রবিবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২২
হাওরে ছায়ার বাঁধ ভেঙে তিন জেলার ফসল ডুবছে
Home Page » জাতীয় » হাওরে ছায়ার বাঁধ ভেঙে তিন জেলার ফসল ডুবছেবঙ্গ নিউজঃ সুনামগঞ্জের শাল্লার ছায়ার হাওরের মাউতির বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, নেত্রকোনার কালিয়াজুরি, মদন, কিশোগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন উপজেলার হাজারো কৃষকের ফসল ডুবছে।
এ হাওরে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ৪ হাজার ৬৩৭ হেক্টরসহ কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার বোরো জমিও রয়েছে।
শাল্লা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু সমকালকে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এই হাওরে সবচেয়ে বেশি জমি শাল্লা উপজেলার। কিছু জমি কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন ও কিছু জমি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষকদের। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। বাকি অর্ধেক ধান কাটা বাকি আছে। এ অবস্থায় হাওর তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা জানান, রোববার ভোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসি নির্মিত বাঁধটিতে ফাটল দেখা দেয়। পরে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকে। বাঁধ ভাঙার এ দৃশ্য দেখে হাজারো কৃষক তাঁদের অবশিষ্ট জমির ধান কাটতে হাওরে নামেন।
কৃষকরা জানান, অকৃষক কৃপেন্দ্র দাসকে সভাপতি করে ২২ লাখ টাকার এই প্রকল্প দেওয়া হয়। পিআইসি সভাপতি কৃপেন্দ্র সিলেটে অবস্থান করেন। তিনি কৃষকও নন। তাই বাঁধের কাজে নানা দুর্বলতা ছিল। এই দুর্বলতার কারণেই বাঁধ ভেঙে হাওরের কাটার বাকি অবশিষ্ট জমির ধান তলিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন শাল্লা উপজেলা সভাপতি তরুণ কান্তি দাস সমকালকে বলেন,রোববার ভোরে মাউতির বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে। বাঁধ যেভাবে ভেঙেছে, এর আগে এভারে কোনদিন বাঁধ ভাঙেনি। শনিবার সন্ধ্যায়ও কিছু লোক পিআইসির সভাপতি কৃপেন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাসকে বাঁধে বুরুঙ্গার কথা জানান। কিন্তু তারা আমলে নেন নি। রাতে বাঁধও ছিল না এরা।
তিনি আরও বলেন, রোববার ভোরে যখন বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু হয়, তখনও চিৎকার দিলে মাইকে প্রচার দিলে বাঁধ ঠেকানো যেত।
তার মতে, হাওরের ৩০ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কৃষকের ৫০ ভাগ ক্ষতি হবে। কারণ তারা ধান কেটে ক্ষেতেই রেখেছিলেন। এই ধান তুলে আনার সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে হাজারো কৃষককে। দুই দিনে হাওরে গলাসমান পানি হবে। এরপর অসহায় হয়ে যাবেন তারা।
তবে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব দাবি করেন হাওরের ৯০ ভাগ ফসল কাটা শেষ। শনিবার রাত ১১ টায় কালবৈশাখী হচ্ছিল। ওই সময় তদারকিতে কেউ না থাকায় বাঁধ ভেঙেছে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল সুনামগঞ্জের দিরাই ও জগন্নাথপুরের দুটি বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেলার দিরাইয়ের অন্যতম বৃহৎ হাওর বরাম। হাওরপাড়ের চণ্ডিপুর-খেজাউড়ার মাঝামাঝি অংশ দিয়ে কালনী নদীর পাড় উপচে পানি ঢুকে পড়ে। এই হাওরে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি চাষ হয়।
ওইদিন জগন্নাথপুর, ছাতক ও শান্তিগঞ্জের মাঝামাঝি এলাকার ছোট হাওর দাড়াখাইয়ে পানি ঢুকেছে। হাওরের পাশের কুচিয়ার খাল উপচে পানি ঢোকা শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে এই হাওরকে পাঠার হাওর বলা হয়। এই হাওরের বেশিরভাগ ধানই কাটা হয়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, বরাম হাওরের চার হাজারের মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমির ধান বুধবার পর্যন্ত কাটা শেষ। পাঠার হাওরের ২০ হেক্টর জমির মধ্যে বেশিরভাগই কাটা শেষ। দুই হাওরেই এখনো ধান কাটা চলছে।
নদীর পানি ধীরে কমায় অসময়ে নির্মিত হাওররক্ষা বাঁধের বেশিরভাগেই হয় ধস, না হয় চুইয়ে হাওরে পানি ঢোকায় বাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা কমছে না। জমির পাকা ধান কম সময়ে কেটে গোলায় নিতে হচ্ছে, আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন থাকায় ধান শুকাতেও বিলম্ব হচ্ছে। এ অবস্থায় বাঁধের কাজে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত ২১ এপ্রিল সুনামগঞ্জের হাওর পরিদর্শনে গিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, আগাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সুনামগঞ্জে দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বছরের শেষের দিকে নদী খনন ও কজওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। এখন সমীক্ষার কাজ চলছে।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের মানুষের জন্য আমরা একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমরা আশা করছি আগামী নভেম্বর- ডিসেম্বরের দিকে কাজ শুরু করতে পারব। ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি নদী ও এর সঙ্গে যত সংযোগ খাল রয়েছে তা খননের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার সমীক্ষার কাজ চলছে। সমীক্ষার রিপোর্ট আমরা সেপ্টেম্বরের ভেতরে পাব। এরপর একনেকে তুলে প্রকল্পটা পাস করাব।
সূত্রঃ সমকাল
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪২:৩৭ ● ৭৮৪ বার পঠিত