বঙ্গ-নিউজ: বেসরকারি ব্যাংক ডাচ-বাংলার ২৩১টি এটিএম বুথ থেকে কৌশলে কোটি কোটি টাকা গায়েব করেছে একটি চক্র। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ভয়াবহ এই লোপাটের সাথে জড়িত ৮ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে র্যাব। কীভাবে তারা এই টাকা চুরি করতো, এবার সেটা দেখা গেছে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজে।
ফুটেজে দেখা যায়, একটি এটিএম বুথের মধ্যে একসাথে চার ব্যাক্তি অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে দুজন দুটি মেশিনের বক্স খোলার চেষ্টা করছেন। অপর দুজনের মধ্যে একজন মাটিতে বসে ব্যাগ থেকে কিছু যন্ত্রপাতি বের করে দিচ্ছিন। বাকিজন তদারকি করছেন।
একটু পর এটিএম মেশিনের বক্স ও নিচের অংশ খুলে ফেললেন একজন। এরপর সেখানে থেকে টাকা বের করলেন।
অপর একটি বুথের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, টি শার্ট ও জিন্স পরা এক ব্যক্তি এটিএম বুথের মধ্যে প্রবেশ করেন। এরপর মেশিনের সামনে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই খুলে ফেলেন লক। এরপর তিনি খোলেন এটিএমের নিচের অংশ। ঠিক তখনই সেখানে হাজির হয় আরও এক ব্যাক্তি। এরপর একজন টাকা বের করছিলেন। অপরজন তদারকি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, টাকা লোপাটের সময় ওই এটিএম বুথের সামনে দিয়ে অনেক মানুষকে হাঁটাচলা করতে দেখা গেছে। সাধারণ পথচারীদের কেউই টের পাননি যে, ভেতরে কী হচ্ছে! আর বুথের ভেতরের কর্মীরাও কিছু বুঝতে পারছিলেন না।
কারণ যাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে তারা বাইরের কেউ নন। ওই ডাচ বাংলা ব্যাংকেরই এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত কর্মচারী।
এই ব্যক্তিরা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথের মেশিনে টাকা লোড করে থাকে। এ জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে, যারা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে দেয়। এছাড়া টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরী সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত থাকত।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, লোডিং ট্রেতে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১ হাজার টাকার নোট অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত। এরপর ক্লাইন্ট উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ওই পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবিনে জমা হত। পরবর্তীতে সেই টাকা তারা সরিয়ে নিত। এই একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা কোটি কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে।
এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ২ শতাধিক এটিএম বুথ মেশিন থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আব্দুর রহমান ও তার চক্রের সদস্যরা। চক্রটির ৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা সকলেই এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য লোডার দলে নিযুক্ত ছিলেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।
আটককৃতরা হলেন- আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২), মো. তারেক আজিজ (২৫), তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান (২৮), মো. রবিউল হাসান (২৭), হাবিবুর রহমান ওরফে ইলিয়াস (৩৬), মো. কামরুল হাসান (৪৩), মো. সুজন মিয়া (৩১), এবং মো. আব্দুল কাদের (৪৩)।