বঙ্গ-নিউজ: করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বা ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি বলে জানা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব দেশে ভ্যারিয়েন্টটির চিত্র ও গবেষণায় পাওয়া তথ্য এমনটাই বলছে। অপরদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী যেসব টিকা দেওয়া হচ্ছে তা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর নয় বলেও জানা গেছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে আজ দুপুরে এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এই তথ্য তুলে ধরেন।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের যে টিকাগুলো, ভ্যাকসিন, দেওয়া হচ্ছে ওমিক্রন প্রতিরোধে তার কোনোটাই শতভাগ কার্যকর নয়। আগে যারা টিকা দুই ডোজ সম্পন্ন করেছেন, ভ্যাকসিনের কারণে সৃষ্ট অ্যান্টিবডির মাত্রা তাদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে কার্যকর থাকতে পারে ওমিক্রণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যারা করোনা প্রতিরোধী টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন, তারা যেন বুস্টার ডোজ, অতিরিক্ত বা তৃতীয় ডোজ, নেন। কারণ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরও অ্যান্টিবডির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেটা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।
শুধু ভ্যাকসিন করোনায় সুরক্ষা দিতে পারবে না, বরং মাস্ক পরাসহ যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন আরো বলেন, আমরা এক সময় বলেছিলাম, করোনায় পুরুষরা অনেক বেশি সংখ্যক আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
একই সঙ্গে তরুণদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেশি। অথচ এক সময় বলা হতো, তরুণদের ইমিউনিটি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি; তাই তারা আক্রান্ত হবেন না। তবে সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপে শিশুদেরও আক্রান্ত হতে দেখেছি আমরা, বলেন রোবেদ আমিন।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলছেন, কোভিড পরস্থিতির কারণে বেশ নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, এরপর থেকে আমরা ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৯ লাখ আক্রান্ত হওয়ার চিত্র আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। অথচ গত দুই-তিন দিন আগে সেটাও দেখেছে বিশ্ববাসী। এখন পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ১৬ হাজার ৩৭২ মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন কমপক্ষে ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৫ জন। নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণের মাত্রা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে বেশ কিছু টেস্ট হচ্ছে এবং আস্তে আস্তে টেস্টের সংখ্যা আরো বাড়ানো হচ্ছে। কারণ আমাদেরও সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ২০ শতাংশ টেস্ট বেশি করা হয়েছে। এ সময়ে সংক্রমণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। ভাইরাসটি প্রতিরোধে সারাদেশে মাসব্যাপী ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। সরকারের টার্গেট হলো মাসে ৪ কোটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা।