Virtual group মনের জানালার প্রতিষ্ঠাতা এডমিন শারমিন জাহানের কথা - জেসমিন মারিয়া

Home Page » বিনোদন » Virtual group মনের জানালার প্রতিষ্ঠাতা এডমিন শারমিন জাহানের কথা - জেসমিন মারিয়া
রবিবার ● ৩০ জানুয়ারী ২০২২


শারমিন জাহান
শারমিন জাহান তার ক্যারিশমেটিক ব্যক্তিত্বে “মনের জানালা”  ভার্চুয়াল গ্রুপটি  শুরু করেন ।  এখন প্রতিষ্ঠা করে তুলেছেন । তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বন্ধুদের সাথে করে বিগত সময় গুলোতে।  বঙ্গনিউজের  বিশেষ প্রতিনিধি জেসমিন মারিয়া, তার সঙ্গে  কথা বলেছেন।   তার এই পথচলার ছোটখাটো স্মৃতিনিয়ে এই পর্বঃ

জেসমিন মারিয়াঃ  মনের জানালার শুরুটা হয়েছিল কিভাবে?

শারমিন জাহানঃ   ২০২০ এর প্যানডেমিকের সময় আমাদের জীবন কাটছিল গৃহবন্দি হয়ে। আবদ্ধ সময়গুলো যেন শিকল পড়িয়ে রাখতে চাইছিল আমাদের মন ও মনন কিন্তু মনতো মানে না কোন বাঁধা। সে ছুটে চলে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে! কোথাও যে তার হারিয়ে যাবার নেই মানা! তাইতো ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ হলেও মনের জানালা খুলে দেই ২৯শে এপ্রিল ২০২০ সালে।

জেসমিন মারিয়াঃ প্রাথমিকভাবে এরকম একটি গ্রুপ খোলার জন্য ঠিক কী কী বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হয়?

শারমিন জাহানঃ ভার্চুয়াল শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক সোশিও-কালচারাল গ্রুপের সাথে জড়িত হওয়া মানে হচ্ছে অনেকটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো। খোলা চোখে এবং সাদা মনে দেখতে গেলে এই ধরনের গ্রুপের পরিচালকবৃন্দদের যথেষ্ট ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে নামতে হবে! এই ত্যাগ বলতে বোঝায় দিনের কিছুটা সময় গ্রুপকে দেয়া এবং কোন কিছুর প্রত্যাশা না করে ভালোবেসে কাজ করে যাওয়া। সর্বোপরি এই কাজকে মানুষের সেবা বলে মনে করা। ধৈর্য রাখতে হবে, মানুষকে সম্মান ও ভালোবাসতে হবে, সেই সাথে কমিউনিকেশন স্কিল একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

জেসমিন মারিয়াঃ ব্যক্তি শারমিন জাহানের সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে চাই…

শারমিন জাহানঃ নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে বেশ অস্বস্তি লাগে। পর্দার পেছনে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি বেশি। তবু প্রিয় কবি, সাংবাদিক ইরা জেনিথ আপুর প্রশ্নের উত্তরে বলব, আমার জন্ম বেড়ে ওঠা ঢাকায়। দাদার বাড়ি বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর জেলায় ও নানা বাড়ি নরসিংদীতে। পড়াশোনা করেছি ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজে। এরপর ব্যাচেলর করি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ এবং মাস্টার্স করি টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে। সবগুলো পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ন হয়েছি। কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা BRAC এর ইন্দোনেশিয়া, সুদান ও শ্রীলংকার কান্ট্রি আইটি হেড হিসেবে কাজ করেছি দীর্ঘ সময়। এছাড়াও গভঃমেন্টের এডুকেশন প্রোগ্রামে কাজ করেছি দেশের বাইরে আসার আগ পর্যন্ত। গত অর্ধ দশক যাবত শিল্প-সাহিত্য, ফ্যাশনের তীর্থস্থান ও ভালোবাসার শহর প্যারিসে বসবাস করছি সপরিবারে এবং একটি বহুজাতিক টেলিকম কোম্পানিতে কর্মরত আছি নেটওয়ার্ক ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। মূলত ফ্রান্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টে মোবাইল অপারেটরদের জন্য ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক ডেভলপের কাজ করি।

জেসমিন মারিয়াঃ শারমিনের মেয়েবেলা সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম তার বেড়ে ওঠা তার শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের দিনগুলি…

শারমিন জাহানঃ ছোটবেলা থেকেই শান্ত’ স্বভাবের ছিলাম। আম্মা বলেন ছোট বেলায় নাকি বেশ ফুটফুটে ছিলাম তার ওপর বাড়ির ছোট মেয়ে তাই হয়তো আদর ভালোবাসা একটু বেশিই পেতাম। ছোটবেলার দিন গুলো ছিল নির্মল আনন্দে ভরপুর। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ঢাকার হাতিরঝিলে অবস্হিত নানা বাড়িতে ছিলাম। নানাবাড়ির ভিতর ও বাহির বাড়ির উঠানে, বিশাল ছাদে,পাড়ায় সব ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব মিলে হইচই আর চড়ুইভাতির রঙিন দিন গুলোর কোন তুলনা হয় না। চলে যেতাম বাড়ির পেছনে হাতিরঝিলে,পাল তোলা পানসি নাও দেখতে। নদীর উদাস হাওয়ায় আর বেগুনি রঙের কচুড়িপানা ফুলে শৈশবের সুকুমার দিনগুলো কেটেছে রঙিন প্রজাপতি হয়ে। ছিলাম বিশিষ্ট পাড়া বেড়ানি। তারপর আব্বা স্থায়ী নিবাস গড়েন ঢাকার খিলগাঁও এলাকায়। সেখান থেকেই স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভারসিটি জীবন শুরু হয়। শৈশব থেকেই ছবি আঁকা,গান,লেখালেখির সাথে পথ চলা শুরু। কিছু দিন গান শিখেছিলাম আব্বাসউদ্দীন একাডেমিতে। ছবি আঁকা শিখেছি শিশু একাডেমীতে। ছবি আঁকার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার পাই ইউনিসেফ, ইরান এবং দেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে। UNICEF আমার আঁকা ছবির বই তিনটি ভাষায় প্রকাশ করে। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রণবির কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার পাওয়া ছিল একটি সুখের স্মৃতি। সে সময় বিটিভিতে এবং স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সঙ্গীত, লেখালেখি, ছবি আঁকায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম। দেশে-বিদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বল্পসংখ্যক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার সুযোগ ঘটেছিল। আমার সৌভাগ্য যে অনেক নাটক, চলচ্চিত্র এবং বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছি স্কুল জীবন থেকেই, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও প্রস্তাব আসতো। কিন্তু পড়াশোনা ও পারিবারিক রক্ষণশীলতার কারণে পছন্দের বিষয় হওয়া সত্ত্বেও বিনয়ের সাথে সেই সমস্ত প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হতো।

জেসমিন মারিয়াঃ শারমিন এখন আছেন প্যারিসে তার প্যারিসের দিনগুলি কেমন কাটছে আমি জানতে চাইছিলাম তারই কাছে

শারমিন জাহানঃ  বেশ বিজি দিন কাটে প্যারিসে। প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে প্রাত্যহিক দিন গুলো শুরু হয়। তারপর কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা, সংসার ধর্ম পালন করার পাশাপাশি প্রিয় সংগঠন মনের জানালায় সময় দেয়া। এভাবেই চলে যায় দিন গুলো। তবে ভ্রমন আমার খুব প্রিয়। আর প্যারিস ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্হান। সেইন নদীর পাড়ে অবস্থিত প্যারিস ভীষণ সুন্দর একটি শহর। পরিষ্কার, গোছানো, ছিমছাম এবং প্রাচীন ঐতিহ্যে ভরপুর। রেঁনেসা যুগের বিভিন্ন স্হাপনা,প্রাসাদ,ইমারত, ভাস্কর্য, চার্চ, মনুমেন্ট, আইফেল টাওয়ার সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। ইউরোপীয়রা পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভালোবাসে আর ভালোবাসে ফুল। আমারও খুব ভালো লাগে তাদের এই প্রবনতা। পাথুরে ইমারতে হাত দিয়ে শুনতে পাই যেন প্রাচীন অর্শারোহীর হুঙ্কার। ছুটির দিন গুলোতে তাই সুযোগ পেলে চলে যাই প্যারিস দর্শনে।

জেসমিন মারিয়াঃ শারমিনের জীবনের মধুর স্মৃতি গুলি যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন

শারমিন জাহানঃ মধুর স্মৃতি অনেক আছে, বলে শেষ করার মত নয়। তবে কেউ জিজ্ঞেস করলে যে স্মৃতির কথা সবার প্রথমে মনে আসে সেটাই শেয়ার করি প্রিয় পাঠকদের সাথে। সারা জীবন পড়াশোনা কম করেছি। তবে স্রষ্টার অসীম কৃপায় কেমনে কেমনে যেন উৎরে গেছি। এই কারণে আম্মা প্রচন্ড টেনশন করতেন আমাকে নিয়ে। সেবার সামনে এসএসসি পরীক্ষা। যথারিতী পড়াশোনা করিনা। আম্মার প্রবল চাপের কারণে মাত্র দেড় মাস পড়াশোনা করতে বাধ্য হলাম। রেজাল্ট নিয়ে সবাই আতঙ্কে ছিল। দেখা গেল বেশ ভালো একটা রেজাল্ট হয়ে গেছে! পল্লীমা সংসদ বলে ঐতিহ্যবাহী সংস্হাটি আমাকে সহ কয়েকজনকে সংবর্ধনা প্রদান করলো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সেই রেজাল্টের পর আম্মার হাসি মুখটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি হয়ে আছে।

২০১৮ সালে নিউজার্সিতে অনুষ্ঠিত বাঙ্গালীদের আন্তর্জাতিক মিলন মেলা “বেঙ্গল সম্মেলনে” আবৃত্তির জন্য নিমন্ত্রণ পাওয়া আরেকটি মধুর স্মৃতি হয়ে আছে।

সম্প্রতি আরেকটি চমৎকার ঘটনা সুন্দর স্মৃতির লিস্টে স্থান করে নিয়েছে। সম্প্রতি মনের জানালায় বিজয় উৎসব প্রতিযোগিতা 2020 এর ভারতীয় বিজয়ী প্রতিযোগীদের পুরস্কার স্বহস্তে ভারতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মনের জানালার গুণী সদস্য আহসানুল আজাদের মাধ্যমে আমরা ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট গুলো পাঠিয়ে দেই ভারতে এবং সেখানে দুটি চমৎকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কার গুলো তুলে দেওয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। এই সুন্দর আয়োজনটি দুই বাংলাকে এক সুতোয় বেঁধে ছিল, এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। লাইভের মাধ্যমে সেই অনুষ্ঠান আমরা সবাই উপভোগ করেছি, সকলের তৃপ্ত হাঁসি মুখ দেখে মন ভরে গিয়েছিল।

জেসমিন মারিয়াঃ এমন কোন স্মৃতি যা এখনো ভুলতে পারেননি

শারমিন জাহানঃ আমার আব্বা ২০০৭ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে। একদম শেষ সময়ে ধরা পড়ে লিভার সিরোসিস তখন আর কিছু করার থাকে না! সুখে দুঃখে প্রতিনিয়ত মনে করি উনাকে। উনার শূন্যতা, উনার প্রতিটি স্মৃতি হৃদয়ে গভীর দাগ কেটে আছে যা সন্তান হিসেবে ভুলবার নয়।

জেসমিন মারিয়াঃ মনের জানালা নিয়ে তার আগামীর ভাবনা গুলো যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন

শারমিন জাহানঃ  মনের জানালা যেন প্রকৃত অর্থে আপামর জনসাধারণের মনের জানালা হয়ে উঠে এটাই কাম্য। মানুষের কল্যাণে কিছু সামাজিক কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে সবাইকে নিয়ে, প্রকৃত মেধা বিকাশে, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চায় ও মানুষে মানুষে ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে মনের জানালা যেন ভূমিকা রাখতে পারে সেটাই প্রত্যাশা।

জেসমিন মারিয়াঃতার লেখালেখির জীবন সম্পর্কে যদি তিনি আমাদেরকে কিছুটা জানাতেন

শারমিন জাহানঃ লেখালেখিটা শুরু হয় পারিবারিক আবহের কারণেই। আব্বা, আম্মা, ভাই, বোন,খালা,মামা সবার কমবেশি লেখালিখির দক্ষতা ছিল। আব্বার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতো ওয়ার্ল্ড ব্যাংক জার্নালে,অবজারভার, ডেইলি স্টার সহ দেশের বিভিন্ন শীর্ষ স্থানীয় পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে। এছাড়া BIBM (Bangladesh Institute of Bank Management) উনার লেখা দুটো বই ব্যাংকারদের জন্য পাঠ্য ছিল। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আব্বা একজন দক্ষ ইকোনোমিস্ট হিসেবে বক্তব্য দিতেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন ন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা আয়োজিত সেমিনারে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। আসলে আমার কথা বলতে গেলে আব্বার কথা চলে আসে। আর আমার জীবনের আদর্শ মানুষ হিসেবে যাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি তারা হলেন আব্বা এবং আম্মা। উনাদেরকে দেখেই শিখেছি অনেক কিছু। আব্বা এখন বেঁচে নেই তবু তাঁর আদর্শ ফলো করার চেষ্টা করি।

আমার ছোট খালা সৈয়দা নাজমুন নাহার আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত দেশের একজন স্বনামধন্য লেখক ও প্রাবন্ধিক। উনার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় একশর কাছাকাছি। উনাদের দেখেই হয়তোবা লেখার পোকা শৈশবে মাথায় ঢুকে যায়। প্রথম কবিতা লিখি ক্লাস টুতে। তবে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় দৈনিক জনকন্ঠে ক্লাস সিক্সে পড়াকালীন সময়ে। এরপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে, স্কুল ম্যাগাজিন, দেয়াল পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি চলতো। পড়াশোনার জন্য বেশ কিছুটা বিরতি দিয়ে লেখালেখির জগতে আবার ফিরে আসি ২০০৬ এ একজন ব্লগার হিসেবে। ২০০৬-১১ পর্যন্ত সামহোয়ারইনব্লগে ব্লগিং করেছি। আমার প্রথম বই “সুস্বাস্থ্য রূপচর্চায় হারবাল” প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে. ওই বছরই প্রকাশিত হয় আরো দুটো শিশুতোষ বই, রূপকথার রাজ্যে এবং ঠাকুরমার ঝুলি! ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় গবেষণাধর্মী চতুর্থ বই “ধর্মীয় কুসংস্কার, নারী জাগরণ ও তসলিমা নাসরিন”‌। এছাড়াও বিভিন্ন সংকলনে লেখা বেরিয়েছে। আমার সৌভাগ্য যে বাংলাদেশের লেখক অভিধানে আমার নাম পরিচয় লিপিবদ্ধ আছে।

জেসমিন মারিয়াঃ জানতে চাইছি তার বাবা-মা বন্ধু এবং আত্মীয় পরিজন সম্পর্কে কিছুটা

শারমিন জাহানঃ আমার বাবা মরহুম এ এফ এম শামসুল হুদা পেশায় একজন উচ্চ পদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। মা সৈয়দা জাহানারা বেগম একজন হোম মেকার। আব্বা আম্মা দুজনেই খুব মেধাবী মানুষ ছিলেন। আব্বা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষ করে জার্মানির মিউনিখে ব্যাংকিং এর উপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। আর আম্মা জীবনে ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হন নাই। আমাদের কথা ভেবে তিনি চাকরিতে নিয়োগ পত্র পেয়েও জয়েন করেন নাই। আমরা দু’ভাই দু’বোন। বড় ভাই কামরুল হুদা পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, সিডনিতে পরিবারসহ বসবাস করছেন, বড় বোন শাহেদারা জাহান শিলু পেশায় চিকিৎসক নিউইয়র্কে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, ইমিডিয়েট বড় ভাই মোঃ নাজমুল হুদা পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তিনি ঢাকায় নিজ পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন এবং স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। আত্মীয়-স্বজনের কথা জানতে চাওয়া হয়েছে। তাই দু একজনের কথা না বললেই নয়! আমি গর্বিত যে ৯০এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ডাক্তার মিলন আমার কাজিন। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ উপদেষ্টা বিচারপতি রুহুল আমিন সম্পর্কে আমার দাদা হন।

জেসমিন মারিয়াঃ প্রিয় রং
শারমিন জাহানঃ  যেহেতু আমি ছবি আঁকার সাথে সম্পৃক্ত তাই রঙ আমার প্রবল আকর্ষণের বিষয়। সাদা, নীল, সবুজ, মেজেন্টা,পার্পেল ভীষণ পছন্দের রং।

জেসমিন মারিয়াঃ প্রিয় হলিডে ডেস্টিনেশন ?

শারমিন জাহানঃ আমি ঘুরতে পছন্দ করি তাই ফেভারিট ডেস্টিনেশনের লিস্ট বেশ লম্বা। ফ্রান্সের নিস,কান,মার্সেই,নরমেন্ডি, সেন্ট ট্রপেজ দারুন ভালো লাগার জায়গা। এছাড়া মোনাকো, সুইজারল্যান্ড, সিডনি, নিউইয়র্কের নায়েগ্রা ফলস, কোলকাতা খুব পছন্দের জায়গা। ঢাকা আর প্যারিসতো মিশে আছে জীবনের সাথে।

জেসমিন মারিয়াঃ পাহাড়, সমুদ্র ,  জঙ্গল তার প্রিয় কোনটি ?

শারমিন জাহানঃ  নিঃসন্দেহে সমুদ্র অনেক আকর্ষণের জায়গা। তবে পাহাড় প্রবল রহস্যময় সৌন্দর্য ছড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকে আমায়।

জেসমিন মারিয়াঃ তরুণ প্রজন্মের জন্য মনের জানালায় আগামীর ভাবনা যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন।

শারমিন জাহানঃ বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচিত করা মনের জানালার অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই সাথে দেশপ্রেমের চেতনায় জাগ্রত করা এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি সংস্কৃতিকে পরিচয় করানো। তাছাড়া সাধ্যমতো জনকল্যাণমূলক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। নতুন পুরাতন সবার মাঝে এই মেসেজটা দিতে চাই ভালোবাসা এবং সম্মান দিয়ে সবকিছু জয় করা সম্ভব।

জেসমিন মারিয়াঃ প্রিয় ব্যক্তিত্ব ?

শারমিন জাহানঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ, আসাদুজ্জামান নূর, জাস্টিন ট্রুডো।

জেসমিন মারিয়াঃ প্রিয় মানুষ ?

মা, বাবা, হাজব্যান্ড, বড়বোন

জেসমিন মারিয়াঃ প্রিয়জন সম্পর্কে যদি তিনি বলতেন

শারমিন জাহানঃ  আমার আম্মা আমার সবচেয়ে প্রিয় জন। এখনো উনার স্নেহের ছায়ায় আগলে রেখেছেন। তিনি অত্যন্ত উদার এবং কোমল মনের মানুষ। উনি আমার জীবনে কতটুকু তা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না।

জেসমিন মারিয়াঃ  প্রিয় মানুষের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন

শারমিন জাহানঃ আম্মার সাথে অসংখ্য প্রিয় মুহুর্ত বা স্মৃতি রয়েছে,বলে শেষ করা যাবে না। আমরা মা মেয়ে একসাথে প্রায়ই কোলকাতা বেড়াতে যেতাম,শপিং করতাম। এছাড়া একসাথে সিডনি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স বেড়িয়েছি। খুব ভালো লেগেছিল সেই সময় গুলো। দেশে থাকাকালীন বাসায় ফিরে দেখতাম আম্মা আমার পছন্দের খাবার রান্না করে রেখেছেন,জানিনা তিনি কিভাবে বুঝতেন আমার ঐ খাবারটাই খেতে ইচ্ছে করছিল। ছোটবেলা থেকে মুখে তুলে খাওয়াতেন, পড়াতেন। এখনো সুদূর ফ্রান্সে বাংলাদেশ থেকে খাবার-দাবার সহ বিভিন্ন উপহার পাঠিয়ে আমাকে ভালোলাগায় স্নেহে জড়িয়ে রাখেন।

জেসমিন মারিয়াঃ আপনার সবচেয়ে প্রিয় হবি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন

শারমিন জাহানঃ প্রথমত আমি ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসি, বিভিন্ন দেশের কৃষ্টি কালচার কুটির শিল্প জানার বিষয়ে আমার ভীষন অগ্রহ, রং আমাকে প্রবলভাবে টানে তাই ছবি আঁকা আমার প্রিয় কাজ এবং পোশাকে, ঘরে, যেকোন ডেকোরেশনে রঙের খেলা আমার সিক্রেট হবি, ভালো মুভি দেখা, বই পড়া, গান শোনা, বাগান করা, একুরিয়ামে মাছ লালন, পশু পাখি পোষা প্রিয় হবির লিস্টে আছে, আবৃত্তি করা আমার অন্যতম প্রিয় একটি শখ।

আমাকে এই আয়োজনে নিমন্ত্রণ জানানোর জন্য বঙ্গনিউজের  সকল কলাকুশলীদের প্রতি জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা। আপনাদের অনেক সমৃদ্ধি কামনা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৩:৫৭ ● ১৬২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ