বঙ্গনিউজঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে লকডাউন নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চায় সরকার। এ জন্য মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করা যাবে না। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ড ও জরিমানা গুনতে হবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া এবং দেশে ভাইরাসটির বিস্তার রোধে এ সভা ডাকা হয়। সভায় সিদ্ধান্তগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা আকারে জারি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভা শেষে গতকাল রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিবেশী ভারতেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সুতরাং সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণের ওপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। আপাতত লকডাউন দেওয়ার কোনো চিন্তা সরকারের নেই। কিন্তু সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করলে তখন লকডাউনেও যেতে হতে পারে। তবে লকডাউন কাম্য নয়। এ জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ওমিক্রনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনা আকারে জারি করবে। এর পরই এসব বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। গণপরিবহনে যাত্রী চলাচলের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, পরিবহন বাসে যাত্রীসংখ্যা কমিয়ে চলাচল করতে হবে। লঞ্চ ও ট্রেনের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত মানতে হবে। গণপরিবহনে চলাচলকারী যাত্রীদের মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হবে। তবে গণপরিবহন কতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলা করবে, সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পরিবহন মালিকরা তা নির্ধারণ করবেন।
কম যাত্রী নিয়ে গণপরিবহনে চলাচলের সুপারিশের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, এখনও এমন নির্দেশনা সরকারের কাছ থেকে আসেনি। এলে অতীতের মতো আলোচনা করে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।
শপিংমল ও দোকানপাট চালু রাখার বিষয়ে বলা হয়, রাত ৮টার পর শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে। তবে ফার্মেসি ও ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হবে না। খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে এসব হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খেতে গেলে তার টিকা কার্ড প্রদর্শন করতে হবে।
স্কুল-কলেজ আপাতত খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে ক্লাস ও পরীক্ষা চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। তবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের পক্ষে মত দেওয়া হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের পরীক্ষা গ্রহণও অব্যাহত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। চাকরির পরীক্ষাগুলো চলবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করতে হবে।
পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় কমানোর সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করার সুপারিশ করা হয়।
সংক্রমণ রোধে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে দেশের প্রবেশদ্বার বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের আরটিপিআর নেগেটিভ সনদ ছাড়া কাউকে দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে স্ট্ক্রিনিংয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশ থেকে আগতদের কোয়ারেন্টাইনের শর্তও মানতে হবে।
করোনা সংক্রমিত রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কারণ জিনোম সিকোয়েন্স করে ওমিক্রন সংক্রমিত রোগী চিহ্নিত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে ওমিক্রনের লাগাম টেনে ধরা যাবে। পাশাপাশি সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিঞা, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, তথ্য সচিব মকবুল হোসেনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।