বঙ্গ-নিউজ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাবির ছাত্রীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাবির ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। আজ সোমবার দুপুরে জাবি ভিসি ড. ফারজানা ইসলামকে ফোন করে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান তিনি। এ তথ্য জানানো হয় জাবির জনসংযোগ কর্মকর্তার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভিসি ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্য এডিট করে সামাজিকমাধ্যমে ছাড়া হয়েছে। এতে জাবির শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলে আহত হয়েছেন। বিষয়টি অনুধাবন করে জাবির উদার ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ ক্ষমা করে দেবেন বলে আশা করেন তিনি।
সম্প্রতি শাবি ভিসির একটি বক্তব্যের অডিও সামাজিকমাধ্যমে ফাঁস হলে ভাইরাল হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অডিওতে ছাত্রলীগ নেতাদের বরাত দিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, জাবির মেয়েদের কেউ সহজে বউ করতে চায় না, তারা সারা রাত ঘুরাফিরা করে।
জানা গেছে, গত বছর শাবির সমাবর্তন উপলক্ষে কর্তৃপক্ষের আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় তাদের একটি প্রতিনিধিদল ভিসির সঙ্গে দেখা করে ছেলে ও মেয়েদের হলে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ না করার অনুরোধ জানান।
এর প্রেক্ষিতে করা ওই মন্তব্যের আগে ভিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সারা রাত খোলা রাখার দাবি এসেছে, এটি জঘন্য রকম দাবি। এটি করা হলে আমরা মুখ দেখাতে পারব না। … এখানের শিক্ষার্থীদের জাহাঙ্গীরনগরের মতো একটা কালিমা লেপুক, তা আমি চাই না। … দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সোয়া ১০টা পর্যন্ত মেয়েরা অফিসে থাকতে পারে না।
১২টা-১টা-২টায় শিক্ষার্থীরা বাইরে কী করতেছে, তা জানতে চাওয়ার পমামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে ফেরার সময় রাত ১২টা-১টায়ও ১ কিলোমিটার রাস্তায় ছেলে-মেয়েদের হাত ধরাধরি করে কনসালটিং করতে দেখি। একটা অঘটন ঘটলে, দায় তো ‘যত দোষ, নন্দ ঘোষ’ হিসেবে ভিসিকে নিতে হবে।
এদিকে, গত ১১ দিন ধরে আন্দোলনে উত্তাল রয়েছে শাবির ক্যাম্পাস। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ১০০ ঘণ্টা পার হয়েছে রোববার সন্ধ্যায়। ভিসির বাসভবনের গেটে অবস্থান নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শাবি শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ দুপুর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতীকী অনশন পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
জানা গেছে, শাবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক লাঠিপেটা করা হয় এবং তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ।
ওই দিন দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।