বঙ্গ-নিউজ: পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি দেশটির জাতীয় পরিষদ তথা ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব পার্লামেন্টে নাকচ হওয়ার পরই আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এরপরই পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশটিতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এর আজ রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেশটির পার্লামেন্ট। বিরোধী দলগুলোর আনীত অনাস্থা প্রস্তাব সংবিধানের পরিপন্থী জানিয়ে সেটিকে নাকচ ঘোষণা করেছেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরী। পার্লামেন্টে এ সিদ্ধান্তের পরপরই এক ভাষণে ইমরান খান সবাইকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হবার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্টকে এসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ইমরান খান তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ হওয়ায় পাকিস্তানের নাগরিকদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ডেপুটি স্পিকার আজ রোববার সরকার পরিবর্তন ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের চেষ্টা নস্যাৎ করেছেন। এসেম্বলিগুলো ভেঙে দিতে আমি প্রেসিডেন্টকে চিঠি লিখেছি। কোনো দুর্নীতিবাজ শক্তি এই দেশের ভবিষ্যত নির্ধারক হতে পারে না। এসেম্বলি বিলুপ্ত ঘোষিত হলে নির্বাচন ও তত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, যারা গণতন্ত্র চায়, তাদের উচিত জনগণের কাছে যাওয়া। নির্বাচন হওয়া উচিত, যাতে জনগণই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কাকে সরকার হিসেবে চায়। গত কয়েকদিনে এমপি কেনাবেচায় শত শত কোটি রুপি ব্যয় হয়েছে, সব নষ্ট হয়েছে। যারা এসব অর্থ নিয়েছেন, তারা সেগুলো এতিমখানায় অথবা গরিব জনগণের মাঝে দান করে দিন।
এর আগে দুপুর থেকে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটতে থাকে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে। বিরোধী দলগুলো আকস্মিকভাবে স্পিকার আসাদ কায়সারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করতে আসেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরী।
অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ পর ফ্লোর নিয়ে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী সেদেশের সংবিধানের ৫ ধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যকে সব নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৭ মার্চ আমাদের একজন রাষ্ট্রদূতকে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সভায় ডেকে নিয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে বলে জানানো হয়। এর একদিন পর পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। বিদেশি শক্তির ইশারায় এমন প্রস্তাবের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। আমি স্পিকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানাই।
এরপর ডেপুটি স্পিকার সুরী ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব দাখিলের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, কোনো বিদেশি শক্তিকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটাতে দেওয়া উচিত নয়। বিদেশি শক্তির ইশারায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার যে অভিযোগ মন্ত্রী করেছেন, সেটা সঠিক। অনাস্থা প্রস্তাবটি আইন, সংবিধান ও কার্যবিধির পরিপন্থী মন্তব্য করে তিনি সেটি নাকচ ঘোষণা করেন।
এদিকে, পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট হতে না দেওয়ায় আদালতে যাবার ঘোষণা দিয়েছে। অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ হবার পর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন, প্রস্তাবের উপর ভোট হতে না দিয়ে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। বিরোধী দলগুলো পার্লামেন্ট ছেড়ে যাবে না। বিরোধী দলগুলোর আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলেও তিনি জানান।