বঙ্গনিউজঃ মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী কো কো হ্ল্যাং দাবি করেছেন, তাঁর দেশ গণহত্যা সনদের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এ কারণে দেশটির ফৌজদারি আইন সংশোধন করে গণহত্যাকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের এই প্রতিনিধি আরও দাবি করেছেন, গাম্বিয়া আদালতের বাইরে আগেই বিশ্ববাসীকে বিশ্বাস করাতে চায় যে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ গণহত্যাকারী এবং সে কারণে শুনানিতে দেশটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির বিষয়ে গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় যুক্তিতর্ক পেশ করার সময় কো কো হ্ল্যাং তাঁর সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি গণহত্যার অভিযোগ শুনানির এখতিয়ার আদালতের নেই এবং গাম্বিয়ার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আরজি জানান। তিনি বলেন, মামলার বিরোধপূর্ণ বিষয়ের সাক্ষ্য–প্রমাণ ও যুক্তি নিয়ে কথা বলার পর্যায় এখন নয়। তিনি গাম্বিয়ার রাজনৈতিক বক্তব্য খণ্ডনে কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানান।
দুপুরের পর আইসিজের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জোয়ান ডনাহিউর সভাপতিত্বে শুনানি শুরু হলে প্রথমে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ক্রিস্টোফার স্টকার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইসিজে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার সময় আদালতের এখতিয়ার ও মামলার গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন নিষ্পত্তি করেছে। ফলে গণহত্যার মামলার ক্ষেত্রে এখতিয়ারের বিষয়ে আপত্তি করা যাবে না বলে গাম্বিয়া যে দাবি করেছে, তা সঠিক নয়।
অধ্যাপক স্টকার বলেন, আদালতের এখতিয়ার প্রতিষ্ঠা না পেলে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা লাভের আর কোনো পথ থাকবে না, গাম্বিয়ার এমন দাবি আদালতের এখতিয়ারবিষয়ক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
গাম্বিয়া স্বাধীনভাবে মামলার উদ্যোগ নিয়েছে এবং মামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, এই দাবির জবাবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওআইসি ও তার সদস্যদেশগুলোর বিভিন্ন বিবৃতি, গণমাধ্যমের খবর ও টুইটে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। স্টকার বলেন, প্রথমে ওআইসি প্রস্তাব করেছে, সংস্থাটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তা অনুমোদন করেছেন, পরে ওআইসির কমিটি আবেদনকারী হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গাম্বিয়াকে আবেদনকারী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তারপরই গাম্বিয়া মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃতীয় কারও প্রতিনিধি হিসেবে মামলা করার সুযোগ আইনে নেই বলেও তিনি যুক্তি দেন।
নিজেদের কোনো নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় আন্তর্জাতিক দায়িত্ববোধ থেকে মামলা করার যে অধিকার গাম্বিয়া দাবি করেছে, সে প্রসঙ্গে মিয়ানমারের পক্ষে আরেকজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্টেফান ট্যালম্যান বলেন, আইনে সেই সুযোগ নেই। গণহত্যা সনদে আদালতকে সেই এখতিয়ার দেওয়া হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
আদালতের এখতিয়ার ও ভূমিকার আইনগত ব্যাখ্যা নিয়ে আরও যুক্তি পেশ করেন ইউনিভার্সিটি অব জেনেভার আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক রবার্ট ক্লব। ২১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির ওপর শুনানি শুরু হয় এবং সেদিন মিয়ানমার তার পক্ষে প্রথম দফায় যুক্তিগুলো তুলে ধরে। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি গাম্বিয়া মিয়ানমারের আপত্তিগুলোর জবাব দেয়। গাম্বিয়া দাবি করে, দুই বছর আগেই আদালত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার অন্তর্বর্তী আদেশ জারির সময় আদালতের এখতিয়ার এবং গাম্বিয়ার মামলা করার অধিকারের প্রশ্নগুলো নিষ্পত্তি করেছেন। এ কারণে মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তি দ্রুত নাকচ করা উচিত। গাম্বিয়া দাবি করে, মিয়ানমার মূলত সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছে। আগামী সোমবার বিকেলে গাম্বিয়া আদালতে দ্বিতীয় দফায় তার যুক্তি পেশ করার সুযোগ পাবে।