ছেলে কৃষিবিদ মোঃ জান্নাতুল জালাল কবিতা লিখেন,রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘স্বাগতম’ পত্রিকায় এবং একজন সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক।শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিষান থিয়েটারের সাবেক সহ সভাপতি। কনিষ্ঠ পুত্র জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোঃ জাবের বিন জালাল ও কবিতা লিখেন রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত স্বাগতম পত্রিকায়।

১৯৮৬ সালে শীতলক্ষ্যা ছাত্র যুব সংঘে তার পিতা কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার সম্বর্ধনা অনুষ্টানে শিশু শিল্পী জেবউননেছা

বাবার ঐতিহ্যকে ধারন করে ৭২ বছর ধরে সাহিত্য সাধনা করে যাচ্ছেন কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার পরিবার। এই  নিবন্ধ  কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার স্ত্রী লুৎফা জালাল এবং তাঁর একমাত্র কন্যা অধ্যাপক ড. জেবউননেছার সাহিত্যকর্মের  সংক্ষিপ্ত  খতিয়ান। এই সাহিত্যিক পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে  নিম্নে বাংলা একাডেমীর ত্রয়ী সদস্যের সংক্ষিপ্ত জীবনী উপস্থাপন  করা হলোঃ

 নাট্যকার  জালাল উদ্দিন  নলুয়া

মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কবি, নাট্যকার, ছড়াকার মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া নারায়ণগঞ্জ শহরের সাহিত্যপল্লী নলুয়া’য় ১৯৫০ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. লিয়াকত হোসেন ওরফে কানু মিয়া সরদার ঢাকা এডিশনাল থার্ড কোর্টের জোরার এবং‘জাগো হুয়ে সাভেরা’ ছবির অভিনেতা ছিলেন ও মাতার নাম কাশ্মীরি বেগম। তিনি ঢাকার জগন্নাথ  বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে এমএ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ১৯৬৪ সালে তাঁর প্রথম সম্পাদিত সংকলন নলুয়ার স্থানীয় হস্তলিপি সাহিত্য সংকলন প্রথম লেখা ‘হরকরা’য় ‘শতাব্দীর কান্না’ প্রকাশিত হয় । ১৯৬৫ সালে দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন, সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে স্কুল বার্ষিক ম্যাগাজিন এবং ১৯৭৪ সালে একাত্তরে শহিদ দুইবন্ধু স্মরণে, ‘সূর্যসাথী’ সম্পাদনা করেন। ষাটের দশকে নলুয়ায় গড়ে উঠা ‘কচি কাঁচার মেলা’ সংগঠনের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৭ সালে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘নলুয়া মিতালী সাহিত্য সংসদ’। ২৪.১০.১৯৭০ তারিখে প্রতিষ্ঠিত কিশলয় লেখক গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর লেখা প্রথম নাটক ‘অভাগা’ মঞ্চস্থ হয় ০১.১২.১৯৬৭ সালে। রাজধানী ঢাকা এবং সন্দ্বীপে তাঁর লেখা নাটক বিভিন্ন সময়ে মঞ্চস্থ হয়। তিনি ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক প্রথম তত্ত্ব ও তথ্যভিত্তিক নাটক ‘বাংলা আমার বাংলা’ রচনা করেন। এ নাটকটি সম্পর্কে মন্তব্য প্রদান করেছেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। যা পরবর্তীকালে অধ্যাপক ড. জেবউননেছা সম্পাদনা করেন। তাঁর লেখা বিভিন্ন কবিতার সংকলন নিয়ে অধ্যাপক ড. জেবউননেছা ‘বঙ্গবন্ধু,একুশ ও নির্বাচিত কবিতা’ শিরোনামে গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। তাঁর লেখা নাটক ‘জয়নৌকা’ ১৯.১২.১৯৭০ সালে মঞ্চস্থ হয়। ১৮.০৩.১৯৭১ তারিখে তিনি ‘জয়বাংলা’ শিরোনামে নাটিকা লিখেন,যেটি লুৎফা জালাল সম্পাদিত কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার নাট্যগুচ্ছে গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৯.০৩.১৯৭১ সালে ‘জয় বাংলা’ কবিতা লিখেন। ১৯৭১ সালের তাঁর দিনলিপিতে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য নিয়ে অধ্যাপক  ড. জেবউননেছা কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার ‘১৯৭১ এর দিনলিপি’ শিরোনামে গ্রন্থ সম্পাদনা করছেন। যে গ্রন্থে মুখবন্ধ দিয়েছেন বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক আবদুল গাফফার চৌধুরী।
২০২০সালে অনন্যা প্রকাশনী থেকে “কবি ও নাট্যকার জালাল উদ্দিন নলুয়া’র জীবন ও কর্ম” শিরোনামে অধ্যাপক ড. জেবউননেছা একটি গ্রন্থ লিখেন, যার সম্পাদনা করেন অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ১৮টি এবং বেশ কিছু গ্রন্থ যন্ত্রস্থ। তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যে নলুয়া’ প্রকাশ হয় ১৯৭২ সালে। উল্লেখযোগ্য কবিতার বই: পায়রাগুলো পালাচ্ছে, আমার মা, নবীপ্রেম, সাজানো বাগান,নূরানী নূর,লিমেরিক আড়াই ডজন ইত্যাদি। নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- অশ্রু, অভাগা, নয় শুধু অভিনয় ইত্যাদি। প্রবন্ধ- ঐতিহ্যের সিঁড়ি বেয়ে, সাহিত্যে নলুয়া। তিনি ঢাকা সিটি থিয়েটারের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক কমান্ডের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া ও তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তাঁর হাত ধরে বহু কবি এবং লেখক বিকশিত হয়েছে। সত্তুর দশক থেকে তিনি তার নিজগৃহে নিয়মিত ঘরোয়া সাহিত্যসভা আয়োজন করেন। তিনি সাহিত্য ও নাটকে অবদানের জন্য তিনি ২৫ এর অধিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক (২০১৮) এবং চত্বর সাহিত্য স্বর্ণপদক (২০১১) উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা একুশে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় পর পর দুবার প্রবন্ধ এবং একাধিকবার সনদপত্র ও নগদ অর্থ লাভ করেন। তাকে নিয়ে শতাধিক বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক কবিতা লিখেছেন। নয়জন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ৫ জন বিশিষ্ট লেখক ও কবি তাদের গ্রন্থ তাকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর স্ত্রী লুঃফা জালাল একজন কবি ও গীতিকার । তাঁর পুত্র মোঃ জাকারিয়া জালাল একজন প্রকৌশলী,মোঃ জান্নাতুল জালাল একজন কৃষিবিদ,জাবের বিন জালাল একজন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং একমাত্র কন্যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এবং অধ্যাপক ও খ্যাতিমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও লেখক। নারায়ণগঞ্জের সাহিত্যাঙ্গনে তাঁর বাড়ীর নীচতলায় নারায়ণণগঞ্জের লেখকদের দুর্লভ গ্রন্থের সংগ্রহশালা তিনি গড়ে তুলেছেন যা ‘কবি মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়া স্মৃতিকক্ষ’ নামে পরিচিত। তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে প্রতাশিত সাপ্তাহিক চত্বর পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং বাংলা একাডেমির সদস্য । জেলা প্রশাসক,নারায়ণগঞ্জের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য,সাস্কৃতিক মনিষী ও সংস্কৃতিজনদের জীবন ও কর্মকথা’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ বাস্তবায়ন কমিটির একজন সদস্য।

জালাল উদ্দিন  নলুয়ার গ্রন্থ
লুৎফা জালাল   বঙ্গনিউজে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন গীতিকার লুৎফা  জালাল ও অধ্যাপক ড. জেবউননেছা, সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন  অধ্যাপক  লুৎফর রহমান জয়

কবি,ছড়াকার, গীতিকার, ঔপন্যাসিক লুৎফা জালাল ১৯৬০ সালের ২৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জ সদর থানার মদনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা:  মো. সাহাবুদ্দিন চেীধুরী ও মাতা: দৌলতুন্নেছা। স্বামী: ষাট দশকের কবি ও নাট্যকার আলহাজ¦ মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া।
তাঁর প্রথম লেখা কবিতা ‘লোভী’ প্রকাশ হয় ১৯৮৪ সালে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘আগামীকাল’ ম্যাগাজিনে। ১৯৮৫ সালে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্র ‘ঝুমুর’ এর সহকারী সম্পাদক ছিলেন। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৬টি। যথা: অলংকার (কবিতাগুচ্ছ ১৯৯৩), বেলা শেষের তারা ও জীবন থেমে থাকে না (এক মলাটে দুই উপন্যাস ২০১১), জীবনের কথা ও গান (বিচিত্র গানের সমাহার ২০১৬), ভালোবাসার তানপুরা (বিচিত্র গানের সমাহার ২০১৯), জীবন ছন্দময় (তিন শতাধিক মিনি ছড়া ২০২০), মু. জালাল উদ্দিন নলুয়ার নাট্যগুচ্ছ, (সম্পাদিত গ্রন্থ ২০০১) এবং প্রকাশক ‘ঐতিহ্যের সিঁড়ি বেয়ে’ (পুস্তিকা ১৯৮৭)। তাছাড়া, মাই টিভি সাক্ষাৎকার (‘মা আমার মা’ প্রোগ্রামে), বঙ্গ নিউজ (লেখক সাক্ষাৎকার), মনন টিভি ইউটিউব (স্বরচিত ১০টি গান প্রচার), জাবের বিন জালাল (ইউটিউব চ্যানেলে স্বরচিত ৪টি গান ও দুটি কবিতা প্রচার)। ২০১০ সালে ‘দৈনিক ডেসটিনি’তে “সফল এক মায়ের গল্প” নামে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়। ভারতের বর্ধমান বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তানভীর নাসরিন সম্পাদিত ভারতীয় মুসলিম নারীদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত ‘কন্ঠস্বর’ গ্রন্থে তিনি নিয়মিত লিখেন। ড.সৈকত আসগর রচিত ‘নারায়ণগঞ্জহ জেলার লোকসাহিত্য’ গ্রন্থে প্রকাশক হিসেবে তাঁর নাম আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও অনুপম হায়াৎ নারায়ণগঞ্জ জেলার লেখক সাহিত্যিক প্রবন্ধে তাঁর লেখার বিষয়ে আলোচনা  করেছেন। ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত রুহুুল আমিন বাবুল রচিত ‘ছড়ায় বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থে তাঁর ছড়া আলোচিত হয়েছে। ড. শহীদুল্লাহ আনসারী সম্পাদিত ‘একুশ কবি ষোল পংক্তি’ নামক কাব্যগ্রন্থে তাঁর জীবনীসহ একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। দুই বাংলার কবিদের নিয়ে প্রকাশিত ড. সাবিনা ইয়াসমিন সম্পাদিত ‘মুজিব চিরঞ্জীব’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা গান দিয়ে ‘অন্তরে তোরে রাখি’ ক্যাসেট প্রকাশের পথে।
লেখালেখির পাশাপাশি সন্তানদের তিনি যোগ্যরূপে গড়ে তুলেছেন। প্রথমপুত্র- মো. জাকারিয়া জালাল প্রকৌশলী,এবং একজন গীতিকার দ্বিতীয়পুত্র- মো. জান্নাতুল জালাল কৃষিবিদ এবং যাদুশিল্পী , কনিষ্ঠপুত্র- মো. জাবের বিন জালাল,জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, একমাত্র কন্যা- ড. জেবউননেছা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও প্রাবন্ধিক। লুৎফা জালাল পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন।লুৎফা জালালের গ্রন্থ
পুরস্কার ও সম্মাননা: কবি ও গীতিকার হিসেবে তিনি বেশ কিছু সম্মাননা লাভ করেছেন । তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে, এম এ কুদ্দুস সম্মাননা ২০১২, মৃত্তিকা পদক ২০১২, সিলেটের ‘বাসিয়া’ প্রকাশনা কর্তৃক কবি ও গীতিকার সম্মাননা ২০১৮, সিলেটে গাঙচিল সংগঠন কর্তৃক কবি ও ছড়াকার সম্মাননা ২০১৮, দি ইঞ্জিনিয়ার্স রত্নাগর্ভা  মা ২০১৯ লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমি এবং বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য। অধ্যাপক ড. জেবউননেছার হাতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক  শিক্ষা ও চাকরি ক্যাটাগরিতে ঢাকা বিভাগীয় জয়িতা সম্মাননা-২০২০

অধ্যাপক ড. জেবউননেছা

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. জেবউননেছা নারয়ণগঞ্জ জেলার সাহিত্য পল্লী নলুয়ায় ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কবি ও নাট্যকার আলহাজ্ব মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া ও মাতা কবি ও গীতিকার আলহাজ্ব  লুৎফা জালাল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে বি.এস.এস (সম্মান) এবং এম.এস.এস উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ করেন এবং একই বিভাগ থেকে এম.ফিল সম্পন্ন করেন। তিনি ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন এবং ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া পার্লিসে স্কুল অব বিজনেস ইনোভেশন এন্ড টেকনোপ্রোনারশীপে পোষ্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তিনি বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক এবং মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশিত ‘যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির’ আহবায়ক। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যালয়ের ‘যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির’বহিস্থ সদস্য। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ এবং বাংলাপিডিয়ার একজন নিবন্ধক। রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ’ তাঁর গবেষণা অনুসন্ধান থেকে নির্মিত হয়েছে।
১৯৮৯ সালের ৩মার্চ তিনি লেখালেখির জগতে পদার্পন করেন। তাঁর প্রথম লেখা ‘বৃষ্টির ছড়া’ প্রকাশ হয় বঙ্গাব্দ ১৩৯৭ মোতাবেক ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রতিভা বিকাশ সাহিত্য সংকলনে। শিশুশিল্পী হিসেবে ০৮.০৫.১৯৯০ তারিখে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জনপদ পত্রিকার ‘শাপলা দোয়েল’ পাতায় ‘মুক্তো মানিক হীরা’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন এবং ১১.০৮.১৯৯০ তারিখে যাবাবর মিন্টু সম্পাদিত ‘পালক’ সাহিত্যপত্রে প্রকাশিত হয়। শিক্ষাজীবনে তাঁর লেখা ‘জীবন ও জীবিকা’ বাংলাদেশ বেতার,ঢাকার মহানগর ম্যাগাজিনে অর্ধশত প্রতিবেদন প্রচারিত হয় এবং ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকার শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিনিধি এবং কথিকা ছিলেন। লেখক হিসেবে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ১৩টি। যথা- রোদেলা দুপুর (কাব্যগ্রন্থ), লক্ষ্যা থেকে পিয়াসী (ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ), মুক্তিযুদ্ধে নারী (গবেষণাগ্রন্থ), মুক্তিযুদ্ধ: বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টিকোণ ও অভিজ্ঞতা (সম্পাদিত), সুশাসন: বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি তুলনামূলক সমীক্ষা (গবেষণা), আলোকিত নারীদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ (সম্পাদনা), বাংলা আমার বাংলা (সম্পাদিত), বঙ্গবন্ধু, একুশ ও নির্বাচিত কবিতা (সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ), ‘কবি ও নাট্যকার মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া’র জীবন ও কর্ম’, সূর্য সন্তানদের ৭১ এর স্মৃতি ( সম্পাদিত ),সোনালী বাংলাদেশের প্রত্যাশায় (১০০টি প্রবন্ধ সংকলন), পথের নীল ধুলো ( কাব্যগ্রন্থ) , Governance of Bangladesh Energy Regulatory Commission (গবেষণা)। বর্তমানে তিনি বেদনাতুর ১৫  আগষ্ট,১৯৭৫ এবং কবি ও নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার ১৯৭১ সালের দিনলিপি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ থেকে প্রকাশিত আমার ছোটবেলা এবং নূরজাহান বেগম স্মারকগ্রন্থ এবং ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘যাত্রিক’ প্রকাশনার সম্পাদনা পরিষদের সদস্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র মুখপত্র ‘উত্তরন’ পত্রিকার প্রদায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক জার্নালে এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য। বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি   রিসার্চ এথিক্যাল কমিটির একজন সদস্য এবং তার তত্বাবধানে বেশকিছু এমফিল ও পিএইচডি গবেষক কাজ করছেন।  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল স্বর্ণপদক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঢাকা বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ জয়িতা, চত্বর সাহিত্য পদক, এমএ কুদ্দুস শ্রেষ্ঠ শিক্ষয়িত্রী পদক, বিনোদনধারা পারফরম্যান্স এ্যাওয়ার্ড, আমরা কুঁড়ি পদক, বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতিপুরস্কার, অক্ষর সম্মাননা এবং জাতীয় সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা অর্জন করেন। তিনি অষ্ট্রেলিয়ান একাডেমি ফর বিজনেস লিডারশীপের একজন ফেলো সদস্য এবং বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।অধ্যাপক ড. জেবউননেছার গ্রন্থ

তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল এলামনাই এসোসিয়েশন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন এলামনাই এসোসিয়েশন, চয়ন সাহিত্য ক্লাব, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, পেশাজীবী নারী সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মাদকবিরোধী সচেতন ছাত্রসমাজ এবং জেইউ ষ্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব নারায়নগঞ্জের  প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা। একমাত্র সন্তান আসির আনজার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এসএসসি-২০২২ পরীক্ষার্থী এবং একজন গীটার বাদক ও ক্ষুদে লেখক ।আসির আনজার

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩০:২৮ ● ১৩৯০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ