(খ) শহীদও আহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করাও ছিল বঙ্গবন্ধুর সামনে অন্যতম গুরু দায়িত্ব; মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দালালদের আটক করে বিচারের সম্মুখীন করা;
(গ) পাকিস্তানে আটক প্রায় ৪ লক্ষ বাঙালিকে ফিরিয়ে আনা;
(ঘ) বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় সোয়া লক্ষ ভারতীয় সৈন্যকে ভারতে ফেরত পাঠানা ;
(ঙ) স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি লাভ করা ;
(চ) জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ অর্জন করা ;
(ছ) যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান লাভ করা ;
(জ) বিরােধী রাজনীতিকে মােকাবিলা করা । সেসময় সর্বহারা পার্টি ও জাসদের সরকার বিরােধী কার্যকলাপ নতুন সরকারের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছিল।
(ঝ) সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ করা ;
(ঞ) আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে মূল্যবৃদ্ধিজনিত প্রভাব, বাংলাদেশকে ঘিরে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনাশের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি মােকাবিলা করা। এসব বঙ্গবন্ধুর সরকারের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।
(ট) সর্বোপরি, দেশের জনগণের আকাশচুম্বী আশা-আকাক্ষার বাস্তবায়ন করা, ঐতিহাসিক ১১ দফায় উল্লেখিত দাবিগুলো—যেমন, ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ, ব্যাংক-বীমা, পাট ব্যবসা ও বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ করা, কৃষকদের উপর থেকে খাজনা হ্রাস করা, বকেয়া খাজনা মওকুফ করা, ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা। বঙ্গবন্ধুর সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনের কঠিন চ্যালেঞ্জ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রশাসনিক নীতি ও পরিকল্পনার ভিত্তি এবং পূর্ব প্রস্তুতি বিশ্লেষন করে গবেষকগণ বলে থাকেন যে, “বঙ্গবন্ধু সুদীর্ঘকাল আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না” । বঙ্গবন্ধু সরকারের এইরকম নানা-সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও নিম্নে বঙ্গবন্ধু সরকারের আরো বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো :
১. মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন : মুক্তি বাহিনীর জওয়ানদের কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গবন্ধু ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী, মিলিশিয়া, রিজার্ভ বাহিনী সংগঠনের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিত্সা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া দেশ গড়ার বিভিন্ন কাজে যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান করেন।
২. ত্রাণ কার্যক্রম : রিলিফ ও পুনর্বাসনের জন্য বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে মঞ্জুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
৩. মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ : মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহূত অস্ত্র নিজেদের কাছে না রেখে তা ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সমর্পণের আহ্বান জানান। এতে সব মুক্তিযোদ্ধা সাড়া দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন।
৪. স্বাধীন বাংলার প্রশাসনিক পদক্ষেপ : ঢাকা মুক্ত হওয়ার পর একটা প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করছিল রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। নিরাপত্তার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু প্রত্যাবর্তনের পর প্রশাসনকে কর্মোপযোগী করে তোলেন।
৫.ভারতীয় বাহিনীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১২ মার্চ ১৯৭২ ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন করে।
৬.১৯৭২ সালের সংবিধান : ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তারই আদর্শ হিসেবে রচিত হলো রক্তে লেখা এক সংবিধান ৪ নভেম্বর ১৯৭২।
৭. সাধারণ নির্বাচন : ১৯৭৩ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
৮. প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা : বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পর দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের জনগণের দ্রারিদ্র্য দূরীকরণ তথা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে জাতির জনক প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
এই পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো ছিল—
ক. মূল লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ। এ জন্য যারা কর্মহীন বা আংশিক কর্মহীন তাদের সবার কর্মসংস্থানের আয়োজন প্রয়োজন। তা ছাড়া জাতীয় আয় বৃদ্ধির সঙ্গে এই আয় বণ্টনের জন্য যথাযথ আর্থিক ও মুদ্রানীতি প্রণয়ন ত্বরান্বিত হওয়া প্রয়োজন।
খ. জনগণের অত্যাবশ্যক পণ্যের চাহিদা যাতে মেটে সে জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর (খাদ্যদ্রব্য, পোশাক, ভোজ্য তেল, কেরোসিন ও চিনি) উত্পাদন বাড়াতে হবে।
গ. কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগতকাঠামোতে এমনভাবে রূপান্তর সাধন প্রয়োজন, যাতে খাদ্যশস্যের উত্পাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়, কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে এবং শ্রমশক্তির শহরমুখী অভিবাসন বন্ধ হয়।
৯. পররাষ্ট্রনীতি : বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরী মনোভাব নয়। ’ প্রথম তিন মাসের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ ৬৩টি দেশের স্বীকৃতি লাভ। ৩ মাস ২১ দিনের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় দুই বছর দুই মাসের মধ্যে। সর্বমোট ১২১টি দেশ স্বীকৃতি প্রদান করে।
১০.ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন : ইসলামের যথার্থ শিক্ষা ও মর্মবাণী সঠিকভাবে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচার-প্রসারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইসলাম আদর্শের যথাযথ প্রকাশ তথা ইসলামের উদার মানবতাবাদী চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ছিল জাতির জনকের সুদূরপ্রসারী চিন্তার এক অমিত সম্ভাবনাময় ফসল।
১১. যুদ্ধাপরাধীর বিচার : বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ‘বাংলাদেশ কোলাবরেটরস স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল অর্ডার’ জারি করে।
১২. হজে প্রেরণ : ১৯৭২ সালে সৌদি আরবে মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে ছয় সহস্রাধিক বাংলাদেশি মুসলমানকে হজ পালনে প্রেরণ করা হয়।
১৩.বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি : ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পাদিত হয় ‘২৫ বছরমেয়াদি’ বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীচুক্তি।
১৪.শিক্ষা কমিশন গঠন : কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন।
১৫.যমুনা সেতু : ১৯৭৩ সালের ১৮-২৪ অক্টোবর জাপান সফরকালে জাপানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণের সূচনা করেন।
১৬.বিভিন্ন সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ : জাতিসংঘের বেশির ভাগ সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সদস্যপদ গ্রহণ।
১৭.বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুনর্গঠন : স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
১৮.বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ : ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ১৩৬তম সদস্যপদ লাভ ও ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ প্রদান।
১৯.প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৪-২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক ও শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন।
২০.ঐতিহাসিক কিছু পদক্ষেপ : ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, পাঁচ হাজার টাকার ওপরে কৃষিঋণ মওকুফকরণ এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে এনে সামাজিক অর্থে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমি মালিকানার সিলিং পুনর্নির্ধারণ ছিল ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
২১.স্বাস্থ্যব্যবস্থা : বঙ্গবন্ধু সরকার নগর ভিত্তিক ও গ্রামীণজীবনের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৫০০ ডাক্তারকে গ্রামে নিয়োগ করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আইজিএমআর শাহবাগ হোটেলে স্থানান্তর হয়। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে থানা স্বাস্থ্য প্রকল্প গ্রহণ বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আজও স্বীকৃত।
২২.বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি : ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশকে শিল্প-সংস্কৃতিবদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠন এবং বাঙালির হাজার বছরের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ধরে রেখে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশি শিল্পকলা একাডেমি গঠন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
২৩.বৈদেশিক বাণিজ্য শুরু : শূন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারকে শুরু করতে হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য। এ ছাড়া জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ, ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে বঙ্গবন্ধু তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বের ছাপ রাখতে সমর্থ হন। পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা রোধ এবং বিশ্বশান্তির প্রতি ছিল তাঁর দৃঢ় সমর্থন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে বিশ্বশান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে প্রদান করে ‘জুলিওকুরি’ শান্তিপদক।
২৪.চার ধরনের অপরাধীর বিচার : পরবর্তীকালে একই বছরে এই আইন দুই দফা সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীতেও চার ধরনের অপরাধীকে ক্ষমা করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে নেই, তাদের ক্ষমা করা হয়। কিন্তু যারা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যা—এই চারটি অপরাধ করেছে, তাদের ক্ষমা করা হয়নি। ১৯৭৩ সালে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৭ হাজার ৪৭১ জনকে দালাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে অক্টোবর পর্যন্ত দুই হাজার ৮১৮টি মামলার সিদ্ধান্ত হয়। এতে একজনের মৃত্যুদণ্ডসহ ৭৫২ দালাল দণ্ডিত হয়। তত্কালীন সরকার আইনগত ব্যবস্থা ত্বরিত করার জন্য ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে হাজার হাজার লোক আটক থাকে।
উপরন্তু বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট’ জারি করেন, যা পরবর্তী সময়ে আইন হিসেবে সংবিধানে সংযোজিত হয় এবং অদ্যাবধি তা বহাল রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৮ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সংবিধানের ৬৬ ও ১২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীদের (যারা ধর্মকে নানা অপকর্মে ব্যবহার করে) ভোটাধিকার ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার বাতিল করা হয়েছিল।
২৫.দুর্নীতির বিরদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা : ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে জাতির ভবিষ্যত্ তমিস্রায় ছেয়ে যাবে। দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোরাচালানি, মজুদদারি, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু বলে আখ্যায়িত করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এদের শায়েস্তা করে জাতীয় জীবনকে কলুষমুক্ত করতে না পারলে আওয়ামী লীগের দুই যুগের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানের গৌরবও ম্লান হয়ে যেতে পারে।
সুতরাং বলা যেতে পারে, নতুন সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের সময় সরকারের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নীতি কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পূর্ব পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধুর ছিল না। অর্থাৎ তার আজন্মলালিত সোনার বাংলা গঠনের জন্য, কিংবা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন করে দেশবাসীর আকাশচুম্বী আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তিনি কি ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনুসরণ করবেন, কিভাবে তিনি কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক সংস্কার সাধন করবেন সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব কোন কর্মপরিকল্পনা, কিংবা তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কোন ম্যানিফেস্টো ছিল না বলে তখনকার প্রতিপক্ষরা অপপ্রচার করেন । যেমন বলা হয়ে থাকে যে, বঙ্গবন্ধুর সরকার যে ব্যাপক জাতীয়করণ নীতি অবলম্বন করেন তা তিনি করেছিলেন বামপন্থীদের চাপে কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবে।(চলবে) ৷
তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক : ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক ৷