বঙ্গনিউজঃ ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত মানুষ। আবহাওয়ার পারদ নামতেই ঠান্ডাজ্বর, গলাব্যথা, মাথাব্যথায় আক্রান্তের হার বেড়েছে। এ ধরনের রোগীদের করোনা টেস্ট করালেই পজিটিভ আসছে। কিন্তু অনীহার কারণে টেস্ট করাতে যাচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষ। উপসর্গ থাকলেও শনাক্ত না হওয়ায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে ৮৫৫টি আরটিপিসিআর, জিন এক্সপার্ট এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ল্যাবরেটরিতে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও নমুনা পরীক্ষা করতে যাওয়া আগ্রহী লোকের সংখ্যা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় কম দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো জেলায় নমুনা কম সংগ্রহ হচ্ছে। ৬০ বছরের অধিক বয়সীদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী আয়েশা শারমিন দুই দিন ধরে জ্বর, কাশিতে ভুগছিলেন। এরপর তার স্বামী এবং সাত বছরের সন্তানও জ্বর, কাশি, গলাব্যথায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘অফিসে অনেক সহকর্মীই জ্বর-কাশিতে ভুগছেন। একসময় আমারও হালকা জ্বর এবং কাশি শুরু হয়। দুই দিন পর দেখি আমার পরিবারের বাকি দুজনও একই সমস্যায় ভুগছে। সন্দেহ হওয়ায় তিনজনের করোনা টেস্ট করতে দিয়েছি, গতকাল তিনজনই করোনা পজিটিভ রেজাল্ট পেয়েছি। আমাদের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসায় সহকর্মীরা অনেকেই টেস্ট করতে দিয়েছেন।’ সুপারশপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন সোহেল, আরমান এবং মিরাজ। খিলক্ষেত এলাকায় একটি বাসায় তিনজন থাকেন। তাদের তিনজনেরই প্রায় তিন দিন ধরে জ্বর, কাশি এবং গলাব্যথা। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আউটডোরে পরামর্শের জন্য এসেছিলেন তারা। আরমান বলেন, ‘প্রথমদিকে জ্বর অল্প ছিল, সেরকম গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু আস্তে আস্তে জ্বরের তীব্রতা বাড়ছে। একজন থেকে তিনজনের একই সমস্যা শুরু হওয়ায় হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। কিছু ওষুধ দিয়ে ডাক্তার করোনা টেস্ট করাতে বলেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এখন ঘরে ঘরে ঠান্ডা-জ্বর-সর্দিজ্বরে আক্রান্তের হার বাড়ছে। অনেকের কাশিও রয়েছে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। করোনার উপসর্গগুলোও একই রকম। তাই অনীহা না করে করোনা টেস্ট করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা আক্রান্তদের আলাদা করে আইসোলেশনে রাখতে হবে। নয়তো আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সব বয়সী মানুষের অ্যান্টিবডি একরকম থাকে না। অনেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন। তাই উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করেন, চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে এখন ঘরে ঘরে চলছে আলোচনা। দেশে বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অ্যানালাইসিস’-এর গবেষণা বলছে, ওমিক্রনের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে কাশি, অত্যধিক ক্লান্তি, নাক বন্ধ এবং নাক দিয়ে পানি পড়া অন্যতম। এ ছাড়াও হালকা জ্বর, ঘামাচি, শরীরে ব্যথা, অতিরিক্ত ঘামও দেখা দিতে পারে। লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেক্টর একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, খিদে হ্রাস পাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া মাথাব্যথা, গলা চুলকানো বা গলা জ্বালা ভাবও রয়েছে।