ফারহানা আকতার এর কলাম : নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : ৬৩

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম : নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : ৬৩
সোমবার ● ১০ জানুয়ারী ২০২২


নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
“In the long war between the falsehood and the truth, falsehood wins the first battle and truth the last.(সত্য ও অসত্যের মধ্যে র্দীঘ লড়াইয়ে প্রথম জয়লাভ করে মিথ্যে আর শেষের জয় সত্যের)”- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ।
পাকিস্তান ত্যাগের পূর্বে শেখ মুজিবর রহমান ‘ফিযেদর দস্তায়ভস্কি’ র একটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’এর একটি কপিতে এই কথাটি লিখে সই করে উপহার দিয়েছিলেন ‘রাজা আনার খান’কে (পশ্চিম পাকিস্তান পুলিশের গোয়ন্দো শাখার এই জ্যাষ্ঠে কর্মকতা কয়েদির ছদ্মবেশে ছিলনে বঙ্গবন্ধুর সাবক্ষণিক ছায়াসঙ্গী এবং একজন গোপন–নিঃর্স্বাথ বন্ধু , যিনি একজন বিদেশী হয়েও বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা করেছিলেন) ।
আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারী ।স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবস। ১৯৭২ সালরে এই দিনে পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন-র্সাবভৌম বাংলাদেশে আবার সসম্মানে ফিরে আসেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’। কিন্তু এবার আর রাজবন্দী নয়, ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। মহান এই নেতার প্রত্যার্বতনে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় র্পূণতা পায়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যার্বতনকে ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই অবিসংবাদিত নেতা পাকিস্তনের কারাগারে ২৯০ দিন বন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালরে ২৫ র্মাচ কাল রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পরদিনই পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যায়। আমরা জেনেছি, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে কী অমানবিক নীপিড়নের শিকার হন।তিনি আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত র্পযায়ে ১৯৭১ সালের ৭ র্মাচের ঐতহিাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। ২৫ র্মাচ কাল রাতে পাকিস্তানি র্ববর হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালাতে শুরু করে। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির বাসভবন থকেে বাংলাদশেরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পর পরই বঙ্গবন্ধুকে পাকস্তিানি সেনাবাহনিী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার নানা পরিকল্পনা তৈরী কর। জেলের মধ্যে অত্যাচার নির্যাতনই শুধু নয়, তাকে ফাঁসির মঞ্চেও নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রয়িতা ও তার অদম্য সাহসের কাছে শেষ র্পযন্ত হার মানে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনী।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাঙালি জাতি বঙ্গন্ধুর আর্দশে ও নির্দেশিত পথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যতদিন যেতে থাকে যত রক্ত ঝরতে থাকে আর স্বদেশের মাটিকে হানাদার মুক্ত করতে বাঙালি ততোই মরিয়া হয়ে উঠে, মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী র্পূব-পাকস্তিানের নিকট আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের আত্মসর্মপণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিজয় র্অজন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হন ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারান। এতো রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে বিজয় এলেও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় বাঙালির অর্জিত বিজয় র্পূণতা পায়নি। বিজয়ী বাঙালি জাতি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে অপক্ষো করতে থাকে তাদের নেতার ফিরে আসার। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় র্অজনের পর বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা আরও বাড়তেই থাক। বাঙালির পাশাপাশি বিশ্বের স্বাধীনতা ও শান্তিকামী মানুষও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠে ।আর্ন্তজাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অবশষেে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।পাকিস্তানের কারাগার থকেে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু সোজা লন্ডনে চলে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদশেে ফিরে আসেন। সেদিন সারা দেশ থেকে মানুষ ছুটে আসতে থাকে তাদের নেতাকে একবার দেখার জন্য। স্বাধীন দেশে ফিরে বাঙালির ভালবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। বিমানবন্দর থেকে লাখ লাখ জনতার জনসমুদ্র পাড়ি দিয়ে সোহরাওর্য়াদী উদ্যানে (তৎকালীন রেসর্কোস ময়দানে) দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, বাঙালি আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে সেই বাঙালির জন্য আমি রক্ত দিতেও প্রস্তুত।বাঙ্গালির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে লিখেছেন, “একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি ৷ একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সর্ম্পকিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়৷এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা,অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে র্অথবহ করে তোলে “৷
বঙ্গবন্ধু র্সবদা এমন একটি স্বশিক্ষিত, সমাজতান্ত্রিক,গণতান্ত্রিক,শোষনমুক্ত ও র্ধমনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে মানুষের মধ্যে হিংসা- বিদ্বেষ, বিরোধ ও বৈষম্য থাকবে না, যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলমান নির্বিশেষেে সকল র্ধমের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে এবং যার যার র্ধমীয় উৎসব পালন করবে অত্যন্ত শান্তিপূ্র্নভাবে৷ যেখানে ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য কমে আসবে, বিরাজ করবে সাম্প্রদায়িক- সম্প্রীতি । ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ মানে হছ্ছে -সকল র্ধমের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের র্ধমটি শান্তিপূর্ন উপায়ে পালন করা৷
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের র্বতমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার আর্দশকে পরিপূর্ন রূপ দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার। তাঁর সোনার বাংলায় কোনও অভাবী মানুষ থাকবে না, প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনে তার সবগুলো মৌলিক অধিকারের র্পূণতা থাকবে বলে স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু । গত এক দশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আইন ও নীতি কাঠামোর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে এবং হছ্ছে৷
যতদিন স্বাধীন-র্সাবভৌম বাংলাদেশ টিকে থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ও ন্যায়-নীতিবোধ এ জাতিকে পথ দেখিয়ে যাবে। আসুন, আমরা জাতি,র্ধম,র্বণ,গোত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক-মতবাদ নির্বিশেষেে বাংলাদেশের সকল জণগণ এক হয়ে বাঙালি জাতির পরিচয়দানকারী, বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষাকারী এই মহান নেতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সমালোচনা না করে বরং তাঁর মহান আর্দশ ও ন্যায়-নীতিবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ,তাকে অন্তরের অন্তঃস্হল থেকে ভালোবেসে আমরা তাঁর স্বদেশ প্রত্যার্বতনকে উদযাপন করি এবং তাঁকে আরও গভীরভাবে জানতে চেষ্টা করি কেননা তিনি বা তাঁর কর্ম সকল বাঙালির জন্য পরম গর্বের বিষয়। এই জগতে যারা মহান ও মহিয়সী সুযোগ হলেই তাদের জীবনী আমাদের সকলেরই জানা উচিত নিজেদের আত্মশুদ্ধির জন্য৷ (চলবে) ৷

ফারহানা আকতার

লেখকের নতুন বই

তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷লেখক: ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, র্আান্তজাতিক রবীন্দ্র গবেষনা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক

বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৬:০৩ ● ২১৪২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ