বঙ্গনিউজঃ আজ রবিবার সংসদে উঠছে আলোচিত ও বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন কমিশন গঠন আইন। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ আজ সংসদে উত্থাপন করবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিলটি আনা হয়েছে। বিলটি উত্থাপিত হলে তা আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। এর আগে গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) এ আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির রিপোর্টের জন্য বিলটির সময় খুব কম দেওয়া হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব বিলটি পাস করা হবে। এটি পাস হওয়ার পরেই নতুন নির্বাচন কমিশন এর আলোকে নিয়োগ করা হবে।
সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ সংক্রান্ত কোনও আইন প্রণয়ন হয়নি। রাষ্ট্রপতি তার সাংবিধানিক ক্ষমতার অংশ হিসেবে ইসি নিয়োগ দিয়ে আসছেন। অবশ্য সর্বশেষ দুটি কমিশন নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন করেন। প্রস্তাবিত আইনেও সার্চ কমিটি গঠনের বিধান থাকছে।
এবারও ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েছেন। অবশ্য বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই সংলাপ বর্জন করেছে।
এদিকে এবার ইসি গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আইন করার প্রস্তাব করা হলেও সরকার শুরুতে সেদিকে গুরুত্ব দেয়নি। ইসি গঠনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন ‘এত কম সময়ের মধ্যে প্রণয়ন করা সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে আগের অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, নতুন কমিশন তারা সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করবেন। পরবর্তী সময়ে তারা আইনটি প্রণয়ন করবেন। তবে, শেষ পর্যন্ত আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই নতুন আইনের ভিত্তিতে নতুন কমিশন গঠন হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যা থাকছে ইসি গঠনের আইনে
নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ ও এর পাশাপাশি সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইতোপূর্বে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতোপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনও আদালতে কোনও প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’
সিইসি ও ইসি হওয়ার যোগ্যতা
বিলে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে কোনও ব্যক্তিকে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে- তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, নূন্যতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে এবং কোনও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি ও ইসি হতে অযোগ্যতা
প্রস্তাবিত আইনে সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। যদি আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন। দেউলিয়া হওয়ার পর দায় হতে অব্যাহতি না পেয়ে থাকেন। কোনও বিদেশি রাষ্ট্র্রের নাগরিকত্ব নেন বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোনও অপরাধে জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন। আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
বিলে বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
সার্চ কমিটি
খসড়া আইনে সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
এই অনুসন্ধান কমিটি সিইসি এবং কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুই জন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটির গঠনের দশ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে বলে খসড়া আইনে বলা হয়েছে।
কারা থাকবেন সার্চ কমিটিতে
বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশের জন্য ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন।
এই কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন- প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিক। তিন জন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায়।’